বলিউডে তারকাদের মধ্যে ঝগড়া নতুন কথা নয়। তারকাদের গ্ল্যামার ও পরিচিতির সঙ্গে তাদের বিবাদের প্রভাবও গুরুতর হয় ইন্ডাস্ট্রিতে। সে রকমই একটি বিবাদের সাক্ষী ছিল বলিউড, ২০০৮ সালে। বিতণ্ডায় জড়িয়েছিলেন স্বয়ং শাহরুখ খান এবং সালমান খান।
ক্যাটরিনা কাইফের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত পার্টিতে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন দুই খান। এরপর গোটা বলিউডই দু’টি শিবিরে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। এখন দুই তারকার মধ্যে সৌজন্য বজায় থাকলেও ঝগড়ার স্মৃতি ভোলেননি কেউই।
শাহরুখ এবং সালমান ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন প্রায় একইসঙ্গে। প্রথম থেকেই তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় ছিল। কিন্তু তাদের সম্পর্কের সুর প্রথম বার কাটে ঐশ্বরিয়া রাইকে ঘিরে। সালমনের সঙ্গে ঐশ্বরিয়ার প্রেম যখন তুঙ্গে, তখনও শাহরুখের সঙ্গে অ্যাশ এবং সল্লু দু’জনেরই সম্পর্ক ভাল ছিল। ‘চলতে চলতে’ সিনেমায় ঐশ্বরিয়াকেই প্রথম সুযোগ দেন শাহরুখ। কিন্তু শেষ অবধি সলমানের আপত্তিতে সেই ছবিতে কাজ করতে পারেননি ঐশ্বরিয়া।
সালমআন-ঐশ্বরিয়া ব্রেক আপের সময় ঐশ্বরিয়ার পাশে ছিলেন শাহরুখ। এরপর সালমানের সঙ্গে তার সম্পর্কে ফাটল ধরে। দু’জনে ঝামেলাতেও জড়িয়ে পড়েন। তবে ২০০৪ সালে ফরহা খানের বিয়ের অনুষ্ঠানে পুরনো বিবাদ মিটিয়ে নেন দুই তারকাই।
সালমানের সঙ্গে বিচ্ছেদের পরে শাহরুখের সঙ্গে চুটিয়ে কাজ করেন ঐশ্বরিয়া। ‘দেবদাস’ ছবির পরে তাদের জুটি ছিল সুপারহিট। এ সময় শাহরুখ নিজেও ছিলেন ক্যারিয়ারের শীর্ষে। অন্য দিকে একের পর সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় সালমান বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন। তবে ব্যক্তিগত সমস্যা প্রকাশ্যে না এনে কাজ করে যাচ্ছিলেন সালমান। শাহরুখের সঙ্গে সৌজন্যও বজায় ছিল। দু’জনে একে অন্যের ছবিতে ক্যামিয়ো ভূমিকাতেও অভিনয় করেন।
ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে বিচ্ছেদের পরে সালমান আঁকড়ে ধরেন ক্যাটরিনাকে। বলিউডে পরিচিতি পাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি অনেক সাহায্য করেছিলেন ক্যাটকে। ২০০৮ সালে ‘নমস্তে লন্ডন’, ‘সিং ইজ কিং’, ‘ওয়েলকাম’ ‘পার্টনার’-সহ ক্যাটরিনার বেশ কিছু ছবি পর পর হিট হয় বক্স অফিসে।
ক্যাটরিনার সে বছরের জন্মদিন স্মরণীয় করে রাখতে ১৬ জুলাই বান্দ্রার এক রেস্তোরায় জমকালো পার্টির আয়োজন করেন সালমান। তার আমন্ত্রণে হাজির ছিলেন টিনসেল টাউনের বহু তারকা। পার্টিতে শাহরুখের পৌঁছতে বেশ কিছুটা দেরি হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা পরে জানান, ততক্ষণে সালমান নেশায় বুঁদ। ইন্ডাস্ট্রির অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, পার্টিতে ঢুকেই স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে রসিকতা করতে থাকেন শাহরুখ। কিন্তু সে সময় তার রসিকতা মোটেও ভালভাবে নেননি সালমান।
পার্টিতে শাহরুখকে একটি ছবির পরিকল্পনাও জানান সালমান। সালমানই সেই ছবি তৈরি করবেন বলে ভেবেছিলেন। তিনি সেখানে শাহরুখকে অতিথি শিল্পীর ভূমিকায় কাজের জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু শাহরুখ সেই প্রস্তাব শোনামাত্রই ফিরিয়ে দেন।
তার এই প্রত্যাখ্যান ভাল লাগেনি সালমানের। কারণ শাহরুখ যতবার বলেছেন তিনি বিনা বাক্যব্যয়ে গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্সে অভিনয় করেছেন। শোনা যায়, এরপর শাহরুখের রিয়েলিটি শো ‘ক্যয়া আপ পাঁচভি পাস সে তেজ হ্যায়?’ নিয়ে রসিকতা শুরু করেন সালমান।
বাক বিতণ্ডার মধ্যেই শাহরুখ নাকি নাম না করে পরোক্ষে ঐশ্বরিয়ার প্রসঙ্গ তোলেন। প্রাক্তনকে নিয়ে সরাসরি ইঙ্গিতে নিজেকে আর সামলে রাখতে পারেননি সালমান। অভিযোগ, পার্টিতে সবার সামনেই তিনি শাহরুখের কলার চেপে ধরেন। স্থান-কাল-পাত্র ভুলে দুই তারকার মধ্যে নাকি হাতাহাতিও শুরু হয়ে যায়।
সে সময় গৌরী খান, ক্যাটরিনা কাইফ এবং আমির খান চেষ্টা করেও তাদের নিরস্ত করতে পারেননি। দুই তারকার বিবাদের খবর হু হু করে ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে বান্দ্রার ওই রেস্তোরাঁর সামনে সংবাদ মাধ্যমের ভিড় জমে যায়। ক্যামেরায় ধরাও পড়ে গৌরীকে নিয়ে পার্টি ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন বিধ্বস্ত শাহরুখ। অন্য দিকে সলমানের পাশে বসে গাড়িতে কাঁদছেন ক্যাটরিনা!
ঝগড়ার পরে বলিউড কার্যত দু’টি শিবিরে ভাগ হয়ে যায়। করিনা কাপুর, সাইফ আলি খান, অক্ষয়কুমারের মতো তারকারা ছিলেন সালমানের পাশে। আবার করন জোহর, যশ চোপড়া, জাভেদ আখতাররা ঝুঁকেছিলেন শাহরুখের দিকে।
এরপর শাহরুখকে উদ্দেশ্য করে একাধিক তীর্যক মন্তব্য করেছেন সালমান। তবে শাহরুখ সে পথে যাননি। তিনি বরং জোহরের শোয়ে এসে এই প্রসঙ্গে নিজের দোষ স্বীকার করেন। প্রকাশ্যে ক্ষমাও চান। তবে তার কথায় সালমানের মন ভেজেনি। তিনি উল্টো বলেন, শাহরুখ এসব প্রচার পেতে করছেন।
এরপর দীর্ঘ দিন শাহরুখ-সালমান একে অন্যকে এড়িয়ে যেতেন। শেষে ২০১৩ সালে তারা মুখোমুখি হন বাবা সিদ্দিকির দেয়া ইফতার পার্টিতে। ৫ বছর পরে একই ফ্রেমে ধরা দেন বিবদমান দুই তারকা। একে অন্যকে জড়িয়ে ধরেন। সালমানের বাবা সেলিম খানের সঙ্গেও কথা বলেন শাহরুখ।
২০১৪ সালে সলমানের বোন অর্পিতার বিয়েতেও শাহরুখ-সালমনের ছবি ভাইরাল হয়। দু’জনের হৃদ্যতাপূর্ণ শরীরী ভাষা বুঝিয়ে দেয় এবার তারা ঝগড়া মিটিয়ে নিতে চান। ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্ক সহজ হয়ে ওঠে। সলমানের ছবি ‘টিউবলাইট’-এ শাহরুখ এবং শাহরুখের ছবি ‘জিরো’-তে সলমান ক্যামিয়ো ভূমিকায় অভিনয় করেন।
তবে ইন্ডাস্ট্রিতে কান পাতলে শোনা যায়, এই সৌজন্য শুধুমাত্র পেশাদারি ক্ষেত্রে। দুই তারকার মধ্যে নব্বইয়ের দশকের সুসম্পর্ক ফিরে আসেনি। যখন ইন্ডাস্ট্রিতে নবাগত শাহরুখের অভিভাবক ছিলেন সেলিম খান। তাদের বাড়িতেও নাকি কিছুদিন ছিলেন শাহরুখ। সেই সুসম্পর্ক ধরা পড়েছিল ‘করণ অর্জুন’ এবং পরে ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’-এর অনস্ক্রিন রসায়নেও। এত দিন পর সেই অবস্থানে ফিরে যাওয়া নাকি দু’জনের ক্ষেত্রেই কার্যত অসম্ভব।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।
Leave a reply