‘বাহুবলি’ সিনেমার বল্লালদেব হয়ে ভারতের বাইরেও দর্শকের মন কেড়ে নেন রানা ডাগ্গুবতী। যদিও ভক্তদের অনেকেই জানেন না, তার জীবনসংগ্রাম হার মানিয়ে দেয় ফিল্মি চিত্রনাট্যকেও। জন্ম থেকেই দেখতে পেতেন না ডান চোখে। পরে অস্ত্রোপচারেও স্বাভাবিক হয়নি দৃষ্টিশক্তি। সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে আজ তিনি প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
রানার পরিবারের কয়েক পুরুষ জড়িত সিনেমার সঙ্গে। বাবা ডি সুরেশ বাবু ছিলেন তেলুগু ছবির প্রযোজক। স্বনামধন্য প্রযোজক ডাগ্গুবতী রামানায়ডু ছিলেন তার দাদা। ১৩টি ভাষায় দেড়শ’ ছবি তৈরি করে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে জায়গা পেয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে সম্মানিত হন দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার ও পদ্মভূষণে।
অভিনেতা ভেঙ্কটেশ ও নাগা চৈতন্য তার আত্মীয় হন। ৫ দশকের বেশি সময় ধরে ছবির সঙ্গে জুড়ে থাকা এ রকম একটি পরিবারে রানা ডাগ্গুবতীর জন্ম হয় ১৯৮৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। জন্ম থেকেই তার ডান চোখে কর্নিয়ায় ত্রুটি ছিল। ফলে তিনি ওই চোখে দেখতে পেতেন না।
১৪ বছর বয়সে চোখে কর্নিয়া প্রতিস্থাপিত হয়। কিন্তু তারপরও দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক হয়নি। ২০১৬ সালে এক সাক্ষাৎকারে রানা ডাগ্গুবতী জানান, ওই চোখে তিনি শুধু কিছু রং চিহ্নিত করতে পারেন। বাকি কিছুই বুঝতে পারেন না।
এই প্রতিবন্ধকতা নিয়েও জীবনের কোনো দৌড়ে পিছিয়ে থাকতে চাননি তিনি। চেন্নাইয়ের চেট্টিনাড় বিদ্যাশ্রম ও হায়দরাবাদ পাবলিক স্কুলের পরে তার পড়াশোনা হায়দরাবাদের সেন্ট মেরিজ কলেজে। পড়াশোনায় তার কোনো দিনই বিশেষ আগ্রহ ছিল না। দশম শ্রেণিতে একবার ফেল করেন। বি কম কোর্স ভর্তি হওয়ার ২ মাস পরে ছেড়ে দেন।
মুম্বাইয়ে ব্যারি জনের প্রতিষ্ঠানে অভিনয় শেখার পাশাপাশি আমেরিকার স্টান্ট স্কুল থেকেও প্রশিক্ষণ নেন রানা। ছবির জগতে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন ২০১০ সালে। অভিনয় করেন সুপারহিট তেলুগু ছবি ‘লিডার’-এ। পরের বছরই বলিউডে আত্মপ্রকাশ ‘দম মারো দম’ ছবিতে।
এরপর বলিউড ও দক্ষিণী ছবি, দুটি ইন্ডাস্ট্রিতেই দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেন। কৃষ্ণম বন্দে জগদগুরুম, আড়ম্বম এর পাশাপাশি তিনি একটি ক্যামিও ভূমিকায় অভিনয় করেন ‘ইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’ ছবিতে।
এখনো পর্যন্ত ডাগ্গুবতীর ক্যারিয়ারে সফল ছবি হলো এসএস রাজামৌলির ‘বাহুবলি’র কিস্তি। পানির নিচে শুটিং হওয়া ছবি ‘দ্য গাজি অ্যাটাক’-এও অভিনয় করেন ডাগ্গুবতী। অভিনয় এবং প্রযুক্তিগত দিক, সব বিষয়েই দর্শকদের নজর কেড়েছিল ছবিটি। উল্লেখযোগ্য ছবি হলো-ওয়েলকাম টু নিউ ইয়র্ক, হাউসফুল ৪ ও মারাই থিরন্তু। ২০০৬ সালে তিনি-সহ প্রযোজনা করেন তেলুগু ছবি ‘এ বেলি ফুল অব ড্রিমস’।
ডাগ্গুবতীর দীর্ঘদিনের প্রেমিকা ছিলেন অভিনেত্রী তৃষা কৃষ্ণ। সেই প্রেম ভেঙে যাওয়ার পর চলতি বছরেই তিনি বিয়ে করেছেন মিহিকা বাজাজকে। মিহিকা পেশায় ইন্টেরিয়র ডেকোরেটর। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিয়ের ছবি পোস্ট করার পরে অনুরাগীদের উচ্ছ্বাসে ভেসে যান ডাগ্গুবতী।
কিন্তু সুরের মাঝেই ছন্দে পতন। গত বছরই প্রকাশ্যে আসে ডাগ্গুবতীর একটি ছবি। ‘বল্লালদেব’-এর রুগ্ণ চেহারা দেখে চমকে যান অনুরাগীরা। তখনই তার শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে যায়। বিয়ের সময়েও ডাগ্গুবতীর চেহারার বিশেষ উন্নতি হয়নি। গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল, তিনি কিডনি প্রতিস্থাপন করিয়েছেন। তবে সে সময় সব রটনা উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
কিন্তু সম্প্রতি সামান্থা রুথ প্রভুর টক শো ‘স্যাম জ্যাম’-এ এসে প্রথমবার নিজের শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে মুখ খোলেন অভিনেতা। ডাগ্গুবতী জানান, তার কিডনি বিকল হয়ে যায়। ক্যালসিফিকেশনের জেরে দুর্বল হয়ে পড়ে হৃদ্যন্ত্র। ছিল উচ্চরক্তচাপজনিত সমস্যা।
ডাগ্গুবতী বলেন, শারীরিক জটিলতা এত গভীর হয়েছিল যে স্ট্রোক ও রক্তক্ষরণের আশঙ্কা ছিল ৭০ শতাংশ। মৃত্যুর আশঙ্কা ছিল ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। এ কথা বলার সময় কেঁদে ফেলেন পর্দার জবরদস্ত খলনায়ক বল্লালদেব। চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি সামান্থা নিজেও।
তবে অনুরাগীরা আশাবাদী, সিনেমার বীরবিক্রমের মতো বাস্তবেও সব জটিলতা কাটিয়ে উঠবেন রানা ডাগ্গুবতী।
একবার এক চোখে দৃষ্টিহীনতা নিয়ে ডাগ্গুবতী বলেছিলেন, ঈশ্বর আসলে শক্তিধর মানুষের পরীক্ষা নেন। তাদেরই তিনি এই ধরনের প্রতিবন্ধকতা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠান। দেখেন, তারা কীভাবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে। আবারও যেন তা-ই ঘটছে।
Leave a reply