শতকরা প্রায় ত্রিশ শতাংশ নাইট্রোজেন সাশ্রয়ী এন পি কম্পাউন্ড সার বাজারে আসছে। এই সারটি বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করার জন্য মাঠ পর্যায়ে প্রদর্শনী খামার করেছে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজারস অ্যান্ড অ্যাগ্রোকেমিক্যালস লিমিটেড।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে উৎপাদনের লাইসেন্স নিয়ে এন পি কম্পাউন্ড সার বাজারজাতকরণের প্রাথমিক কার্যক্রমগুলো চালাচ্ছে তারা। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা, নড়াইল উপজেলা, দিনাজপুর উপজেলা, রাজশাহীর পবা উপজেলায় এবং বিরি খামারে প্রদর্শনী করার মাধ্যমে আশানুরূপ ফলাফল পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এছাড়াও বাংলাদেশ ফার্টিলাইজারস অ্যান্ড অ্যাগ্রোকেমিক্যালস লি: এর ‘এন পি কম্পাউন্ড’ নামের রাসায়নিক সারটি মূলত কম্পাউন্ড সার, যা মিশ্র সার থেকে ভিন্ন। এই সারে নাইট্রোজেন অবমুক্ত হয় ধীর গতিতে, ফলে গাছে দীর্ঘ সময়ের জন্য নাইট্রোজেন সহজলভ্য হয়। এই সারে নাইট্রোজেন এবং ফসফরাসের আনুপাতিক হার ২ অনুপাত ১ আছে যা জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক এজেন্সি ফাওএর রিপোর্টের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
কৃষকরা ফসল আবাদে অনেক ক্ষেত্রেই নাইট্রোজেন ও ফসফরাসের অসম ব্যবহার করছেন। এতে শস্যের ফলন যেমন একদিকে কমছে অন্যদিকে জমির উর্বরতা শক্তিও হারাচ্ছে। আবার মাত্রাতিরিক্ত সারের ব্যবহার খরচ বেশি হচ্ছে কৃষকদের। এসব চিন্তা করে বিশেষ ধরনের সারের উদ্ভাবন করা হয়েছে। এন পি কম্পাউন্ড সার নামের এই সারের ব্যাবহারে জমির উর্বরতা শক্তি হারানোর যে ক্ষতি তা অনেকাংশেই কমানো সম্ভব হবে।
তাছাড়া কৃষকের জন্য সাশ্রয়ী এবং অধিক ফলনে এটি বেশ কার্যকর যেটি এরই মধ্যে মাঠ পর্যায়ে প্রদর্শনীর মাধ্যমে প্রমাণ পেয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটির দাবি। তার আরও দাবি করছে, এন পি কম্পাউন্ড সারে আরও দুইটি মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট ক্যালসিয়াম এবং সালফার থাকাতে জিপসাম সারের প্রয়োজন নেই।
মাঠ পর্যায়ে এন পি কম্পাউন্ড সার ব্যবহার করে শতকরা পাঁচ ভাগের উপর ফলন বৃদ্ধির ফলাফল পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ইউরিয়ার সাথে তুলনা করে দেখা গেছে, এই সার ব্যবহারে ৩০% পর্যন্ত নাইট্রোজেন কম ব্যবহার করেও একই ফলন পাওয়া গেছে।
যশোরের নোয়াপাড়ায় দশ একর জায়গা জুড়ে বার্ষিক এক লাখ সত্তর হাজার মেট্রিক টন ক্ষমতা সম্পন্ন কারখানা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজারস অ্যান্ড অ্যাগ্রোকেমিক্যালস লি: সার উৎপাদনের জন্য স্থাপন করেছে।
বাংলাদেশ ফার্টিলাইজারস অ্যান্ড অ্যাগ্রোকেমিক্যালস লিমিটেড এর প্রধান নির্বাহী মোস্তাক হাসান জানান, তারা উৎপাদনে যেতে প্রস্তুত আছে কিন্তু বাজারে আমদানিকৃত এবং সরকারি কারখানা কর্তৃক উৎপাদিত সারের উপর সরকারের যে প্রণোদনার নিয়ম নীতি আছে তা বেসরকারিভাবে উৎপাদিত সারের উপর প্রয়োগ করা গেলে এই শিল্প বিকাশে তারা অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবেন।
তিনি জানান, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সারে যে প্রণোদনা ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেখানে বেসরকারি সার উৎপাদনের খাতকে সম্পৃক্ত করা গেলে কৃষকসহ দেশীয় শিল্প সুরক্ষা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সার আমদানি নির্ভরতা হ্রাসের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়সহ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে। করোনা পরবর্তী সময়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে টিকে থাকতে আমদানি কমিয়ে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি রফতানিতে জোর দিতে পারলেই আসবে অর্থনৈতিক মুক্তি।
Leave a reply