শতভাগ দৃশ্যমান হলো স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এক সময়ের সম্ভাবনা আজ বাস্তবতা। অথচ, প্রকল্পের শুরুতেই ধাক্কা হয়ে এসেছিল ২০১২ সালের জুনে বিশ্বব্যাংকের ঋণ বাতিলের ঘটনা, এরপর একরাশ হতাশা। তবে দ্রুতই সেই হতাশা কাটিয়ে জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা, নিজেদের অর্থায়নেই করবো পদ্মা সেতু। আর সেই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর শতভাগ দৃশ্যায়নের মুহূর্তে নিজেকে সাক্ষী করতে ছুটে গেলেন ক্রিকেটপাগল টাইগার শোয়েবও।
ঘন কুয়াশার মাঝে বাংলাদেশের পতাকা বুকে জড়িয়ে বলছিলেন, ‘সাবাশ বাংলাদেশ। বিজয় বাংলাদেশ।’ গায়ে ডোরাকাটা, মুখে রঙ মাখানো। আর বুকে জড়িয়ে লাল সবুজের ভালোবাসা। নৌকায় দাঁড়িয়ে এভাবেই দেশের অহংকারে নিজেকে জড়িয়ে নিলেন শোয়েব। বাংলাদেশ দেখলো এক বিজয়ের মাসে আরেক বিজয়ী সূর্য তরুণকে।
খেলার মাঠ ছেড়ে এখানে কেন জানতে চাইলে শোয়েব বলেন, ‘প্রতিদিন মাঠে গিয়ে ভাবি জিতবো নয় হারবো। কিন্তু আজ জয় নিশ্চিত। আজ কোনো পরাজয় নেই। নিশ্চিত সেই জয়ের সাক্ষী হতেই আজ এখানে আসা।’
ক্রিকেট পাগল শোয়েব জানান, ‘স্বপ্নের পদ্মা সেতু শেষ পর্যন্ত বাস্তবে দৃশ্যমান হবে সেটা অনেকেই ভাবেনি। আমার মনে হয় এটি বাংলাদেশের বিজয়। এই অঞ্চলের মানুষ ভোগান্তির মাঝে ছিলো। তবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু হয়ে গেছে, তাই আর কোনো চিন্তা নেই। এখন থেকে যাত্রাপথে আর ভোগান্তিতে পড়তে হবে না সাধারণ মানুষের।’
আবেগাপ্লুত হয়ে শোয়েব বলেন, ‘আমি নিজেও নদীভাঙন কবলিত মানুষ। তাই এই সেতুর ব্যাপারে আবেগটা একটু বেশিই। কিছুদিন আগে বাবা মারা গেছে। তিনি এই পদ্মা সেতু দেখে যেতে পারলো না।’ এই কথা বলতেই কণ্ঠ ভারি হয়ে উঠলো টাইগার ক্রিকেটের আলোচিত ফ্যান শোয়েবের।
বৃহস্পতিবার খুব সকালে পদ্মা সেতুতে শেষ স্প্যান বসানোর মুহূর্তটি দেখতে ছুটে যান শোয়েব আলী বোখারি (৩২)। তিনি পেশায় মোটর মেকানিক। গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চরনাছিপুর গ্রামে। ২০০৮ সালে পদ্মার ভাঙনের কবলে পড়ে আশ্রয় নেয় রাজধানীর বাড্ডায়।
খেলাপাগল এই মানুষটা সবসময়ে মাঠে হাজির থাকেন জাতীয় পতাকা নিয়ে। মাঠের মানুষ তাকে ‘টাইগার শোয়েব’ নামে চেনে। কারণ, বাংলাদেশের খেলা হলেই শোয়েব বেঙ্গল টাইগারের সাজে নিজেকে সাজান বেশ ঘটা করেই।
সম্ভাবনার স্বপ্নে বিভোর বাঙালীর চোখে আলো ফুটিয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। কত চড়াই উৎরাই, বাঁধা-বিপত্তি কাটিয়ে আজ শতভাগ দৃশ্যমান পদ্মা সেতু। খরস্রোতা পদ্মার বুকে সেতু নির্মাণ; একসময় যা ছিলো অকল্পনীয়। সেটিই এখন বাস্তব। সব জল্পনা-কল্পনা আর অনিশ্চয়তা দূরে ঠেলে সম্ভাবনার পদ্মা সেতু এখন বাস্তবতা। পদ্মা সেতু শুধু দু’পাড়ের মানুষই নয়, এই সেতুকে ঘিরে উচ্ছ্বাস সারাদেশের মানুষের।
Leave a reply