গাইবান্ধা প্রতিনিধি :
ইউএনও’র স্বাক্ষর ছাড়া সাড়ে ১১ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করে আত্মসাৎ চেষ্টায় অভিযুক্ত গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. নাজমুল হাসানের (সাবেক) বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে সংশ্লিষ্ট যুব উন্নয়ন অধিদফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পাঠানো ওই চিঠিতে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির ১৫৫ জন সুবিধাভোগীর ট্রেনিং ভাতার ১১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা উত্তোলনে নাজমুল হাসানের সঙ্গে তৎকালীন উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনের যোগসাজসের বিষয় উল্লেখ করা হয়। একই সঙ্গে চিঠিতে মাদার (মূল) অ্যাকাউন্টে জমা থাকা ওই টাকা সরকারি খাতে জমার বিষয়েও মতামত চাওয়া হয়েছে।
ঘটনাটি ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের। তবে এতদিন পুরো বিষয়টি গোপন ছিল। এমনকি বিষয়টি নিয়ে লিখিতভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একাধিক অভিযোগ দেয়া হলেও তা তদন্তাধীন রয়েছে আজও। এছাড়া জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেও গড়িমসির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রশাসন ও দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি যমুনা টেলিভিশনে ন্যাশনাল সার্ভিসের উইপোকা শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচারের পরেই অভিযুক্ত নাজমুল হাসানসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কর্তৃপক্ষের কাছে পত্র পাঠানোর বিষয়টি ফাঁস হয়ে পড়ে।
প্রেরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, গোবিন্দগঞ্জে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির ৪ হাজার ৬০ জন নির্বাচিত সুবিধাভোগীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৭ সালের ২ ডিসেম্বর। বিভিন্ন কারণে ১৫৫ জন প্রশিক্ষণে অনুপস্থিত থাকেন। কিন্তু যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা নাজমুল হাসান অনুপস্থিত ১৫৫ জনের স্থলে নতুন সুবিধাভোগী সংযোজনের চেষ্টা করেন। এরপর ১৫৫ জনের প্রশিক্ষণ ভাতার ১১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ফেরত প্রদানে মৌখিক নির্দেশনা সত্ত্বেও একক স্বাক্ষরে নাজমুল হাসান টাকা উত্তোলনে হিসাব রক্ষণ অফিসে বিল দাখিল করেন। তাৎক্ষণিক তৎকালীন
হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনকে বিল পাশ না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই নির্দেশ অমান্য করে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা নাজমুল হাসানের যোগসাজসে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন বিলটি পাশ করে ব্যাংকে পাঠান। অথচ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষরে সমস্ত বিল পরিচালিত হয়। ইউএনও’র স্বাক্ষর ছাড়া দাখিল করা বিলের বিষয়টি ব্যাংক ব্যবস্থাপকের নজরে এলে ওই টাকা উত্তোলন করতে পারেনি নাজমুল হাসান। বর্তমানে উক্ত টাকা সোনালী ব্যাংক হতে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক গোবিন্দগঞ্জ শাখার মাদার (মূল) অ্যাকাউন্টে জমা রাখার বিষয়টিও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ওই অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ ব্যাহতের ঘটনায় একাধিক অভিযোগকারী দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের বিষয়টি দুদকে তদন্তাধীন রয়েছে। অর্থ উত্তোলনের চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার পরেই নাজমুল হাসান তড়িঘড়ি করে বদলি নিয়ে সদর উপজেলায় যোগদান করেন। নাজমুল হাসান কর্তৃক ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি প্রকল্পের অর্থ উত্তোলনপূর্বক আত্মসাৎ চেষ্টার অভিযোগ প্রমাণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া সুবিধাভোগীদের ট্রেনিং ভাতার ওই টাকা সরকারি খাতে জমার বিষয়েও মতামত এবং নির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে।
ইউএইচ/
Leave a reply