পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তনের সময় মহাকাশযান বিস্ফোরণের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। সাধারণত এ বিস্ফোরণ ঘটানো হয় নিয়ন্ত্রিতভাবে। যাতে ধ্বংসস্তূপ জনবসতি থেকে অনেক দূরে গিয়ে পড়ে।
এমনকি ধ্বংসাবশেষ ফেলার জন্য নির্দিষ্ট জায়গাও আছে প্রশান্ত মহাসাগরে। যেটি পরিচিত রকেটের কবরস্থান হিসেবে। সেই সাগরতলে পড়ে আছে, মহাকাশফেরত অন্তত ২৬০টি রকেটের ধ্বংসাবশেষ।
রকেট মহাশূন্যে পাঠানো যতোটা জটিল প্রক্রিয়া, পৃথিবীতে এর প্রত্যাবর্তনে জটিলতা তার চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। প্রচণ্ড গতিতে বায়ুমণ্ডলে ফেরার সময়ই সাধারণ বিস্ফোরিত হয়ে যায় মহাশূন্যযান। আকারে ছোট হলে এর চিহ্নও আর খুঁজে পাওয়া যায় না, তবে বড় আকারের রকেট বিস্ফোরণের পরও পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে যন্ত্রাংশ।
তীব্র গতিতে ছুটে আসা এই ধ্বংসাবশেষ যাতে মানুষের ক্ষতি না করে তা নিশ্চিত করতে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের দুর্গম একটি পয়েন্ট লক্ষ্য করে নিয়ন্ত্রিতভাবে রকেটকে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করান বিজ্ঞানীরা। ১৯৭১ সাল থেকে চলছে এই চর্চা। ‘পয়েন্ট নিমো’ নামে পরিচিত জায়গাটিতে সাগরতলে শায়িত আড়াইশ’র বেশি মহাকাশযানের যন্ত্রাংশ।
লাতিন শব্দ ‘নিমো’র অর্থ কেউ নেই। মহাসাগরের জায়গাটি পৃথিবীর ভূমি থেকে সবচেয়ে দূরের এলাকা। এর চারদিকে আড়াই হাজার কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ভূখণ্ড নেই। তাই শত শত মাইলজুড়ে ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়লেও বিপদের কারণ হয় না।
তবে সবসময় সবকিছু পরিকল্পিতভাবে হয় না। ছয় দশকে অন্তত ৫২টি মহাকাশযান অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রত্যাবর্তন করেছে বায়ুমণ্ডলে। যে তালিকায় ওজনের দিক দিয়ে পঞ্চম রোববার আছড়ে পড়া চীনা রকেটটি। গত বছরও এই মডেলের আরেকটি রকেটের ধ্বংসাবশেষ আছড়ে পড়ে আফ্রিকার দেশ আইভরি কোস্টে। যে কারণে বেইজিংয়ের নিরাপত্তা পদ্ধতি ও দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় দু’টি অনিয়ন্ত্রিত রিএন্ট্রির ঘটনা দেখলো বিশ্ব। দু’টিই একই মডেলের রকেটের আলাদা ভার্সন। রিএন্ট্রির ক্ষেত্রে রকেট ডিজাইনে আরও অনেক বেশি সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
শুরু থেকেই দুই ধরনের মহাকাশযান নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। শাটলের মতো কিছু যান নভোচারী নিয়ে মহাশূন্যে যায়, যাত্রী নিয়েই আবার ফেরত আসে। একই রকেট বারবার অভিযানে যেতে সক্ষম। তবে বেশিরভাগ মহাকাশযানই মাত্র একবার ব্যবহারযোগ্য। মহাশূন্যে মিশন শেষে এগুলোই ধ্বংস হয়ে যায় পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তনের সময়।
ইউএইচ/
Leave a reply