টানা ১১ দিনের যুদ্ধ শেষে গত ২১ মে ইসরায়েল ও হামাস যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। যুদ্ধ বিরতি সত্ত্বেও গত দুই সপ্তাহ ধরে জেরুজালেমে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করলেও বিশেষজ্ঞদের আশা, সহসা নতুন করে আপাতত আর যুদ্ধে জড়াবেনা হামাস ও ইসরায়েল।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার সাম্প্রতিক উত্তেজনার প্রধান কারণ জেরুজালেম দিবস উপলক্ষে ইসরায়েলের বার্ষিক পতাকা মিছিল। যা ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে ইসরায়েল কর্তৃক পূর্ব জেরুজালেম দখলের দিনটির স্মরণে তারা প্রতি বছর উদযাপন করে। এই বছরের অনুষ্ঠান গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও, হামাসসহ ফিলিস্তিনিদের প্রতিবাদের মুখে ইসরায়েলি পুলিশ নিরাপত্তার অজুহাতে অনুষ্ঠানটি বাতিল করে। তবে গত রোববার (১৩ জুন) প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেই বিতর্কিত এই পতাকা মিছিলের অনুমতি দেন।
এরপর মঙ্গলবার কট্টরপন্থী ইহুদিরা কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জেরুজালেমের ওল্ড সিটি এলাকায় পতাকা মিছিল করে। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত কিছু ভিডিওতে দেখা যায় যে, ইসরায়েলি বিক্ষোভকারীরা স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের উদ্দেশ্যে ‘আরবদের মৃত্যু হোক’ শ্লোগান দিচ্ছে। এই মিছিলের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল ইসরায়েলি পুলিশ। মিছিলে সংঘর্ষ এবং বেশ কিছু গ্রেফতারের ঘটনা ঘটলেও দিনটি ছিল তুলনামূলক শান্ত।
এরপর বুধবার (১৬ জুন) ইসরায়েল আবারো ফিলিস্তিনের গাজায় হামাসের ফাঁকা স্থাপনায় হামলা চালায়। এই আক্রমণের কারণ হিসেবে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) জানায়, গাজা থেকে নিক্ষেপ করা ইনসেন্টিভ বেলুনের মাধ্যমে অগ্নি সংযোগের কারণেই তারা হামলা চালিয়েছেন। দেশটির দমকল বাহিনীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী দক্ষিণ ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২০টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে হামাস নিক্ষিপ্ত বেলুনগুলোর কারণে। সাম্প্রতিক বেলুন ছোঁড়াকে কেন্দ্র করে হামাসের সম্ভাব্য রকেট হামলা ঠেকাতে রাজধানীতে আয়রন ডোম মোতায়েন করে ইসরায়েলি বাহিনী।
তবে ইসরায়েলি আয়রন ডোমগুলো আপাতত রয়েছে সতর্ক অবস্থানে। কারণ, হামাসের দিক থেকে কোনো রকেট হামলা হয়নি। ফলে ইসরায়েলও সহসা গাজায় বড় কোনো ধরনের হামলা চালাচ্ছেনা।
পরিস্থিতি বিবেচনা করে মধ্যপ্রাচ্য গবেষকরা বলছেন যে, ইসরায়েল-হামাস আরেকটা যুদ্ধে আপাতত জড়াচ্ছে না। কারণ আরেকটি যুদ্ধ করার সক্ষমতা দৃশ্যত এই মুহূর্তে হামাসের নেই। তাছাড়া সর্বশেষ যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছে মিশর। যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজায় মিসরীয়দের সহায়তা কার্যক্রমও চলছে। খুব স্বাভাবিক যে বাইরের আরেকটি দেশের সহায়তা প্রোগ্রাম চলাকালীন সময়ে ইসরায়েলে রকেট হামলা করবেনা হামাস।
অন্যদিকে, এই মুহূর্তে ইসরায়েলও চাইছেনা কোনো সংঘর্ষে জড়াতে। কারণ দেশটিতে গত রোববার
গঠিত হয়েছে নতুন সরকার। এই মুহূর্তে ব্যাপকভাবে গাজায় হামলা চালালে কায়রো ভালো ভাবে দেখবে না। এছাড়া আবার যুদ্ধ বাধলে ইসরায়েলের যে কূটনৈতিক সংকট তৈরি হবে, তা মোকাবেলা করার মত অবস্থায় এখনও নেই ইসরায়েলের নতুন প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট।
Leave a reply