কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুরে ঈদ উপলক্ষে দুস্থদের ভিজিএফের ১৫০ বস্তা চাল নিয়ে নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে। চলছে ব্যবসায়ী ও খাদ্য বিভাগের রশি টানাটানি। এই নিম্নমানের চালগুলোর দায়িত্ব কেউ না নেয়ায় ফিরত দেয়া হয়েছে। সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে উন্নত মানের চাল বের হয়ে তা হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদে পৌঁছানোর পূর্বেই নিম্নমানের খাওয়ার অযোগ্য পচা চালে রূপান্তরিত হলো কীভাবে এ রহস্যের জট খুলছে না।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার (১৬ জুলাই) দুপুরে উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদে। হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন জানান, সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে ভিজিএফ এর বরাদ্দকৃত চাল ৬টি গাড়ীতে ৯শ বস্তা ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসা হয়। পরিষদের গুদামে চালের বস্তা গুলো নামানোর সময় ৫টি গাড়ীর চাল উন্নত মানের হলেও ১টি গাড়ীর ১শ ৫০ বস্তা চাল প্লাস্টিকের পুরানা বস্তা ও সরকারি সীল না থাকায় সন্দেহ হয়। ওই গাড়ীর বস্তা গুলোর চাল খুবই নিম্নমানের, খাওয়ার অযোগ্য পচা লাল রঙের চাল হওয়ায় তা সরকারি খাদ্য গুদামে ফেরত পাঠাই।
নিম্নমানের চাল বহনকারী গাড়ীর চালক নাহিদ ইসলাম বলেন, উলিপুর সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে ১শ ৫০ বস্তা চাল হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসি। এরপর চাল গুলো খাবার অযোগ্য হওয়ায় চেয়ারম্যান সাহেব তা নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং আমাকে চালের বস্তা গুলো ফেরত নিয়ে যেতে বলেন। তাই ফেরত আনি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়,এই ১শ ৫০ বস্তা নিম্নমানের চালের দায় দায়িত্ব কেউ নিতে রাজি নন। খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা বলছেন এ চাল আমি গুদাম থেকে সরবরাহ করিনি অপরদিকে গাড়ির চালক বলছেন চালের বস্তা সরকারি গুদাম থেকে আনা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন খাদ্য ব্যবসায়ী জানান, উলিপুর সরকারি খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা ও ধান চাল ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন থেকে এ ঘটনা গুলোর সাথে জড়িত। খাদ্য গুদামের কর্মকর্তার যোগসাজশে গুদাম থেকে উন্নত মানের চাল ইউনিয়ন পরিষদ গুলোতে পাঠানোর সময় পথিমধ্যে ওই সিন্ডিকেটের ব্যবসায়ীদের গুদাম থেকে ভালো চাল পরিবর্তন করে নিম্নমানের খাবার অযোগ্য চাল সরবরাহ করেন।
ওই সূত্রটি আরও নিশ্চিত করেছেন, হাতিয়া ইউপি থেকে ফেরত ১৫০ বস্তা চাল সরকারি গুদামে না এনে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তাদের গুদামে নামিয়ে নিয়েছে। খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা নিম্নমানের চালের দায়িত্ব না নেয়ার ফলে ১৫০ বস্তা চাল নিয়ে উপজেলা খাদ্য বিভাগ ও ব্যবসায়ীদের রশি টানাটানি চলছে। ওই সূত্র নিশ্চিত করেন খাদ্য ব্যবসায়ী মাহফুজুর রহমান বুলেট এ নিম্নমানের চালের মালিক। তিনি কৌশলে চাল গুলো হাতিয়া ইউপিতে সরবরাহ করেছেন।
যদিও বিষয়টি অস্বীকার করেন খাদ্য ব্যবসায়ী ও মিল চাতাল মালিক সমিতির আহবায়ক মাহফুজুর রহমান বুলেট। নিম্নমানের চালের গাড়ীটির ব্যাপারে প্রশাসনের হাত থেকে রক্ষা পেতে কেনো তদবির করেছিলেন তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, খাদ্য ব্যবসায়ীদের নেতা হিসাবে আমাকে এটি করতে হয়েছে। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে করেছি।
উলিপুর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা (ওসি এলএসডি) শাহীনুর রহমান বলেন, গুদাম থেকে ভাল চাল পাঠানো হয়েছে। নিম্নমানের চাল সেখানে কিভাবে পৌঁছলো তা আমার জানা নেই। তবে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আলাউদ্দিন বসুনিয়া জানান, এ বিষয়ে কেউ আমাকে কিছু জানায়নি। ওসি এলএসডি (ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা) বিষয়টি সঠিক ভাবে বলতে পারবেন। আমি এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিচ্ছি।
অন্যদিকে, কুড়িগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ আবু বকর বলেন, বিষয়টি তার জানা নাই। খাদ্য গুদামে এরকম হওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।
Leave a reply