উজ্জ্বল হোসেন:
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুর হার বাড়ছে। সোমবার নতুন করে রেকর্ড শনাক্ত ও মৃত্যুর ঘটনা প্রত্যক্ষ করলো বাংলাদেশ। মৃত্যুর হারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয়। কিছুদিন আগেও করোনার প্রকোপে হিমশিম খেতে থাকা প্রতিবেশী ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে মৃত্যুর হার এখন অনেকটাই বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১ মার্চ শনাক্তের সংখ্যা বিবেচনায় দেশে মৃত্যুর হার ছিল ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর সোমবার পর্যন্ত মৃত্যুর হার বেড়ে দাঁড়ায় ১ দশমিক ৬৫ শতাংশে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের মতো ডাটা বিশ্লেষণকারী সংস্থার মানদণ্ড অনুসরণ করে মোট শনাক্ত বিবেচনার বদলে নিষ্পক্তি হওয়া কেইসের (মোট সুস্থ এবং মৃত) ভিত্তিতে হিসেব করলে এ হার দাঁড়ায় ১ দশমিক ৯০ শতাংশ যেটি একই মানদণ্ডে ভারতের মৃত্যুর হার ১.৩৬ এর চেয়ে ঢের বেশি। এটিকে উদ্বেগজনক মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যুর হার ২৫ জুলাই পর্যন্ত ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ভারতে। মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে বৈশ্বিক তালিকায় ভারতের অবস্থান তৃতীয়। করোনায় দেশটিতে ৪ লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
২৬ জুলাই পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ায় মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি আফগানিস্তানে প্রায় ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ, দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তানে মৃত্যুর হার ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। মৃত্যুর হারের দিক থেকে এই অঞ্চলে তৃতীয় বাংলাদেশ। চতুর্থ অবস্থানে থাকা নেপালে এ হার ১ দশমিক ৪২ শতাংশ। পরের অবস্থানে থাকা শ্রীলঙ্কায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। করোনায় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভুটান এখন পর্যন্ত অনেকটাই নিরাপদ। ওয়াল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে করোনায় মাত্র দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৪৮৬ জনের। গোটা বিশ্বে করোনা শনাক্তের সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় এবং মৃত্যুর দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারত মৃত্যুর হারের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় ষষ্ঠ অবস্থানে।
সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি এবং মৃত্যু হার কমানো প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. মোজাহেরুল হক যমুনা নিউজকে বলেন, এখন কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকর করতে হবে। কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং জোরদার করতে হবে। কন্ট্রাক্ট ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে যাদেরকে আমরা শনাক্ত করতে পারবো তাদেরকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আইসোলেশনে নিয়ে চিকিৎসা দিতে হবে। আর যাদের শনাক্ত করতে পারবো যে তারা রোগীর সংস্পর্শে এসেছে, তাদের কোয়ারেন্টাইনে নিতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে, বিশেষ করে বয়স্ক লোকদেরকে।
করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশের কোনো সুস্পষ্ট কৌশলপত্র নেই মন্তব্য করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)’র মহামারি নিয়ন্ত্রণ ও প্রস্তুতি বিভাগের সাবেক প্রধান, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আনোয়ারুল ইকবালের মতে, এখন দেশের যে পরিস্থিতি তাতে অবশ্যই সবাইকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে হবে। ন্যাশনাল আইডি কার্ডের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে চলমান প্রক্রিয়ার পাশাপাশি আরও সহজভাবে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করতে হবে। যথাযথভাবে ২১ দিনের লকডাউন দিতে হবে যেন করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরা যায়। এগুলো না করে দ্রুততম সময়ে মৃত্যু হার কমানো রীতিমতো অসম্ভব।
কঠোর বিধিনিষেধ ও লকডাউনের গুরুত্ব তুলে ধরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, মৃত্যু এখন দুইশো দেখছি, যদি কঠোর বিধিনিষেধ না করতাম আমরা মৃত্যু ছয়শো বা আটশো দেখতে হতো। সংক্রমণ হয়তো আরও তিনগুণ বেড়ে যেতো। মানুষকে কঠোরভাবে লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি মানার আহবান জানিয়ে সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, জীবন আগে, অর্থনীতি পরে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, ন্যূনতম অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা প্রদান করা ব্যতীত সমাজের সকল স্তরের মানুষকে ঘরে আটকে রাখা কঠিন। সংকটকালীন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর নজরদারি চালাতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
ইউএইচ/টিএফ
Leave a reply