জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সন্তানের মা পরিচয়ে দলে অবস্থান তৈরির চেষ্টা করছেন বিদিশা। তবে তিনি যে সন্তানের মা পরিচয় দিয়েছেন, সেই এরিক সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের ঔরসজাত সন্তান নয় বলে দাবি জাতীয় পার্টির অনেক নেতার। অভিযোগ আছে, এরিক বিদিশার চুরি করা সন্তান। একই সাথে তিনি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ট্রাস্টের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার দুরভিসন্ধি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
তালাকের পরও এরশাদের সন্তানের মায়ের দাবিতে ইতোমধ্যে প্রেসিডেন্ট পার্কের একাংশের দখল নিয়েছেন বিদিশা।
২০০০ সালের ২৭ মার্চ বাসায় কাজী ডেকে মুসলিম রীতি অনুযায়ী রেজিস্ট্রির মাধ্যমে সম্পন্ন হয় বিদিশা ও হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বিয়ে। ওই অনুষ্ঠানেই বিদিশার কোলে ছিল সন্তান এরিক। নাম এরিক ওয়েন হুইসন।
পাসপোর্টের তথ্য বলছে, এরিকের বাবা পিটার স্টুয়ার্ট হুইসন, মা বিদিশা সিদ্দিক হুইসন। ২০০১ সালের ১৯ জুলাই বিদিশার পাসপোর্টে এরিককে সংযুক্ত করা হয়। জন্মদিন দেখানো হয় ১১ মার্চ। এরশাদ-বিদিশার বিয়েতে উপস্থিত থাকা সেই শিশু এরিক ওয়েন হুইসনের জমজ ভাই আজকের শাহাতা জারাব এরশাদ এরিক। তাকে এখন এরশাদের ঔরশজাত সন্তান দাবি করে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ফায়দা লোটার অভিযোগ বিদিশার বিরুদ্ধে।
জাতীয় পার্টির সাবেক হুইপ এস এম রেজা জানান, এরশাদ মৃত্যুর আগে বিদিশার প্রতারণার ভিডিও তাকে দিয়ে গেছেন। পাকিস্তানের কাজীকে এনে ছেলে কোলে করে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদকে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করেছে বলে জানান তিনি। ভিডিও, এবং অন্যান্য কাগজ তার কাছে রয়েছে বলে জানান তিনি।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা জানান, ১১ তারিখে (মার্চ, ২০০১) বিদিশার অবস্থান সিঙ্গাপুরে থাকলেও একই দিনে বাংলাদেশে ওই শিশুর জন্ম হয় বলে দাবি করেন বিদিশা। অথচ বিদিশা বাংলাদেশে আসেন ১৩ তারিখে। এছাড়াও তিনি জানান, ওইদিন জমজ শিশুর জন্ম হয়। এরশাদকে তার মধ্যে একজনের বাবা হিসেবে দাবি করেন বিদিশা। তিনি আরও বলেন, চেয়ারম্যান তাকে ব্যক্তিগতভাবে বলেছেন যে, যতদিন তার সাথে বিদিশা ছিলেন, তিনি একদিনের জন্যও শান্তিতে ঘুমাতে পারেননি।
তাহলে এরিকের আসল পরিচয় কী; এরিক কি বিদিশার আগের স্বামী পিটার স্টুয়ার্ট হুইসনের ঔরশজাত সন্তান; আর পাসপোর্টেই বা এরিকের পিতা হিসেবে কীভাবে যুক্ত হলো মরহুম রাষ্ট্রপতি এরশাদের নাম? নতুন করে এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জাতীয় পার্টিতে।
দলীয় সূত্র দাবি করছে, ২০০১ সালের ১৩ মার্চ সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় ফেরেন বিদিশা। বিমানবন্দরে তার কোলে ছিল শিশু সন্তান। এরশাদকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলতে শিশুটিকে নিয়ে গুলশানে এরশাদের ভাড়া বাসায় গিয়ে ওঠেন তিনি। প্রচার করেন, সিঙ্গাপুরে সন্তান জন্মের কথা। একটি পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী ছেলের জন্ম ২০০১ সালের ১১ মার্চ। অথচ দুদিনের ব্যবধানে ১৩ মার্চ সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় আসার পাসপোর্টে কোনো সন্তানের উল্লেখ ছিল না।
জাতীয় পার্টির সাবেক হুইপ এস এম রেজা বলেন, এরশাদ তখন কারাগারে। কারাগার থেকে ফিরে তিনি জানলেন, এই ছেলে তারা। যখন বিদিশা এমনটি দাবি করলেন, তখন একপর্যায়ে এরশাদ তাকে বলেছিলেন যে, তোমার ১১ তারিখে ছেলে হয়েছে, তুমি ১৩ তারিখে দেশে এসেছো, যদি ছেলেকে সিঙ্গাপুর থেকে ছেলেকে এনেই থাকো, তাহলে পাসপোর্টে তার এনডোজ থাকার কথা। সেটা আমাকে দেখাও।
এসএম রেজা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটি কোনো মোয়ার দোকান নয়। এমন কোনো ইতিহাস পৃথিবীর কোথাও নেই যে, মা থাকবে সিঙ্গাপুরে আর বাচ্চা বাংলাদেশে জন্মাবে। এছাড়াও বিদিশা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে প্রতারণা করে বিয়ে করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, এ কথা এরশাদ তাকে জানিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা জানান, সন্তান জন্মের এক সপ্তাহ আগে বা পরে, কাউকে আকাশ পথে যাত্রার অনুমতি দেয়া হয় না।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সরাসরি কিছু বলতে রাজি হননি বিদিশা। তবে টেলিফোনে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
Leave a reply