সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপনের জন্য শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা কতটা প্রয়োজন এটা আমরা সবাই জানি। বাড়তি ওজন রোগব্যাধির ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয় আর সেই সাথে মানসিকভাবেও অস্বস্তিতে রাখে। ব্যস্ত জীবনে প্রতিদিন জিমে গিয়ে এক্সারসাইজ করার সময় হয়ে ওঠে না অনেকেরই। কিন্তু ফিট তো থাকতেই হবে। ডায়েটিং, টুকটাক শরীরচর্চা, মাঝে মধ্যে সময় করে অথবা অফিসে যাওয়ার সময় কিংবা অফিস থেকে ফেরার পথে হেঁটেই বাসায় যাওয়া, এগুলো কিন্তু আমরা অনেকেই করে থাকি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি সঠিক নিয়মে হাঁটা যায় তাহলে ওজন কমতে বাধ্য। আসুন জেনে নেই হেঁটে ওজন কমানোর উপায়-
* হাঁটতে যাওয়ার আগে গ্রিন টি পান করুন: ক্যাফেইন এবং ক্যাটাচিন্সের সঠিক সমন্বয় ফ্যাট বার্ন করার জন্য বেশ কার্যকর। আর মেটাবলিজম ঠিক থাকলে এক্সট্রা ওয়েট কমিয়ে ফেলতে সময় কম লাগে। ঠিক এই কাজটিই গ্রিন টি করে। তাই হাঁটতে যাওয়ার আগে প্রতিদিন গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন।
* প্রতিদিন ১৫ হাজার পদক্ষেপ: ১৫ হাজার পদক্ষেপ! কি বেশি মনে হচ্ছে? কিন্তু হাঁটার অভ্যাস যখন করে ফেলবেন, তখন একদমই বেশি মনে হবে না। আপনার স্মার্টফোনে স্টেপ ট্র্যাকার অথবা স্টেপ কাউন্টার অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন। স্মার্টফোনের এসব ফিটনেস ট্র্যাকার থেকে কত পদক্ষেপ হাঁটছেন সেটা গণনা করা যায়। আর অনেক স্মার্ট ওয়াচেও আপনি এই ফিচার পেয়ে যাবেন। প্রথমদিকে সাবলীলভাবে হাঁটুন, আস্তে আস্তে স্টেপ বাড়াতে হবে। আপনি যত দ্রুত গতিতে হাঁটবেন প্রতি মিনিটে আপনার তত বেশি ক্যালোরি খরচ হবে। এতে দ্রুত এক্সট্রা ওজন কমবে।
* প্রতিদিন ৩ বার ২০ মিনিট করে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন: একটানা লম্বা দূরত্ব একবারে হাঁটার বদলে তিনবার বিশ মিনিট করে হাঁটুন। সহজ ভাষায়, প্রতিদিন যেমন তিন বেলায় খাবার খান, তেমনি তিন বেলা হাঁটতে হবে। প্রতিবেলা খাওয়ার পর হাঁটাহাঁটিতে বাড়তি ক্যালোরি বার্ন হয়ে যায়। এতে ওজন কমার পাশাপাশি আপনার সুগার লেভেলও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
* হাঁটার মধ্যে একটু বিরতি নিন: কোনো কাজই একটানা ভালো লাগে না। একঘেয়েমিতা কাটাতে কিছুক্ষণ হাঁটার পর এক মিনিটের বিরতি নিতে পারেন। এতে দেহে পুনরায় শক্তি ফিরে আসবে। একটু বিরতি নিয়ে আবারো হাঁটা শুরু করুন।
গবেষণায় দেখা গেছে, এভাবে বিরতি নিয়ে হাঁটলে ২০% দ্রুত গতিতে ফ্যাট বার্ন হয়।
* চিনিসমৃদ্ধ পানীয়কে না বলুন: হাঁটার সময় বা হাঁটার পরে মিল্কশেক, ফ্রুট জুস, সফট ড্রিঙ্কস খাওয়ার অভ্যাস অনেকেরই আছে। এতে আপনার হাঁটাহাঁটির পুরো চেষ্টাটাই বৃথা হয়ে যেতে পারে। কারণ ওজন কমাতে হলে যে পরিমাণ খাবেন তার চেয়ে বেশি ক্যালোরি পোড়াতে হবে। চিনি জাতীয় খাবারের মাধ্যমে যেই ক্যালোরি ইনটেক করছেন, হয়তো হেঁটে সেটা বার্ন করতে পারেননি। তাই এসব পানীয়কে না বলুন সবসময়।
* হাঁটার পাশাপাশি ব্যায়াম করুন: হাঁটার একটা নির্দিষ্ট ধরনে আপনার শরীর মানিয়ে গেলে প্রতিদিন একই দূরত্বে হেঁটেও আপনার ক্যালোরি পোড়ানো কমে যেতে থাকবে কারণ আমাদের শরীর খুব অল্প দিনেই অভ্যাসগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেয়। চিন্তার কোন কারণ নেই, হাঁটার সঙ্গে একটু করে দৌড়াতে পারেন বা একটু করে যোগব্যায়াম করে নিতে পারেন। একঘেয়েমিতা কাটাতে হাঁটার পাশাপাশি ভারোত্তোলন করুন বা একটু ব্যাডমিন্টন খেলুন। এতে আপনার বাড়তি মেদ ঝরে যাবে, আর আপনি সুস্থও থাকবেন।
* পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাবেন: যথেষ্ট পরিমাণ পানি খেলে ওজন হ্রাসের প্রক্রিয়া দ্রুত হবে। প্রতিদিন ১.৫ লিটার পানি পান করলে বছরে ১৭৪০০ ক্যালোরি পুড়বে। দিনে অন্তত ৮ গ্লাস পানি খেতে ভুলবেন না।
* ঊর্ধ্বমুখী হাঁটতে পারেন: খেয়াল করলে দেখবেন, আপনি যখন কোন পাহাড়ের ঢাল বেয়ে বা উঁচু রাস্তায় হাঁটা শুরু করেন তখন বেশ পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েন এবং হার্ট বিট বেড়ে যায়। জানেন কি এতে আপনার পেশিও সুগঠিত হয়? একটু থেমে থেমে ধীর স্থিরভাবে চড়াইয়ের দিকে ওঠার অভ্যাস করুন, আস্তে আস্তে গতি বাড়ান। একটু বেশি গতিতে হাঁটলেই প্রায় দ্বিগুণ ক্যালোরি খরচ হবে।
* লিফট নয়, সিঁড়ি ব্যবহার করুন: অফিসে বা বাসায় লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি দিয়ে ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ফ্যাট কমানোর জন্য কতকিছুই তো করছেন, এই সামান্য একটা পদক্ষেপ আপনার অনেক বড় উপকার করবে।
* পছন্দের গান শুনতে শুনতে হাঁটুন: হাঁটতে বের হবেন, কিন্তু সঙ্গী পাচ্ছেন না? সমস্যা নেই, মিউজিককেই আপনার বন্ধু করে নিন। পছন্দের গান বাজতে থাকলে অবসাদ কিভাবে যেন চট করে পালিয়ে যায়। প্রাণবন্ত প্লে-লিস্ট আপনাকে চাঙ্গা রাখবে আর একাকীত্ব তো কাটবেই। ইয়ারফোনে গান শুনতে শুনতে আপনি যে কতদূর হেঁটে ফেলেছেন নিজেও বুঝবেন না! হাঁটার স্পীড আর ওয়াকিং টাইম দুটাই বাড়বে।
এনএনআর/
Leave a reply