তালেবান পুনরুত্থান: অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কায় আফগান নারীরা

|

তালেবান উত্থানে আবারও অধিকার ও স্বাধীনতা হারানোর আশঙ্কায় আফগান নারীরা।

আফগানিস্তানে তালেবান অগ্রযাত্রায় সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ আর অনিশ্চয়তায় রয়েছেন দেশটির নারীরা। তাদের আশঙ্কা, ফিরে আসতে পারে দু’যুগ আগের তালেবান আমলের কড়াকড়ি। মার্কিন সমর্থনপুষ্ট সরকারের ২৫ বছরের শাসনামলে শিক্ষা, কাজের সুযোগসহ যেসব অধিকার আফগান নারীরা অর্জন করেছে, তা আবারও খর্ব হওয়ার ভয় তাদের মাঝে। এরইমধ্যে বিভিন্ন শহরে তালেবানের রোষানলে পড়েছেন অসংখ্য আফগান নারী।

১৯৯৬-২০০১। তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানে শিক্ষা বা কাজের অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল নারীরা। মুখ ঢাকা ছিল বাধ্যতামূলক। স্বাধীনতা ছিল না ঘরের বাইরে যাতায়াতের। ভোগ করতে হতো দোররা ও পাথর ছুড়ে মারার মতো ভয়ঙ্কর শাস্তি। ২০০১ সালে তালেবান পতনের পর আফগানিস্তানে আসে পরিবর্তন। শিক্ষা আর কাজের সুযোগ পান সেখানকার নারীরা। এমনকি প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদেও দায়িত্ব পান তারা।

সম্প্রতি আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী চলে যেতে শুরু করলে দেশটির একের পর এক এলাকা চলে যায় তালেবানদের দখলে। এ অবস্থায় আফগান নারীদের সামনে এখন অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের শঙ্কা। পিছু তাড়া করছে ২৫ বছর আগের স্মৃতি।

আফগান নারী অধিকার কর্মী তারান্নুম সাঈদি বলেন, আবারও সবকিছু হারানোর পথে আমরা। তালেবান ক্ষমতায় এলে আমরা কেউই টিকতে পারবো না। জানি, আমাদের হত্যা করা হবে।

আরেক নারী অধিকার কর্মী জারমিনা কাকর বলেন, আমার শৈশবে যখন তালেবান ক্ষমতায় ছিল, মা একবার আইসক্রিম কিনে দিতে দোকানে নিয়ে গিয়েছিল। মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য মুখটা খুলেছিল। তখনই তালেবান এসে আঘাত করে তাকে। ওই মুহূর্তে শিশু হিসেবে কতটা অসহায় যে লাগছিল! তালেবান ক্ষমতায় এলে সেসব দিন ফিরে আসবে।

তালেবান নেতারা দাবি করেছেন, ক্ষমতায় এলেও খর্ব হবে না নারীর অধিকার। তবে বিভিন্ন এলাকার দখল নেয়ার পর তাদের হাতে আফগান নারীদের নিগৃহীত হওয়ার বহু অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। কান্দাহার, হেরাতসহ বিভিন্ন শহরের ব্যাংক কর্মকর্তা নারীদের কার্যালয় থেকে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়। রাস্তাঘাটেও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে তারা। কিছুদিন আগে টুকটুকে কয়েকটি মেয়ে শিক্ষকের কাছে পড়া শেষে বাড়ি ফিরছিলো। পথে তাদের থামিয়ে হুমকি ধামকি দেয়া হয়। কারণ স্যান্ডেল তাদের পায়ের পাতার সামান্য কিছু অংশ ঢাকতে পারে নি।

তালেবান শাসনামলে পুরুষ সহযোগী ছাড়া কেউ বাজারে যেতে পারতোনা। তালেবানরা আবারও সে নিয়ম চালু করতে পারে। এই অবস্থায় প্রশ্ন হলো- যাদের বাড়িতে পুরুষ সদস্য নেই, তারা কিভাবে জীবন ধারণ করবে? কারণ, প্রায় দুই দশকের আফগান যুদ্ধে অনেকেই সন্তান, স্বামী, বাবা বা ভাইকে হারিয়েছে। তারা কিভাবে চলবে?

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানায়, চলমান অস্থিরতায় প্রায় তিন মাসে বাস্তুচ্যুত হয়েছে আফগানিস্তানের আড়াই লাখ মানুষ। যাদের ৮০ শতাংশই নারী ও শিশু। তাদের সামনে এখন খুবই অনিশ্চিত এক ভবিষ্যত।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply