আফগানিস্তানে তালেবানের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে প্রশ্ন উঠেছে দীর্ঘ ২০ বছরের মার্কিন অভিযানের যৌক্তিকতা ও সাফল্য নিয়ে। মার্কিন নাগরিক ও কূটনীতিকদের তড়িঘড়ি করে কাবুল ছাড়াকে অনেকেই তুলনা করছেন ভিয়েতনামের সায়গন থেকে পলায়নের সাথে। বলা হচ্ছে, লড়াইয়ের ময়দানে আরও একটি পরাজয় হলো যুক্তরাষ্ট্রের। যদিও আফগানিস্তান অভিযানে পরাজয় বা ব্যর্থতার কথা স্বীকার করতে নারাজ দেশটি।
রোববার (১৫ আগস্ট) সারাদিনই কাবুলের আকাশে উড়তে দেখা গেছে বেশ কিছু মার্কিন হেলিকপ্টারকে। তড়িঘড়ি মার্কিন কর্মকর্তা ও নাগরিকদের সরিয়ে নিতে ছিল এই ব্যস্ততা। ব্যাগ-বস্তা নিয়ে দূতাবাস থেকে মার্কিনিদের গন্তব্য বিমানবন্দর।
মাত্র দুইদিন আগেও মার্কিন গোয়েন্দাদের পূর্বাভাস ছিল কাবুলে ঢুকতে অন্তত ৩০ দিন সময় লাগবে তালেবানের। কিন্তু রোববারের নাটকীয়তায় পাল্টে যায় পরিস্থিতি। অবিশ্বাস্য গতিতে তালেবানের অগ্রযাত্রার জন্য আফগান বাহিনীর ওপর দোষ চাপাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, নিজেদের দেশকে রক্ষায় আফগান বাহিনীর ভয়াবহ ব্যর্থতা দেখা গেছে গত সপ্তাহে। অথচ গত ২০ বছরে আমরা শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছি তাদের জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, তারা প্রতিরোধ গড়তে ব্যর্থ হয়েছে। এই মুহূর্তে স্বাভাবিকভাবেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো আমাদের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
আফগানিস্তান থেকে মার্কিনিদের সরিয়ে নিতে ৩ হাজার সেনা পাঠানোর ঘোষণা ছিল ওয়াশিংটনের। কিন্তু, ঘটনার আকষ্মিকতায় অতিরিক্ত সেনা পৌঁছার আগেই শুরু করতে হয় উদ্ধার অভিযান। তাড়াহুড়ো করে নাগরিকদের সরালেও একে পলায়ন বলতে নারাজ যুক্তরাষ্ট্র।
তবে, যে পরিস্থিতিতে এবং যেভাবে মার্কিনীরা আফগানিস্তান ছাড়ছে তাতে সমালোচনার ঝড় উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রেই। তুলনা চলছে ভিয়েতনামের রক্তাক্ত পরাজয়ের সাথে। ৫৮ হাজারের বেশি সেনার মৃত্যুর পর ভিয়েতনাম ত্যাগ করা ছিল মার্কিন সামরিক ইতিহাসের অন্যতম লজ্জাজনক অধ্যায়। সে তুলনায় আফগানিস্তানে প্রাণহানি অনেক কম হলেও মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ অভিযানে প্রাপ্তি কী সেই প্রশ্ন উঠেছে।
অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, নাইন-ইলেভেনের কারণেই আমাদের আফগানিস্তানে যেতে হয়েছিল। আর এখনকার পরিস্থিতি নাইন-ইলেভেনের সময়কার চেয়ে অনেক ভালো। যুক্তরাষ্ট্রে হামলা করার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমেছে। কেউ সে চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেয়ার সক্ষমতাও বেড়েছে আমাদের। ২০ বছর আগের চেয়ে অনেক কিছুই বদলে গেছে।
সমাজতন্ত্রের বিস্তার ঠেকাতে পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে দক্ষিণ ভিয়েতনামের পক্ষে সেনা পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় ১৮ বছরের রক্তক্ষয়ী লড়াই শেষে বিদায় নেয় ১৯৭৫ সালে। উত্তর ভিয়েতনামিজ বাহিনীর অগ্রযাত্রার মুখে ২৯ এপ্রিল মাত্র ১৮ ঘণ্টার অভিযানে সরিয়ে নিতে হয় মার্কিন নাগরিকদের। রূদ্ধশ্বাস ওই অভিযানে ব্যবহৃত হয় ৮১টি হেলিকপ্টার।
Leave a reply