ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিজেপির অনেক সিনিয়র নেতাও প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে ভয় পায়। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের ভাবনীপুরে উপনির্বাচনে মমতার বিরুদ্ধে এবার ক্ষমতাসীন দল বিজেপির হয়ে লড়ছেন যুব নারীনেত্রী পিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল।
অনেক সিনিয়র নেতাকে পিছনে ফেলে মমতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামায় তিনি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগছে, কে এই পিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল?
রাজনীতিতে জয়ই সব কথা বলে না। এই কথাটা প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের ক্ষেত্রে সত্যি। দু’বার নির্বাচনে পরাজিত হয়েও তিনি তারকা কেন্দ্র ভাবনীপুরে বিজেপি প্রার্থী। গত বিধানসভা নির্বাচনে অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ ছিলেন এই কেন্দ্রের প্রার্থী। এবারও তিনি চেয়েছিলেন দাঁড়াতে। কিন্তু অনেক ধোঁয়াশার শেষে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছেন প্রিয়াঙ্কাকে।
প্রিয়াঙ্কা বিজেপিতে খুব পুরনো নন। তিনি যোগ দিয়েছিলেন ২০১৪ সালে। সেটাও লোকসভা নির্বাচনের পরে। প্রথম দিকে প্রিয়াঙ্কার পরিচয় ছিল আসানসোলের সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র আইনজীবী হিসেবে। কিন্তু পরবর্তীকালে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং এখন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভরসার পাত্রী হয়ে ওঠেন তিনি। ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে বিজেপিতে যোগ দিয়েই ২০১৫ সালে কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হন ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডে এবং পরাজিত হন।
ভোটে হারলেও ৪০ বছরের প্রিয়াঙ্কা রাজনীতিতে নেমে আর হারিয়ে যাননি। ধীরে ধীরে দলে নিজের জায়গা তৈরি করতে থাকেন। ১৯৮১ সালে জন্মানো প্রিয়াঙ্কা কলকাতার ওয়েল্যান্ড গোলস্মিথ স্কুলে লেখাপড়া করেন। এরপরে দিল্লি থেকে স্নাতক এবং হাজরা ল কলেজ থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপরে মানবসম্পদ বিষয়ে এমবিএ করেন তাইল্যান্ড অ্যাসামপশন ইউনিভার্সিটি থেকে।
বাংলা তো বটেই সেই সঙ্গে হিন্দি ও ইংরেজিতে স্বচ্ছন্দ প্রিয়াঙ্কাকে একটা সময়ে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বিজেপির মুখ হিসেবেও দেখা যায়। দলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পান ২০২০ সালের আগস্টে। যুব মোর্চার রাজ্য সহসভাপতি প্রিয়াঙ্কা গত বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হন এন্টালি আসনে। কিন্তু তৃণমূলের কাছে হারতে হয় প্রায় ৫৯ হাজার ভোটে।
দু’বার নির্বাচনে হেরে এবার নেমেছেন মততার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। বিজেপি অবশ্য দাবি করছে, ভোটে দু’বার হারলেও সদ্যই দলকে বড় জয় এনে দিয়েছেন প্রিয়াঙ্কাই। গত ১৯ আগস্ট ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’ মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের পাঁচ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, খুন, ধর্ষণ, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মতো ঘটনার তদন্ত করবে সিবিআই। অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগের তদন্ত করবে সিট। এই মামলায় বিজেপির পক্ষে আইনজীবীদের প্রধান মুখই ছিলেন প্রিয়াঙ্কা। বিজেপি শিবির তখন থেকেই প্রিয়াঙ্কাকে ‘লড়াকু’ আখ্যা দিতে শুরু করে। এ বার মমতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সুযোগ করে দেওয়াটা দলের পক্ষে পুরস্কার বলেই মনে করছে রাজ্য বিজেপি।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
Leave a reply