ষ্টাফ রিপোর্টার
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘কাজের বিনিময়ে খাদ্য’ কর্মসূচির ৯০ মেট্রিক টন সরকারি চাল আটক করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব। বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে আতাহার বুলনপুর এলাকায় অবস্থিত নবাব অটো রাইস মিল থেকে এই চাল উদ্ধার করা হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বস্তায় থাকা নন বাসবমতি এসব চাল বাসমতি চাল হিসেবে বাজারজাতকরণের জন্য ভারতীয় একটি কোম্পানী বানাসী’র বস্তায় স্থানান্তর করা হচ্ছিল।
কালোবাজারীর মাধ্যমে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে চাল মজুদের অভিযোগে শিবগঞ্জ উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী এবং নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের দুই সদস্য বিথী রানী কর্মকার ও আমিনুল ইসলামকে আটক করেছে র্যাব। এছাড়া মিলের গুদাম ঘরটিও সিলগালা করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
র্যাব জানায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার আওতায় শিবগঞ্জ উপজেলার নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নের রানীহাটি কলেজের সামনের সরকারি খাস জমিতে এলাকার ভূমিহীনদের বসবানের জন্য একটি গুচ্ছগ্রাম নির্মাণের জন্য শিবগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসুচির ৩৪০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য বিথী রানী কর্মকারকে সভাপতি করে ৫ সদস্যর একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই বরাদ্দের দুটি চালানে প্রথম কিস্তির ৯০ মেট্রিকটন চাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ খাদ্য গুদাম থেকে উত্তোলন করেন প্রকল্প কমিটির সভাপতি বিথী রানী কর্মকার।
র্যাব-৫ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্প কমাণ্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ সাঈদ আব্দুল্লাহ আল মুরাদ জানান, চালের চালান যাওয়ার কথা ছিলো শিবগঞ্জ উপজেলা খাদ্য গুদামে। কিন্তু সরকারি নীতিমালা ভঙ্গ করে অবৈধভাবে কালোবাজারির মাধ্যমে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে এই চাল নবাব অটো রাইস মিলে মজুদ করা হয়েছে, এমন তথ্য আমরা জানতে পারি। রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নয়ন কুমার রাজবংশী ও তার নেতৃত্বে র্যাবের একটি দল ওই মিলে অভিযান চালায়। এসময় মিলের ১১ নম্বর গোডাউন থেকে কাবিখার ৯০ মেট্রিকটন চাল আটক করা হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৩৬ লাখ টাকা। এসময় গোডাউনটি সিলগালা করে দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার সদর থেকে শিবগঞ্জ খাদ্য গোডাউনে চালগুলো না পৌঁছলেও শিবগঞ্জ উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী সেগুলো কাগজে কলমে রিসিভ দেখিয়েছেন। এছাড়া আমারা খোঁজ নিয়ে জেনেছি কাবিখা’র এসব চাল বিক্রির কোন নিয়ম নেই। তারপরও চালগুলো নবাব অটো রাইস মিলে পাওয়া গেছে। এবিষয়ে আমরা আরো তদন্ত করছি।
শিবগঞ্জ উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী সাংবাদিকদের বলেন, বিথী রানীকে গত ৫ তারিখ ডিও’তে সই করেছেন। তাকে বরাদ্দকৃত চাল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সদর থেকে চাল গুলো আমার গোডাউনে ঢোকেনি। ইউএনও সফিকুল স্যার আমাকে মালগুলো তাড়াতাড়ি ডেলিভারি দেয়ার জন্য বলায় সময়ের অভাবে আগেই রিসিভ দেখিয়েছি। একপর্যায়ে তিনি সাংবাদিকদের অসংলগ্ন তথ্য দেয়া শুরু করেন। প্রথমে তিনি কাবিখা’র চাল বিক্রি করা যাবে বলে তিনি জানান। পরে তিনি তা অস্বীকার করে বলেন আমি তাকে (বিথী রানী) চাল বুঝিয়ে দিয়েছি। তিনি কোথায় বিক্রি করেছেন তা আমি জানিনা।
এবিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা কর্মকর্তা সফিকুল ইসলামের মতামত জানতে তার দুইটি মুঠোফোনে ফোন ও ক্ষুদে বার্তা দিলেও তিনি ফোন রিসেভ করেননি।
এদিকে এই ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প কমিটির সভাপতি নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য বিথী রানী কর্মকার, সাধারণ সম্পাদক একই ইউপির ৫ নং ওয়ার্ড সদস্য আমিনুল ইসলাম ও শিবগঞ্জ উপজেলা খাদ্য গুদামের পরিদর্শক গোলাম রাব্বানীকে রাত দেড়টার দিকে গ্রেফতার করে র্যাব। এই ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত তিনজনসহ নবাব অটো রাইস মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকবর হোসেনকে আসামি করে শুক্রবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
প্রকল্পের সভাপতি বিথী রানী কর্মকার দাবী করেন, এই চাল উত্তোলনের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানতেন না। কিছুদিন আগে প্রকল্পের কাগজপত্রের কথা বলে আমার কাছ থেকে ৩টি সই নেয় পিআইও স্যার। কিন্তু সেটি যে চালের বিষয়ে সেটি তিনি আমাকে বলেনি। এছাড়া আজ যে চাল আনা হবে সেটিও আমাকে জানানো হয়নি।
সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম একই অভিযোগ করে বলেন পিআইও আরিফুল স্যার আমাকে মোবাইলে ফোনে ডেকে কয়েকটি কাগজে সই নেন। আমি প্রকল্পের জায়গায় মাটি ভরাটের কাজ তদরকি করছিলাম। এছাড়া চালের বিষয়ে আমাকে কোন কিছু জানানো হয়নি।
এবিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, তারা আমার কাছে এসে সকল কাগজপত্রে সই করেছেন। তাদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল দেয়ার জন্য আমি ইউএনও স্যারের ডিও তাদের বুঝিয়ে দিয়েছি মাত্র। এবং তারা সেটি শিবগঞ্জ খাদ্য গুদাম থেকে বুঝিয়ে নিবেন।
নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নয়ন কুমার রাজবংশি জানান, কাবিখার চাল পাওয়া এই গুদামটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। এই গোডাউনে সরকারী চালের বস্তা থেকে অন্য নিজস্ব একটি বস্তায় স্থানান্তর করা হচ্ছিল। যা কালোবাজারে বাজারজাত করতো বলে আমরা ধারণা করছি। এখন আমরা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে তাদের আমরা আনব এবং তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a reply