আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের শক্তির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র বাগরাম এখন পরিত্যক্ত এক ঘাঁটি। ভাঙাচোরা স্থাপনা, ধ্বংসপ্রাপ্ত অস্ত্র সরঞ্জামের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চারিদিকে। এক সময়ের ভয়ঙ্কর এই সামরিক কারাগারটিতে নেই কোনো বন্দি। তালেবান ক্ষমতা নেয়ার পর মুক্তি দেয়া হয়েছে সবাইকে। ‘আফগানিস্তানের গুয়ানতানামো’ নামে পরিচিত জেলের বিভীষিকাময় স্মৃতি এখনও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সাবেক বন্দিদের।
কে বলবে, ২ দশক ধরে আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি ছিল এখানে? এখন চারদিকে কেবল ধ্বংসস্তুপ। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পরিত্যক্ত জিনিসপত্র। এখানে সেখানে পড়ে আছে বন্দিদের ফাইলপত্র।
বাগরামের সামরিক কারাগারকে তুলনা করা হতো কিউবার গুয়ানতানামো বের সাথে। বিনা বিচারে আটকে রাখা বা মার্কিন সেনাদের নির্যাতনের বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই কারাগার। সেসব স্মৃতি মনে করে এখন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ক্ষোভ ঝাড়ছেন সাবেক বন্দিরা। যাদের অনেকেই মূলত তালেবানের সক্রিয় সদস্য।
সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত বকেজন বন্দি বলেন, একা এক কক্ষে এক মাস রেখেছে আমাকে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ছিল ঘরটা। ছাড়া পাওয়ার পরও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত আমি। ঠিকঠাক কাজ করতে পারি না। আড়াই বছর এখানে থাকার সময় মস্তিষ্কের অনেক ক্ষতি হয়েছে আমার।
রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে ১৯৫০ এর দশকে বাগরাম ঘাঁটি তৈরি করে সোভিয়েত বাহিনী। ২০০১ সালে আফগানিস্তান অভিযান শুরুর সময় থেকেই যুক্তরাষ্ট্র আর ন্যাটোর প্রধান ঘাঁটি হয়ে ওঠে এটি। প্রায় ৭৭ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিশাল এই ঘাঁটির অবকাঠামো উন্নয়নে কোটি কোটি ডলার খরচ করে পেন্টাগন। সেনাদের জন্য ব্যবস্থা করা হয় আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধার।
তবে অবকাঠামো বা বিশালত্ব নয়, বিশ্বজুড়ে বাগরাম পরিচিতি পায় এখানকার কারাগারে নিপীড়নের কারণে। অনেকেই মনে করেন, নিপীড়নের এ কৌশলে হিতে-বিপরীত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য, আফগানদের মধ্যে বেড়েছে পশ্চিমাবিদ্বেষ। এক আফগান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, আমেরিকা আর তাদের পুতুল সরকার দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমার মুসলিম ভাইদের আর ইসলামকে হত্যা করেছে তারা।
জুলাইয়ের শুরুতে রাতের আঁধারে বাগরাম ছেড়ে যায় মার্কিন সেনারা। তখনও প্রায় ৭ হাজার বন্দি ছিলো ঘাটির কারাগারে। আগস্টে তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর যে যেভাবে পারে কারাগার থেকে বেরিয়ে যায়। আর বাকিদের পরে মুক্তি দেয় তালেবান।
Leave a reply