তালেবানের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্ক ও বিভাজন দেখা দিয়েছে সাধারণ আফগানদের মাঝে। দুর্নীতি-চুরি-অপহরণ আর ব্যভিচারের মতো বিভিন্ন অপরাধের বিচারে শরিয়াহ আইনের ভিত্তিতে শাস্তির কথা জানিয়েছে তালেবান সরকার। এতে সমর্থন দিয়ে অনেক আফগানও বলছেন, কঠোর শাস্তির ফলে অপরাধ কমবে। তবে এতে নিপীড়ন আর বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন অনেকে।
সম্প্রতি কাবুলের বাসিন্দা ফারহাদ কালানভির ভাইকে অপহরণ করতে না পেরে হত্যা করে দুষ্কৃতিকারীরা। অপহরণকারীদের ছোঁড়া গুলিতে আহত ফারহাদের একমাত্র মেয়ে স্থায়ীভাবে হারিয়েছে চলাফেরা করার ক্ষমতা। আহত ও পঙ্গু কন্যা এবং ভাইকে হারানোর শোকে স্তব্ধ ফারহাদ কালানভি বলেন, চার মাস আগে একদল অস্ত্রধারী আমার ভাইকে অপহরণের চেষ্টা করে। বাধা পেলে গুলি করে তারা। ফলে ঘটনাস্থলেই প্রাণ যায় আমার ভাইয়ের। আর তার মেয়ের কোমরে গুলি লাগে। সে এখন চলৎশক্তিহীন। ওই ঘটনার শোক সহ্য করতে না পেরে কিছুদিন আগে আমার মা মারা যান। আমার পুরো পরিবারই শেষ হয়ে গেছে।
সম্প্রতি চার অপহরণকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর মরদেহ প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে রাখে তালেবান। ঘোষণা দেয় যেকোনো অপরাধের শাস্তি হবে শরিয়াহ আইনের ভিত্তিতে। তবে এ নিয়ে হয়েছে সমালোচনাও। তবে, তালেবানের দেয়া কঠোর শাস্তিতে স্বস্তি প্রকাশ করেছে অনেক ভুক্তভোগী পরিবারে।
কাবুলের বাসিন্দা ফারহাদ কালানভি আরও বলেন, আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে, এর চেয়ে বড় সুসংবাদ আর কিছুই হতে পারে না। আর শাস্তি আসলে এমনই হওয়া উচিত। যাতে একজনকে শাস্তি দেখেই আর কেউ অপরাধের কথা চিন্তা না করে।
তবে সাজার এমন কঠোর বিধান নিয়ে আছে বিপরীত প্রতিক্রিয়াও। যেমন, কাবুলের একটি কারাগারের এই কয়েদি মুজদাহর। তালেবানের কাবুল দখলের দুই বছর আগে এক সন্তানের এই জননী বিয়ে করেন নিজের পছন্দে। তবে তালেবানের দাবি বিয়ের আগে পরিচয় হওয়ায় তাদের সম্পর্ক বৈধ নয়। ফলে ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে এখন কারাগারে এ নারী।
মুজদাহ বলেন, দুই বছরের সম্পর্কের পর আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর আমার সন্তানের জন্ম। কিন্তু স্থানীয় তালেবান নেতারা এ বিয়েকে স্বীকৃতি দিতে রাজি নন। তারা বলছেন আমি নাকি ব্যাভিচার করেছি। তারা আমাকে আবারও বিয়ে দিতে চায় অন্য একজনের সাথে। আমি রাজি না হওয়ায় আমাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
তালেবান শরিয়াহ আইনের কতুটুকু বাস্তবায়ন করবে কিংবা আফগানিস্তানে এর প্রভাব কিভাবে পড়বে তা নিয়ে দেশটির সাধারণ মানুষের মাঝেই রয়েছে বিতর্ক। তবে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, তালেবানের কড়াকড়ির আড়ালে বাড়তে পারে নিপীড়ন। মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির সম্ভাবনাও একেবারে নাকচ করা যাচ্ছে না।
/এসএইচ
Leave a reply