যে কারণে শান্তিতে নোবেল পেলেন দুই সাংবাদিক

|

প্রতিকূল পরিবেশে ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে এ বছর শান্তিতে যৌথভাবে নোবেল পুরষ্কার পেলেন ফিলিপাইনের মারিয়া রেসা এবং রাশিয়ার দিমিত্রি মুরাতভ। দীর্ঘদিন ধরে নিজ নিজ দেশে দুর্নীতি, পুলিশি নির্যাতন, ক্ষমতাসীনদের অত্যাচার এবং নির্বাচনে কারচুপির বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার। নোবেল কমিটি বলছে এ সম্মাননা প্রতিকূল পরিবেশে সংবাদকর্মীদের দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করবে।

শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার জয়ের পর বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যম এবং সংবাদকর্মীদের কোণঠাসা অবস্থার ইঙ্গিত দিয়ে ফিলিপাইনের সাংবাদিক মারিয়া রেসা জানিয়েছেন, প্রকৃত তথ্য এবং বিশ্বাসযোগ্যতা ছাড়া পৃথিবীকে চিন্তা করা অসম্ভব। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব, প্রযুক্তির সামনে সংবাদকর্মীদের ‘গেটকিপিং’-এর ক্ষমতা খাটো হয়ে যায়। আমরা ভালোভাবে জানি, প্রাইমটাইমে অপরাধ, দুর্নীতির খবরগুলো দর্শক দেখবেন। কিন্তু নিরুপায় হয়ে সংবাদ পরিবেশনে অনেক কিছু এড়িয়ে যেতে হয়। যা গোটা বিশ্বের সংবাদকর্মীদের জন্য অস্তিত্ব সংকট।

মূলত ফিলিপাইনে শাসকের ক্ষমতার অপব্যবহার, সহিংসতা সৃষ্টি এবং কর্তৃত্বপরায়ণ আচরণের মুখোশ উন্মোচন করছেন রেসা। ৫৮ বছর বয়সী এই সংবাদকর্মী বর্তমানে অনুসন্ধানী নিউজ ওয়েবসাইট র‍্যাপলারের সিইও। তিনি গেলো দুদশক জনপ্রিয়
মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনুসন্ধানী সাংবাদিক ছিলেন। সেসময়, তিনি লিখতেন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের জন্যেও।

এদিকে, রুশ শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র নোভায়া গেজেটার প্রধান বার্তা সম্পাদক দিমিত্রি মুরাতভ বর্তমান রাশিয়ার রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একমাত্র সমালোচক গণমাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। গেলো ২৪ বছর ধরে দুর্নীতি, পুলিশি নিপীড়ণ, বিচার বর্হিভূত গ্রেফতার, নির্বাচনী জালিয়াতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ৫৯ বছর বয়সী এ সাংবাদিক। এরই মাঝে, নোবেল কমিটির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ক্রেমলিন।

রাশিয়ান প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ শান্তিতে নোবেল জয়ের জন্য দিমিত্রি মুরোতভকে অভিনন্দন। তিনি বরাবরই নিজ আদর্শ অনুসারে কাজ করেছেন, নীতির ব্যাপারে দেননি এক চুল ছাড়। নিঃসন্দেহে তিনি প্রতিভাধর ও সাহসী। তার কাজের যথার্থ মূল্যায়ণ হলো এতোদিনে।

তালিকায় থাকা বাকি মনোনীতরা ভোলেননি ২ সংবাদকর্মীকে অভিনন্দন জানাতে। জাতিসংঘের অভিমত, সাংবাদিকতার মতো গুরুত্বপূর্ণ পেশাকে নোবেলে ভূষিত করাটা খুবই জরুরি ছিল।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা, ইউএনএইচআরসির মুখপাত্র রাভিনা শ্যামদাসানি বলেন, বরাবরই রাশিয়া ও ফিলিপাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং তথ্য অধিকারের ব্যাপারে জাতিসংঘ উদ্বিগ্ন। শুধু এই দুটি দেশ নয় বরং গোটা বিশ্বেই সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়া হচ্ছে। করা হচ্ছে নির্যাতন ও হত্যা। সুতরাং, সাংবাদিকদের সম্মান জানানোটা ছিলো সময়ের দাবি।

নোবেল কমিটির দাবি, সম্মাননা পাওয়া দুজন প্রতিনিধিত্ব করছেন বিশ্বের সেসব সাংবাদিককে যারা প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করে সংবাদ সংগ্রহ করছেন।

প্রসঙ্গত, মারিয়া রেসার জন্ম ১৯৬৩ সালের ২ অক্টোবর ফিলিপাইনের ম্যানিলায়। তিনি একজন ফিলিপিনো-আমেরিকান সাংবাদিক ও লেখক। আর দিমিত্রি আন্দ্রেইভিচ মুরাতভের জন্ম রাশিয়ায় সামারায়, ১৯৬১ সালে। তিনিও একজন সাংবাদিক এবং নোভায়া গেজেতা নামক একটি সংবাদপত্রের এডিটর ইন চিফ।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply