কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলায় ৩৫ বছর আগে মৃত্যুবরণ করা এক নারীকে জীবিত দেখিয়ে অন্যের নামে দলিল করে জমি রেজিস্ট্রি করার অভিযোগ উঠেছিল রাজীবপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত মামলায় সাব-রেজিস্ট্রার নজরুল ইসলাম (৫৭) এবং আরেক আসামি জহুরা খাতুনকে (৬০) কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার (১০ অক্টোবর) দুপুরে মামলার চার্জশিট গ্রহণ করে কুড়িগ্রাম চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আমলী আদালত, রাজীবপুর) মো. সেফাতুল্লাহ এ আদেশ দেন। আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) প্রদীপ রায় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন,আদালতে পিটিশনের প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ১৫ মার্চ রাজীবপুর থানায় আব্দুল করিম নামে ভুক্তভোগী মামলা দায়ের করেন। মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।
সাব-রেজিস্ট্রার নজরুল ইসলাম রাজীবপুর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার এবং ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের গছিডাঙা গ্রামের মৃত আব্দুস সালামের ছেলে। আর জহুরা খাতুন রাজীবপুর উপজেলার বদরপুর গ্রামের মজিবর রহমান খাজার স্ত্রী।
মামলা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামের নহর শেখের স্ত্রী ও মামলার বাদী আব্দুল করিমের দাদী দৌলতন নেছা ৩৫ বছর পূর্বে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তার নামে থাকা ৫৪ শতাংশ জমি তার ওয়ারিশরা ভোগদখল করে আসছিলেন।
কিন্তু উপজেলার গোল্ডেন লাইফ একাডেমি নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ইসমাঈল হোসেন তার মা জহুরা খাতুনকে দৌলতন নেছা সাজিয়ে দলিল লেখক নুরুন্নবী সরকারসহ কয়েকজনের সহযোগীতায় ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি মাসে জমির ৫০ শতাংশ গোল্ডেন লাইফ একাডেমির নামে দানপত্র দলিল রেজিস্ট্রি করেন। সাব-রেজিস্ট্রার নজরুল ইসলাম যাচাই-বাছাই না করেই জহুরা খাতুনকে মৃতঃ দৌলতন নেছা হিসেবে জীবিত দেখিয়ে দলিল সম্পাদন করেন।
এরপর একই বছর ৭ ফেব্রুয়ারি গোল্ডেন লাইফ একাডেমির পরিচালক ইসমাঈল হোসেন জমি দখল নিতে গেলে বাদী আব্দুল করিম তাতে বাধা দেন। তখন ইসমাঈল হোসেন জাল দলিলটি প্রদর্শন করলে আব্দুল করিম বিষয়টি জানতে পেরে আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালত বাদীর আবেদন আমলে নিয়ে রাজীবপুর থানা পুলিশকে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। পরে পুলিশ হেড কোয়ার্টারের নির্দেশে সিআইডিকে মামলার তদন্তভার দিলে সিআইডি মামলাটি তদন্ত করে সাব-রেজিস্ট্রার নজরুল ইসলাম, দলিল লেখক নুরুন্নবী সরকার, মৃত দৌলতন নেছা হিসেবে পরিচয় দানকারী জহুরা খাতুন ও গাল্ডেন লাইফ একাডেমির পরিচালক ইসমাঈল হোসেনসহ ৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।
জিআরও প্রদীপ রায় বলেন, আসামিরা এতদিন অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে ছিলেন। রোববার তারা আদালতে হাজির হয়ে স্থায়ী জামিনের আবেদন করলে আদালত তা নামঞ্জুর করে আসামিদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। অপর আসামিরা এখনও জামিনে রয়েছেন বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
Leave a reply