এভাবে ‘লক্ষ্মী’ পায়ে ঠেলে ম্যাচ জেতা যায়?

|

লিটনের ক্যাচ মিসে হতবুদ্ধি মাহমুদউল্লাহ নিয়েছেন বিতর্কিত কিছু সিদ্ধান্ত। ফলাফল, পরাজয়।

বিশ্বকাপের মূলপর্বের প্রথম ম্যাচে সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে বাজে বোলিং করতে দেখা গেলো বাংলাদেশকে। আর তাতে ব্যাটারদের এনে দেয়া ‘লক্ষ্মী’কে পায়ে ঠেলেই লঙ্কানদের কাছে ম্যাচ হারলো টাইগাররা। শুধুই কি বোলাররাই ছন্দ হারিয়েছিলেন? রোববার শারজার মাঠে ফিল্ডিং ব্যর্থতাও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

দলের প্রতি কমিটমেন্ট ও ভালো ফিল্ডিংয়ের জন্য যে লিটন দাসকে ম্যাচের পর ম্যাচ ব্যাট হাতে ব্যর্থ হওয়ার পরও সুযোগ দেয়া হয়েছে দলে, সেই লিটনই অবিশ্বাস্যভাবে ছেড়ে দিলেন দুটো সহজ ক্যাচ! প্রথমটি ১৩-তম ওভারে আফিফের বলে ভানুকা রাজাপাকসের ক্যাচ, যখন তার রান ১১ বলে ১৪; দ্বিতীয় ক্যাচটি ফেলে জীবন দান করেন লঙ্কানদের ম্যাচ জয়ের কারিগর চারিথ আসালাঙ্কাকে, তখন পর্যন্ত লঙ্কান টপ অর্ডারের ব্যর্থতার মিছিলে বিরুদ্ধ স্রোতের এই যাত্রীর উইকেটটির জন্য তীর্থের কাকের মতো প্রতীক্ষায় ছিল গোটা বাংলাদেশ। সেখানেই আসলে ম্যাচটা হেরে গেছে বাংলাদেশ।

১৯-তম ওভারে ৩১ বলে ৫৩ রান করে নাসুমের বলে বোল্ড হয়ে রাজাপাকসে কেবল আফসোসই বাড়ালেন। অবশ্য লঙ্কানদের আশার প্রতীক হয়ে ম্যাচজুড়ে জ্বলজ্বল করতে থাকা আসালাঙ্কা ম্যাচ জিতিয়েই তবে মাঠ ছেড়েছেন। ৫ চার ও ৫ ছয়ে মাত্র ৪৯ বলে করেছেন ৮০ রান।

এক লিটনের হাতেই ফস্কে গেলো গোটা ম্যাচ! আপত্তি থাকলে অবধারিতভাবে আতশ কাঁচের নিচে আনতে হবে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর সিদ্ধান্তগুলোও। বাঁহাতি ব্যাটম্যানের বিপক্ষে ডানহাতি স্পিনার আনার সেই পুরনো মুখস্তবিদ্যা যে সবসময় কাজে লাগে না সেটিও দেখা গেল শারজার মাঠে। ১১-তম ওভারে যখন ৮৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে লঙ্কান ব্যাটাররা কিছুটা ধীরে ব্যাট করার ইনটেন্ট দেখাচ্ছিল তখনই মূল বোলারদের সরিয়ে নিজে বোলিংয়ে যান। প্রথম ওভারটি বাঁহাতি ব্যাটারের বিপক্ষে ৫ রান দিয়ে পারও করে দিয়েছিলেন। কিন্তু ১২-তম ওভারে আরেক অনিয়মিত বোলার আফিফের কাছ থেকে ১৫ ও ১৩-তম ওভারে মাহমুদউল্লাহর কাছ থেকে ১৬ রান আদায় করে নেন দুই বাঁহাতি আসালাঙ্কা ও রাজাপাকসে। ধীরে ধীরে গ্রিপে আনতে থাকা ম্যাচ যে সেখান থেকেই ছিনতাই করে নিয়ে গেছেন দুই লঙ্কান সেটি বুঝতে বোদ্ধা হওয়ার প্রয়োজন নেই, বোকা ক্রিকেট ফ্যান হওয়াই যথেষ্ট। মুখস্ত বিদ্যায় তাও যদি আপনার বোকা হওয়ার কিছুটা বাকি থাকে, ১৯-তম ওভারে নাসুম যখন রাজাপাকসেকে বোল্ড করেন তখনই স্পেশালিস্ট বোলারদের সরিয়ে রাখা কেবল আফসোসই বাড়াবে আপনার। সেটিও আরও বাড়বে যখন দেখবেন ৩ ওভারে ১৭ রান খরচায় ২ উইকেট নেয়া সাকিব আল হাসানের এক ওভার ম্যাচ শেষেও ছিল অব্যবহৃত। আর ডেথ ওভারে দলের অন্যতম সেরা অস্ত্র মোস্তাফিজুর রহমানও করেছেন ৩ ওভার। সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলারদের শেষ পর্যন্ত রেখে দিয়ে তা কাজেই লাগাতে না পারা অবশ্যই ক্রিকেটীয় পরিকল্পনায় মস্ত বড় এক ভুল।

অথচ এই ম্যাচের আগেও মূল দুশ্চিন্তা ছিল ব্যাটারদের নিয়ে। বিশেষ করে ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ খ্যাত মুশফিক যে নিজের উপরই আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছিলেন! কিন্তু বড় মঞ্চে প্রিয় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ঠিকই নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। ৩২ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করা মুশফিক আজ সাজিয়েছিলেন নানা শটের পসরা। তার সাথে মোহাম্মদ নাঈমের চমৎকার ইনিংসে স্কোরবোর্ডে জমা পড়েছিল ১৭১ রানের বিশাল সংগ্রহ। তবে ব্যাটারদের এনে দেয়া ‘লক্ষ্মী’কে বার বার হাত ফসকে ফেলে দিলে চলে? সেই খেসারত বিশ্বকাপের বড় মঞ্চেই আজ দিতে হলো বাংলাদেশকে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply