টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার টুয়েলভে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের পর প্রশ্ন উঠেছে টাইগার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর বোলিং পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়ে। তবে বাংলাদেশের সাবেক আইকনিক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছেন আরও গভীরে। অধিনায়কেরা মাঠে অনেক অনেক সময়ই কোণঠাসা হয়ে পড়লে টিম ম্যানেজমেন্টই এগিয়ে আসে অন্যান্য দেশে। আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যদি তা না হয় তবে মাশরাফী জানতে চেয়েছেন, ক্যাপ্টেনের ভুল ধরিয়ে না দিতে পারলে কোচের কী প্রয়োজন!
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে পানি পানের বিরতিতে মাঠে কোচও প্রবেশ করতে পারেন আর ১০ ওভার শেষে ছিল সেই বিরতি। স্ট্র্যাটেজিক টাইম আউট বা কৌশলগত বিরতিতেও মাঠে এসেছিলেন কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো। তবে মাহমুদউল্লাহর সাথে কোনো পরামর্শ করেছেন কিনা তা জানা যায়নি। মাশরাফীর প্রশ্ন, কোচ কি তার দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করছেন? ফেসবুকে মাশরাফী তার ব্যক্তিগত প্রোফাইলে লিখেছেন, ম্যাচের ৯.৪ ওভার ৭৯ রানে ওদের ৪ উইকেট, ঠিক তখন আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী ড্রিংকস ব্রেক। তার মানে কোচ মাঠের ভিতর আসবে। আমাদের কোচও এসেছিল। তাহলে উনি এসে রিয়াদের (মাহমুদউল্লাহ) সাথে কি কথা বলেছিল? যদি বলে থাকে, তাহলে কি সব দায় রিয়াদের? মানলাম, অন ফিল্ড ক্যাপ্টেন’স কল ইজ ফাইনাল। তবে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের ক্রাঞ্চ মোমেন্টে কি কোচ ডিসকাশন করে না? ক্যাপ্টেন তখন বিভিন্ন বিষয়ে চাপে থাকে। তার প্ল্যান কী, এটা কি জানতে চেয়েছিল কোচ? আর যদি কথা হয়ে থাকে, তাহলে কি কোচের প্রেস হ্যান্ডেল (প্রেস কনফারেন্সে) করা উচিত ছিল না? কারণ রিয়াদের ভুলটা ধরা হয়েছে ঠিক ঐ সময় থেকেই।
মাহমুদউল্লাহর পাশে দাঁড়িয়ে মাশরাফী আরও লিখেন, ১১ নাম্বার ওভার করে মেহেদি, দলের মূল বোলার। ১২ নাম্বার ওভার করে রিয়াদ, সম্ভবত ৫/৬ রান দেয় (৫ রান)। ১৩ নাম্বার ওভার করে আফিফ, যে ওভারে ১৫ রান হয়। কিন্তু রিয়াদ যে চিন্তা থেকে আফিফকে এনেছিল, সেটাতেও কিন্তু সুযোগ তৈরি হয়েছিল। যদি সুযোগ হাতছাড়া না হতো, তাহলে আমরা বলতাম দারুণ ক্যাপ্টেন্সি। ক্যাচ মিসের অযুহাত না দিলেও এটাই সত্য, ক্যাচ মিস এই প্রথম হয়নি। আর লিটন দলের সেরা ফিল্ডারদের একজন। কোনো কোনো সময় ভাগ্যটাও সাথে থাকতে হয়। তাহলে স্রেফ দল সফল না হওয়ার কারণে, এই দুজনকে (মাহমুদউল্লাহ ও লিটন) এতটা তুলাধুনা করা কতটা ঠিক, আমি শিওর না। ঠিক এ কারণেই আমার মনে হয়েছে, যদি কোচ এ বিষয়ে রিয়াদের সাথে কথা না বলে থাকে, তাহলে তো ব্রেকের সময় দলের টিম বয়কেই মাঠে পাঠিয়ে দেয়া যায় হাই-হ্যালো করতে, কোচের আর প্রয়োজন কী?
এছাড়া কৌশলগত আরও কিছু জায়গায় গলদ খুঁজে বের করেছেন মাশরাফী, আর বলেছেন এতোসব ইস্যুতে কেবল মাহমুদউল্লাহকেই অভিযুক্ত করলে কোচের ভূমিকা কী ছিল। লিখেছেন, ম্যাচের আগে উইকেট অ্যাসেস শুধু ক্যাপ্টেন করে না, পুরো টিম ম্যানেজমেন্ট সাথে থাকে। তাহলে টিম করার সময় চিন্তা করেছে, উইকেট স্লো হবে, যার কারণে তাসকিনকে বসিয়ে নাসুমকে খেলানো। কিন্তু নাসুমকে পাওয়ার প্লের পর বোলিং করানো হলো না। কারণ দুজন বাহাতি ব্যাটসম্যান উইকেটে। তাহলে আগেই চিন্তা করা উচিত ছিল, শ্রীলঙ্কার টপ অর্ডারে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান বেশি। তার ওপর মাঠের একপাশে মাত্র ৫৬ গজ! যখন নাসুমকে নেয়া হয়েছে, তাহলে ব্রেকের সময় কোচ রিয়াদকে কি বলেছে যে, ‘নাসুম দলের মুল বোলার ওকে ব্যাক করো?’ কারণ ঐ নাসুমই ব্রেকটা পরে দিয়েছে (রাজাপাকসাকে আউট করে), ততক্ষণে ম্যাচ প্রায় শেষ। তাহলে ঐ সময় কোচ কি বসে বসে কোনো প্ল্যান না করে শুধু খেলা দেখেছে? আবারও বলছি, সিদ্ধান্ত রিয়াদ নেবে। কিন্তু ওকে তো হেল্প করতে হবে! কারণ মাঠে ক্যাপ্টেন কখনও কখনও অসহায় হয়ে পড়ে। আর ঠিক তখনই টিম ম্যানেজমেন্টকে টেক অফ করতে হয়। অন্যান্য দলে তো তা-ই দেখি।
Leave a reply