অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় কি সব দোষ সাকিবদের!

|

শ্রীলংকার ৭০তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ত্রিদেশীয় নিদাহাস টুর্নামেন্টে ইতিমধ্যে সব রকমের উত্তাপই ছড়িয়েছে। বলতে গেলে ক্রিকেট বিশ্ব দেখেছে, এককালের হাসি-ঠাট্টার পাত্র ‘মিনোজ’-রা কেমন মাথা উঁচু করে হাত ফসকে বেরিয়ে যাওয়া ম্যাচ সগর্বে মুঠোয় পুরে মাঠ ছাড়তে পারে। কীভাবে চোখে চোখ রেখে করতে হয় অন্যায়ের প্রতিবাদ!

বাংলাদেশ গত কয়েক বছরের নিজেদের মাটিতে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য জয় পেয়েছে। কিন্তু ক্রিকেট শুধু মাঠে ব্যাট-বলের খেলা নয়। ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্যাপ্টেন হিসেবে বিবেচিত ইমরান খান বলেছিলেন, ক্রিকেট অনেক বেশি মনস্তাত্ত্বিক খেলা।

সর্বশেষ ম্যাচে সেই মনস্তত্ত্বে পরিপূর্ণ একটি ক্রিকেট দল উঠতে দেখা গেছে টাইগারদের।

এ জন্যই কী ক্রিকেট বিশ্বে টাইগারদে ‘মিনোজ’ ট্রিট করা ‘যোগী’-রা মধ্যযুগের বেনিয়াদের মতো ভদ্রতা বিষয়ক বুলির ফেরি নিয়ে এসেছেন? নাকি ক্রিকেট বিশ্ব অতীতের ঘটনা ভুলে গেছে!

গাভাস্কার, রানাতুঙ্গারা কী করেছিলেন- তা হয়তো অনেকেরই মনে আছে। তবে নতুন প্রজন্মের মধ্যে তখনও জন্ম হয়নি কিংবা হলেও বোঝার বয়স হয়নি, তারা ইউটিউবের যুগে একেবারে ভিডিওসহ হাতে নাতে প্রমাণ পাবেন। আর যারা ভুলে গেছেন তারাও দেখে নিতে পারেন।

কিন্তু নানাভাবে ফেনিয়ে তারা বলতে চাইছেন, আরে অন্যায়কে ওভাবে অন্যায় বলতে নেই। আইন-কানুন, সংস্থা, কোর্ট-কাচারি কত কিছু আছে। তা না হয় আছে, মানলাম।

যা ঘটেছে সে বিষয়ে অনুসন্ধান করে ম্যাচ রেফারি ইতিমধ্যে বাংলাদেশের দুই খেলোয়াড়কে শাস্তি দিয়েছেন, একেবারে আইন কানুন মেনেই সে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। সাকিব ও নুরুল হাসানকে একটি নেতিবাচক পয়েন্ট দেওয়াসহ তাদের ম্যাচ ফি’র ২৫ শতাংশ জরিমানা বাবদ কেটে নেওয়া হয়েছে।

তারপরও বিষয়টাকে অন্যায়ের প্রতিবাদ হিসেবে না দেখে অত মাখাচ্ছ কেন?

এরপর আবার নাগিন নাচ নিয়ে কথা উঠেছে। প্রথমেই আসি নাগিন নাচ নিয়ে। এ নাচটি ছিল মূলত বাংলাদেশি একজন ক্রিকেটারের ব্যক্তিগত উদযাপন ভঙ্গি ছিল। সেটিকে এই শ্রীলংকানরাই সিলেটের মাঠে ব্যবহার করেছিলেন বাংলাদেশ দলকে উপহাস করতে। এমনকি গত ম্যাচে সাকিবকে আউট করার পর বোলারও এই নাচটিই নেচেছিলেন। তো জয়ে পর বাংলাদেশ দলে এই নাচে যত দোষ হয়ে গেল!

না কি এর আগে কেউ ক্রিকেট মাঠে সাফল্য উদযাপন করতে নাচেনি। গ্যাংনাম নৃত্যের কথা মনে আছে। তখন পুরো বিশ্ব এই নাচে মেতে উঠেছিল। গেইলের মতো শান্ত স্বভাবের ব্যক্তিও মাঠে সাফল্য লাভের পর এই নাচ দিতেন। পুরো ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল টি২০ বিশ্বকাপ জিতে এই নাচ দিয়েছিল। তাতে কিছু হয়নি! কিন্তু নানা-রকম কায়দা করে অনেকেই বলছেন, আচ্ছা বাপু না হয় বাচ্চারা (ক্রিকেটাররা) উত্তেজনার বশে অমন নাচ দিয়েই ফেলেছে, তাই বলে বুড়োরাও (দলে কর্মকর্তা)। এমন একচোখা কথায় হতবাক না হয়ে পারা যায় কি?

ড্রেসিং রুমের ভাঙা কাঁচ নিয়েও চলছে নানা দায় আরোপের চেষ্টা। যদি বাংলাদেশ দলের দোষ থাকে তবে প্রমাণ হাজির করা সবচেয়ে যৌক্তিক বিষয় নয় কী ? হ্যাঁ, টাইগারদের ভবিষ্যতে এ ধরনে বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক থাকা উচিত- এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু ম্যাচ রেফারি যেখানে যথাযথ প্রমাণ না থাকায় বিষয়টি বাতিল করে দিয়েছেন, সেখানে এ নিয়ে হৈ চৈ করা কি ভদ্দরনোকদের মানায়? নাকি অযথা দোষ চাপিয়ে তাদের কথিত ‘মিনোজ’-দের যদি আরও কিছুদিন চাপের রাখা যায়!

বাংলাদেশ দলে বিরুদ্ধে এত অভিযোগ। অথচ লংকান কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল ম্যাচের আগে নিজ দেশের কোচ হাথুরুর সাথে দীর্ঘক্ষণ কী নিয়ে আলাপ করেছিলেন? সে নিয়ে তো বাংলাদেশ কোনো অভদ্র আচরণ করেনি! যদি কিছু করেও থাকে, তবে সেটা পুরোপুরি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে করেছে।

আর এই নিদাহাস ট্রফি খেলতে গিয়ে বাংলাদেশ দল প্র্যাকটিসের জন্য প্রস্তুত উইকেটও ঠিক পায়নি, একটু খোঁজ নিয়ে দেখুন। এ নিয়েও বাংলাদেশ দল ঘটা করে সবার কাছে অভিযোগে ঝাঁপি খুলে বসেনি। টুর্নামেন্টে শেষে যথারীতি নিয়ম অনুসারে এ নিয়ে হয়তো টাইগাররা তাদের প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেবে।

অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় টাইগারদের সব দোষ হয়ে গেল? আরও সুনির্দিষ্টভাবে বললে সব দোষ কী সাকিবের?

ইতিহাসের ভাঙ্গা-গড়ায় কোনোদিন কাউকে অযথা কিংবা অন্যায়ভাবে দাবিয়ে রাখা যায়। ডেভিডও গোলিয়েথকে হারিয়ে ছিল। এই ‘মিনোজ’ টাইগাররা একদিন সব্যচারী শিকারী হবে, ইতিমধ্যে সেই ঝলক দেখেছে পুরো বিশ্ব।

যমুনা অনলাইন: এফএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply