একজন শিক্ষক দিয়েই ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির সকল বিষয়ের পাঠদান চলছে, তিনি আবার পালন করছেন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব, সামলাচ্ছেন অফিসের সব কাজ, আবার তিনিই পালন করছেন বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরীর দায়িত্বও। এমন চিত্র দেখা গেলো সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের এক বিদ্যালয়ে।
জয়ন্ত শেখর রায়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। এমন দায়িত্ব ভারই শুধু নয়, সামলাতে হচ্ছে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সব শ্রেণির পাঠদানও। কোনো সহকর্মী না থাকায় একাই চালিয়ে নিচ্ছেন পাঠদানের কাজ।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত শেখর রায় বলেন, ক্লাস নিয়ে পরবর্তীতে ব্যক্তিগত জীবন সামলে নিতে আমার খুবই সমস্যা হয়। মাঝাে মাঝে তো অমানবিকও মনে হয়। ক্লান্ত হয়ে যাই। স্কুলের বাচ্চাদের যতটুকু দিতে হয়, একা কাজ করার কারণে যথাযথ দিতে পারছি না।
স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদ খালি তিন বছর হলো। নেই সহকারী প্রধান শিক্ষকও। দিনের পর দিন বন্ধ রাখতে হচ্ছে শ্রেণিকক্ষ। নেই অফিসের অন্য কর্মচারী। দাপ্তরিক কাজও করতে হয় জয়ন্ত শেখরকে। মাঝেমধ্যে রাতেও দিতে হয় পাহারা। এমন পরিস্থিতিতে বেশ চিন্তিত শিক্ষক জয়ন্ত। বললেন, ক্লান্ত হলেও বিবেক বোধেই এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন প্রতিষ্ঠানটিকে।
জয়ন্ত শেখর রায় জানান, একা কাজ করলেও মন থেকেই করি। কারণ বিদ্যালয়টির পুরো দায়দায়িত্ব আমার ওপরে। তো এখানে যদি কোনো একটা অঘটন ঘটে যায় তাহলে সেটির দায় আমি এড়াতে পারি না।
উপজেলার একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠানের এমন পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় শিক্ষার্থীরা। ফলাফল নিয়ে হতাশার পাশাপাশি দায়িত্বশীলদের ওপর ক্ষুব্ধ অভিভাবকরাও।
শিক্ষার্থীরা জানান, উৎসাহ নিয়ে বিদ্যালয়ে আসলেও শিক্ষকের অভাবে ক্লাস হয় না। আর ক্লাস কম হওয়ায় বিদ্যালয়টি ভালো ফলাফল করতে পারছে না। অভিভাবকরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রতি এ সমস্যার সমাধানের দাবি জানিয়েছেন ।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানালেন, বিদ্যালয়টির এমন সংকটময় পরিস্থিতির কথা বেশ কয়েকবার জানানো হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে। তবে কোনো সুরাহা হয়নি। যেহেতু শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়াটি পিএসসির ওপর নির্ভরশীল সেহেতু এখানে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার ক্ষমতা অধিদফতরের নেই। তাই দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত সরকারি বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে পড়ালেখা করছে সাড়ে তিনশ জন শিক্ষার্থী।
Leave a reply