আধুনিক ক্রিকেটে খেলোয়াড়দের শ্রেষ্ঠত্ব ও অমরত্ব প্রাপ্তির ময়দানের আজ লড়বে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। যে লড়াইয়ের পর হয়তো ক্রিকেট ও জীবন নিয়ে নতুন করে ভাবতে বসবেন নাটকের শেষ অঙ্কের কুশিলবরা।
দুই বছর আগেই জিমি নিশাম জানিয়েছিলে, ক্রিকেটার যদি না হতেন তবে কতোই না ভালো হতো! লর্ডসে বিশ্বকাপ ফাইনাল হেরে মন ভেঙে গিয়েছিল এই কিউই অলরাউন্ডারের। বলেছিলেন, ক্রিকেটার না হয়ে বেকিং শেখাও ভালো। তাতে অন্তত জীবনের শেষদিকে আনন্দ ও তৃপ্তি লাভ হতো অনেক সহজ। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, যখন ক্রিকেটটা একদমই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন নিশাম। ফাইনাল হারের বেদনার সাথে লড়তে লড়তে ক্রিকেট ছেড়ে দেয়ার এই চিন্তা অনেক ক্রিকেটারের জীবনেরই এক অমোঘ বাস্তবতা।
এক বছর আগেই অজি কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার হেরেছেন ঘরের মাঠে একের পর এক টেস্ট সিরিজ। টানা পাঁচটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারের পর ল্যাঙ্গারের কোচিং পদ্ধতি নিয়েও শুরু হয় কানাঘুষা। ল্যাঙ্গারের প্রতি আস্থাহীনতাকে গোপন করতে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকেও বেশ চেষ্টা-চরিত করতে হয়। আর এবার, হতাশার চোরাবালিতে ঘুরপাক খাওয়া নিশাম বা ল্যাঙ্গারের মধ্যে একজন পরবেন শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট, ক্রিকেট ইতিহাসে লাভ করবেন অমরত্ব।
তবে ক্রিকেটের আধুনিক সময়ে পরাজয়ের বেদনায় নীল হয়ে থাকার সুযোগও কম, যেখানে পরের বছরও অপেক্ষা করছে আরেকটি বিশ্বকাপ। তবে, ফাইনাল পর্যন্ত আসতে যে লম্বা স্নায়ুক্ষয়ী পথ পাড়ি দিতে হয় ক্রিকেটার-কোচদের, তাতে রানার্স আপ ট্রফি পারে না সান্ত্বনার পরশ বুলিয়ে দিতে। কারণ, হাসান আলি বা ক্রিস জর্ডানের সামনে কেউ আগামীর সম্ভাবনা নিয়ে বললে হয়তো তা পছন্দ করবেন না দুজনের কেউই।
আইসিসি ইভেন্টের ফাইনালে এ নিয়ে টানা তৃতীয়বার উঠলো নিউজিল্যান্ড। অন্যদিকে, ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ জয়ের পর আবারও কোনো বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছোতে পারলো অজিরা। সেটাও তারা করেছে নিজেদের চরিত্র অনুযায়ী। গ্রুপ পর্বে দ্বিতীয় হয়ে সেমিফাইনালে তারা পরাজিত করে আসরের সেরা দলকে, আর সেই জয়ও আসে শেষ ৪ ওভারের ঝড়ে যাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সাজানো সব সমীকরণ।
এই আসরে রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডই বলছে, টস এবার পালন করছে দারুণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এই ফাইনালে অজিদের ব্যাটিং গভীরতা নিয়ে যে সন্দেহ ছিল তা ব্যাট হাতেই দূর করে দিয়েছেন মার্কাস স্টয়নিস ও ম্যাথু ওয়েড। তবে বিপরীতে, কিউইদের বোলিংও সর্বোপরি ছিল সমীহ জাগানিয়া। পুরো আসরেই তাদের মিতব্যয়ী বোলিংয়ে ধুঁকতে হয়েছে প্রতিপক্ষকে। সবচেয়ে কম রান হওয়া বিশ্বকাপে বোলিং শক্তিই যেখানে দিনশেষে জেতায় ম্যাচ, সেখানে বোল্ট-সাউদিদের সাথে সোধি-স্যান্টনাররাই হয়তো রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
আজ দুবাইয়ে একদমই সতেজ উইকেটে হবে ফাইনাল। আইপিএল ফাইনালের পর অব্যবহৃত রাখা হয়েছিল এই উইকেট। সেমিফাইনালের উইকেটের মতো যদি হয় এর আচরণ, তবে কিছুটা বাড়তি সহায়তা পাবে অজিরা। অন্যদিকে রান ১৫০-১৬০ এর আশেপাশে হলে, ফেভারিট থেকে যাবে কিউইরা। দেখা যাক, সব সমীকরণের সাথে মাঠের লড়াইকে কারা নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসতে পারে। তাতেই নির্ধারিত হবে শ্রেষ্ঠত্ব ও অমরত্বের আসন।
Leave a reply