কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ সাহা হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া ছয়জনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে চারজনের নাম ও পরিচয় পাওয়া গেছে। এই চারজনই হত্যা মামলাটির এজাহারভুক্ত আসামি। বাকি দু’জনের মধ্যে একজনের নাম ও একজনের জেলার তথ্য পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও গ্রেফতার হওয়া আসামিদের দেয়া তথ্য থেকে হত্যায় অংশ নেয়া ব্যক্তিদের নাম ও পরিচয় শনাক্ত করা হয়। এ ছাড়া ২৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে পুলিশ। পুলিশের দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হত্যাযজ্ঞে অংশ নেন শাহআলম, সাজন, মো. সাব্বির হোসেন, সোহেল ওরফে জেল সোহেল, নাজিম ও ফেনী থেকে আগত অজ্ঞাতপরিচয়ের এক আসামি। এই ছয়জনই পলাতক।
হত্যায় অংশ নেয়া ব্যক্তিদের মধ্যে শাহ আলম (২৮) কুমিল্লা নগরের সুজানগর পূর্বপাড়া বউবাজার এলাকার প্রয়াত জানু মিয়ার ছেলে, সাজন (৩২) সংরাইশ রহিম ডাক্তারের গলির বাসিন্দা কাঞ্চন মিয়ার ছেলে, মো. সাব্বির হোসেন (২৮) সুজানগর পানির ট্যাংক সংলগ্ন এলাকার রফিক মিয়ার ছেলে, সোহেল ওরফে জেল সোহেল (২৮) নবগ্রাম এলাকার শাহআলমের ছেলে। এ ছাড়া নাজিম নামের এক ব্যক্তি ও ফেনীর অজ্ঞাতপরিচয়ের এক ব্যক্তি রয়েছেন। এই দু’জন ছাড়া অপর চারজন এজাহারনামীয় আসামি।
গতকাল রোববার (২৮ নভেম্বর) রাত পৌনে ১২টার দিকে কুমিল্লার দেবীদ্বার থেকে গ্রেফতার হওয়া সন্দেহভাজন আসামি মোহাম্মদ রাব্বী ইসলাম ওরফে অন্তু অটোরিকশা ভাড়া করে দেন হত্যাকারীদের। আজ সোমবার (২৯ নভেম্বর) কুমিল্লার আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ তথ্য জানান মোহাম্মদ রাব্বি ইসলাম।
এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে ২৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও এবং একটি ছবি পাঠানো হয়। ২৮ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, দৌড়ে ফাঁকা গুলি ছুড়তে দুই কাউন্সিলর সোহেলের থ্রি স্টার এন্টারপ্রাইজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের দিকে প্রবেশ করছেন। ব্যস্ততম সড়কটি গুলিবর্ষণের কারণে ফাঁকা। এরপর ফুটেজে দেখা যায় দু’জন বেরিয়ে যান। পেছনের ব্যক্তি গুলি করে সড়ক ধরে পূর্বদিকে চলে যাচ্ছেন।
ছবিতে দেখা যায় কালো পোশাক, মাথায় কালো কাপড় বাঁধা ও কালো মুখোশ পরা দুই ব্যক্তির হাতে পিস্তল। এতে পিস্তল হাতে প্রথমে শাহ আলম ও তার পেছনে নাজিমকে দেখা যাচ্ছে। এর পেছনে পাথুরিয়াপাড়া রথ সড়কের বিদ্যুতের খাম্বার কাছে কালো পোশাকধারী আরও তিনজনকে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে।
জানা যায়, ঘটনার পরপরই কুমিল্লা জেলা পুলিশ, অ্যান্টি–টেররিজম ইউনিট ও ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের বিশেষজ্ঞ দল ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটনে ও আসামিদের গ্রেফতারে কাজ শুরু করে। ২৫ নভেম্বর এজাহারভুক্ত আসামি মাসুমকে গ্রেফতার ও ২৮ নভেম্বর রাতে সন্দেহভাজন অজ্ঞাতপরিচয়ের আসামি মোহাম্মদ রাব্বি ইসলাম ওরফে অন্তুকে গ্রেফতারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের নাম ও পরিচয় প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এখন তাদের গ্রেফতার ও ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের জন্য কাজ করছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত ২২ নভেম্বর বিকেল সাড়ে চারটায় কুমিল্লা নগরের পাথুরিয়াপাড়া থ্রি স্টার এন্টারপ্রাইজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য মো. সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ সাহাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় আরও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় ২৩ নভেম্বর রাতে ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৮–১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়। পুলিশ ও র্যাব এ পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে।
Leave a reply