মোদির মতো চা বিক্রেতার ছেলে, পিওন থেকে বলিউডে সফল

|

ধর্মেশ ইয়েলান্দে। ছবি: সংগৃহীত

ধর্মেশ ইয়েলান্দে। পেশায় নর্তক, নৃত্য পরিচালক ও অভিনেতা। বলিউডের অনেক নায়ক-নায়িকার ‘ধর্মেশ স্যার’। সেও এক চা বিক্রেতার সন্তান, যিনি বিখ্যাত হয়েছেন। মাঝপথে পড়াশোনা ছাড়তে হয়েছিল। তবে ব্যর্থ হননি। বরং নিজ ক্ষেত্রে শীর্ষে পৌঁছেছেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ধর্মেশের পিতার পেশা একই হলেও দুইজনের মধ্যে পেশাগত কোনও মিল নেই। ভারতের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে এই তথ্য।

বলিউডের গানের দৃশ্যের নেপথ্যে থাকা নাচিয়েদের একজন হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ধর্মেশ। আর এখন ৫টি সিনেমায় মূল চরিত্রে অভিনয় করে ফেলেছেন তিনি। একটি ছবিতে আবার তার সহ-অভিনেতা ছিলেন বরুণ ধবন ও শ্রদ্ধা কাপুর।

বলিউড পরিচালক ফারাহ খান প্রথম জীবনে নৃত্য পরিচালক ছিলেন। সেখান থেকেই আসেন সিনেমার নির্দেশনায়। ধর্মেশকে নৃত্য পরিচালক হিসেবে কাজের সুযোগ দেন ফারাহ-ই।

ধর্মেশ ইয়েলান্দে ও ফারাহ খান । ছবি: সংগৃহীত

তার পর থেকে বিভিন্ন নাচের রিয়্যালিটি শোয়ের নৃত্যগুরু হিসেবে কাজ করেছেন ধর্মেশ। যদিও এখন তার ডাক পড়ে বিশেষজ্ঞ বিচারক হিসেবে। বলিউডের প্রথম সারির তারকা, নৃত্য পরিচালকদের সঙ্গে পাশাপাশি একমঞ্চে বসেন ধর্মেশ।

তবে এই জায়গায় পৌঁছতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। মাঝপথে পড়াশোনা ছাড়তে হয়েছে। বাবার চায়ের দোকানে কাজ করতে হয়েছে। এক সময় পিওনের চাকরিও করেছেন ধর্মেশ।

ধর্মেশের ছোটবেলা কেটেছে অর্থকষ্টে। বাবার স্থায়ী চায়ের দোকান ছিল। কিন্তু সেই দোকানও ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল স্থানীয় পৌরসভা। বাধ্য হয়েই চায়ের একটি অস্থায়ী স্টল খোলেন ধর্মেশের বাবা। সেই দোকান থেকে দিনে ৫০-৬০ রুপি আয় হতো। সেখানেই বাবাকে সাহায্য করতেন ধর্মেশ।

পরিবারে ছিল চার সদস্য। ওই টাকায় তাদের দৈনিক খরচ চালানো কষ্টসাধ্য। তবু তিলে তিলে পয়সা জমিয়ে সন্তানদের পড়ার খরচ চালানোর চেষ্টা করেন ধর্মেশের বাবা।

ধর্মেশ ছোট থেকেই নাচের ভক্ত। টিভির সামনে বসে বলিউড অভিনেতা গোবিন্দার নাচ দেখতেন। তাকে নকল করে নাচতেন রাস্তায় নেমে। ছোট্ট বাড়ির অল্প পরিসরে হাত-পা ছুড়ে নাচার জায়গা ছিল না।

ধর্মেশ যখন ক্লাস সিক্সের ছাত্র, তখন একটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। জিতেও যান। ছেলের নাচে আগ্রহ দেখে অভাবী সংসারেও ধর্মেশকে নাচের ক্লাসে ভর্তি করান বাবা। তবে নাচতে গিয়ে পড়াশোনার ক্ষতি করে ফেলেন। ধর্মেমের বয়স তখন ১৯। কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। তখন পরীক্ষায় নম্বর খারাপ হওয়ায় পড়াশোনা ছেড়ে দেন। এরপর পিওনের কাজ নেন।

ওই সময়েই ছোটদের নাচ শেখাতেও শুরু করেন ধর্মেশ। তখন তার আয় মাসে ১ হাজার ৬০০ রুপি। তবে ওই টাকা সংসারে দিয়ে নিজের খরচ চালাতে পারছিলেন না। ধর্মেশ ঠিক করেন নাচকেই পেশা করবেন। পিওনের কাজ ছেড়ে বিভিন্ন ছবির সেটে নাচিয়েদের দলে কাজ করতে শুরু করেন।

তবে কপাল ফেরে নাচের একটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের পর। টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এই নাচের প্রতিযোগিতা জেতেন ধর্মেশ। পুরস্কার হিসেবে পাওয়া ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে বাবার ঋণ শোধ করেন।

আর সিনেমায় অভিনয়ের স্বপ্নও দেখতে শুরু করেন ধর্মেশ। বাড়ি ছেড়ে মুম্বাইয়ে থাকতে শুরু করেন। কিন্তু দুই বছরে কোনও সুযোগ আসেনি। মাঝখান থেকে টাকাও শেষ হয়ে যায়। বাধ্য হয়েই বাড়ি ফিরে আসেন।

মাস খানেক পর পরিস্থিতি বদলায়। ‘ডান্স ইন্ডিয়া ডান্স’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান ধর্মেশ। প্রতিযোগিতায় না জিতলেও তার নৃত্য পরিকল্পনা নজরে পড়ে। সিনেমায় নৃত্য পরিচালক হিসেবে কাজের সুযোগ আসতে শুরু করে। বিভিন্ন নাচের রিয়্যালিটি শোয়েও অতিথি হিসেবে হাজির থাকার প্রস্তাব আসতে থাকে।

তবে সিনেমার মূল চরিত্রে অভিনয়ের স্বপ্নপূরণ হয় আরও কয়েক বছর পর। ‘এনিবডি ক্যান ডান্স’ ছবিতে তাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন রেমো ডিসুজা। ছবিটি বক্সঅফিসে দারুণ সফল হয়। ওই ছবি থেকে পাওয়া টাকায় পরিবারের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করে একটি বাড়ি কেনেন ধর্মেশ।

বর্তমানে ৩৭ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক ধর্মেশ। বার্ষিক আয় ৩ কোটি টাকা। কিন্তু তা সত্ত্বেও পুরনো চায়ের ব্যবসা এখনও ছাড়েননি ধর্মেশের বাবা।

ধর্মেশ জানিয়েছেন, বাবাকে অনেকবার কাজ বন্ধ করতে বলেছেন তিনি। কিন্তু রাজি হননি। আসলে শিকড়কে ভুলে যেতে চাননি।

এখন গোটা ভারত ধর্মেশকে এক নামে চেনে। তবে ধর্মেশ জানিয়েছেন সাফল্য তার মাথা ঘুরিয়ে দেয়নি।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply