আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকাল হলেই শুরু হবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে (নাসিক) তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার ভোটযুদ্ধ। এবারের নাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও লড়াই হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার এর মধ্যে।
নারায়ণগঞ্জ শহরে চায়ের আড্ডা থেকে বাজার, সবখানেই আলোচনা রোববারের ভোট নিয়ে। তাদের প্রত্যাশা সুষ্ঠু নির্বাচন। শুধু শীতলক্ষ্যা পাড়ের বাসিন্দারা নয়, এই সিটি নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে সারাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের নেতাকর্মীরাও। সকলের মাঝেই প্রশ্ন, নারায়ণগঞ্জবাসী কী নতুনে আস্থা রাখবেন নাকি পুরাতনেই ভরসা রাখবেন।
দেশের কোনো সিটি করপোরেশনে প্রথমবারের মতো নারী মেয়র নির্বাচিত হওয়া সেলিনা হায়াৎ আইভী এবার জিতলে হ্যাটট্রিক করবেন। এটি সকলেরই জানা। বিপরীতে তৈমূর আলম খন্দকার বুড়ো বয়সে এসে চমক দিলে তা হবে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে বড় চমক। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ভোটের মাঠে তিনি খুব একটা সাফল্য দেখাতে পারেননি।
নাসিকে এবার ভোটার ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৬ জন, নারী ভোটার ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১১ জন; আর তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৪ জন। ১৯২ ভোটকেন্দ্রে ভোটকক্ষ ১ হাজার ৩৩৩টি। ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ১৪৮ জন। আর নয়টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৪ জন প্রার্থী। ভোটগ্রহণ করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)।
নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে ওসমান পারিবারের ভূমিকা বরাবরই। এবারের নির্বাচন ঘিরেও আলোচনায় ছিল ওসমানের পরিবারের সদস্যরা। সেলিম ওসমানের অনুসারী জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান তৈমূরের পক্ষে কাজ করেছেন। এছাড়া শামীম ওসমান ও আইভীর মধ্যে কথা ছোড়াছুড়ি তো ছিলই।
জানা গেছে, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আইভি ভোট দেবেন দেওভোগ শিশুবাগ স্কুল ভোটকেন্দ্রে। তিনি ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার। অন্যদিকে মাজদাইরে আদর্শ স্কুল ভোটকেন্দ্রে সকাল আটটার দিকে ভোট দেবেন তৈমূর। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার তিনি। আর শামীম ওসমান খানপুরে বার একাডেমি স্কুল ভোটকেন্দ্রে ভোট দেবেন। আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্য ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার।
প্রসঙ্গত, এই নির্বাচনে ভাতিজির বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে ভোটের আগেই বিএনপির সব কমিটি এবং বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পদসহ সংগঠনটির সব ধরনের পদ থেকে অব্যহতি পেয়েছেন তৈমূর। আইভী ও তৈমূর একে অপরকে চাচা-ভাতিজি বলে সম্বোধন করেন।
অন্যদিকে, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি পদে দায়িত্বে থাকা আইভী নিজ দলের সমর্থন পেয়েছেন বেশ। এমনকি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন আইভীকে জেতাতে কাজ করা জন্য।
নৌকা প্রতীকে আইভী, হাতি প্রতীকে তৈমূর ছাড়া মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা অন্যান্যরা হলেন খেলাফত মজলিসের এবিএম সিরাজুল মামুন (দেয়ালঘড়ি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ (হাতপাখা), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জসীম উদ্দিন (বটগাছ), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মো. রাশেদ ফেরদৌস (হাতঘড়ি) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলাম (ঘোড়া)।
২০১১ সালে নাসিকের প্রথম নির্বাচনেও আইভীর পাশাপাশি তৈমূর প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু ভোট গ্রহণের ৫ ঘণ্টা আগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তৈমূর।
এবারের নাসিক নির্বাচন পরিচালনায় রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন ঢাকা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার। এছাড়া সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ ৯ জন।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনে ১৯২টি ভোটকেন্দ্রের ভেতর ও বাইরে নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাঁচ হাজারেরও বেশি সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। নির্বাচনে ৩৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ১৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
২০১১ সালের ৫ মে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা, কদম রসুল পৌরসভা ও সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভাকে বিলুপ্ত করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন গঠনের গেজেট প্রকাশ করে সরকার। ওই বছরের ৩০ অক্টোবর নাসিকের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমানকে এক লাখেরও বেশি ভোটে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আইভী। নগর মাতা হওয়ার আগে আইভী নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর নাসিকের দ্বিতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওইবার প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নেন প্রার্থীরা। ওই নির্বাচনে প্রায় ৮০ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আইভী।
উল্লেখ্য, এই সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে প্রায় ৭০ শতাংশ এবং ৬২ শতাংশ ভোট পড়ে দ্বিতীয় নির্বাচনে।
/এমএন
Leave a reply