স্টাফ রিপোর্টার, পটুয়াখালী:
দেশের ১৯টি উপকূলীয় এলাকা ঘিরে মানুষের লোভের শিকার হয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসছে। সেই বিপর্যয় বিস্তীর্ণ উপকূলকে ধ্বংস করে বাংলাদেশকে প্রাকৃতিক সংকটের মুখে ফেলেছে। যেই সংকটে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের জলবায়ু উদ্বাস্তুর হারকে ৭ গুণ বাড়িয়ে দেবে। ফলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে আরও ৩০ লাখ মানুষ বাস্তুভিটা ছেড়ে যেতে বাধ্য হবেন।
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) সাগরকন্যা কুয়াকাটায় বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘উপকূলীয় নদী সম্মেলনে’ বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।
সম্মেলনে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ৪৮ নদী সমীক্ষা প্রকল্পের পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ মো. মনির হোসেন চৌধুরী বলেন, নদী ভাঙ্গন, লবণাক্ততা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাবৃদ্ধি, যত্রতত্র অবাধে অবকাঠামো নির্মাণ, নদীগুলোতে পলিপ্রবাহে মাত্রাতিরিক্ত বাধার সৃষ্টি, বাগদা চিংড়ি চাষ করতে অবাধে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাঁধ কেটে লবণপানি ঢোকানো, যথেচ্ছা মৎস্যশিকার, মাটির উর্বর শক্তি হৃাস দেশের উপকূলের মানুষ গুলোকে নিঃস্ব করে তুলছে।
তিনি বলেন, এসব কারণে মানুষ ঘর-বাড়ি, জমি হারিয়ে বাঁচার তাগিদে জন্মভিটার মায়া ছেড়ে শহরমুখী হতে বাধ্য হচ্ছেন। গণহারে বন ধ্বংস ও মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে জমাট বরফ গলতে শুরু করেছে। সেই বরফগলা পানি মিশে ধীরে ধীরে সাগরের উচ্চতা বাড়ছে। যা বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মতো সাগর তীরবর্তী দেশগুলোকে বিপদে ফেলে দিয়েছে।
বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, এখনও সময় শেষ হয়ে যায়নি। এখনই নদ-নদী রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার সময়। আমাদের উপকূলের মানুষগুলোকে বাঁচাতে হবে। রক্ষা করতে হবে আমাদের বিস্তীর্ণ উপকূল।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, দেশে চার ধরণের নদী রয়েছে। সেখানে দুই ধরণের নদী হলো উপকূলীয় নদী ও পাহাড়ি নদী। উপকূলীয় নদীর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ হলেও নির্বিচারে চিংড়িঘেরের কারণে সেই নদীকেই ধ্বংস করা হচ্ছে। উপকূলীয় নদী হলো সামুদ্রিক জীব- বৈচিত্রের প্রজনন ক্ষেত্র।
জীবন ও প্রকৃতি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, শুধু মাছ নয়, পাখিরও আধার হলো এই উপকূল। এই উপকূলই পাখিদের বিচরণ ভূমি। তিনি বলেন, উপকূল ভালো রাখতে হলে একসাথে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। তার মতে, প্রত্যেক মানুষেরই কিছু না কিছু ক্ষমতা আছে। সেই ক্ষমতার সাথে কিছুটা মমতা মিশিয়ে কাজ করলেই দেশটা ভালো থাকবে। নতুন প্রজন্মকে পরিবেশ রক্ষায় মেসেজ পৌঁছে দিতে হবে।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বলেন, বাংলাদেশ সরকার দেশের প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় রক্ষা করতে অত্যন্ত আন্তরিক। সরকার ২০৩০ সালকে সামনে রেখে কাজ করছে। বর্তমান সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আগামী ১০০ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন। তার মতে, সরকার পরিবেশ রক্ষায় এতো বেশি আন্তরিক যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নিজের দলের নেতা-কর্মীদেরও কখনও ছাড় দেন না।
‘বাঁচাও উপকূল, ফেরাও সম্ভাবনা’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে উপকূলীয় নদী সম্মেলনটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ৪৮ নদী সমীক্ষা প্রকল্প, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন, ওয়াটারকিপারস বাংলাদেশ, বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস জয়েন্ট কো-অপারেশন প্রোগ্রাম, রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি), পরিবেশ ও নদী রক্ষা ফাউন্ডেশন ও গ্রিন প্ল্যানেট।
শনিবার দিনভর চলা উপকূলীয় নদী সম্মেলনের উদ্বোধনী ও একাডেমিক সেশনে পরিবেশ রক্ষায় আগামী ১০০ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ নিয়ে বিষদ আলোচনা করেন ৫ জনের বিশেষজ্ঞ প্যানেল।
এনবি/
Leave a reply