২ মাসে হৃদরোগে আক্রান্ত ৬ ফুটবলার, মাঠে কেন বাড়ছে মৃত্যু?

|

ছবি: সংগৃহীত

সবশেষ ২ মাসে মাঠেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ ফুটবলার। এরমধ্যে গত বছর ডিসেম্বরের শেষ দিকে এক সপ্তাহের মধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে চার ফুটবলারের হার্ট অ্যাটাকের খবর পাওয়া গেছে। আর চলতি বছরে মাঠেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন আরও দুই ফুটবলার। শুধু এই মরণঘাতি রোগের জন্য আগুয়েরো-এরিকসেনের মতো ফুটবলারদের ক্যারিয়ার হয়ে গেছে সংক্ষিপ্ত। তাই প্রশ্ন উঠেছে, ফুটবল মাঠে কেন বাড়ছে খেলোয়াড়দের মৃত্যু?

গেল বছর সর্বপ্রথম হার্ট অ্যাটাকে মারা যান ২৩ বছর বয়সী ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলার মারিন চাচিচ। তার একদিন পর ওমানে ম্যাচে নামার আগে গা গরমের সময়েই মাঠে পড়ে যান মাসকাট এফসির মুখালেদ আল-রাকাদি। পরে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি এই ফুটবলারকে। এরপর মিসরের তৃতীয় বিভাগ দলের গোলকিপার আহমেদ আমিন দলের অনুশীলনে অসুস্থ হয়ে পড়েন; হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও বাঁচানো যায়নি তাকে। তার দুই দিন পর আসে ৩০ বছর বয়সী আলজেরিয়ান ফুটবলার সোফিয়ান লুকারের মৃত্যুসংবাদ।

এরিকসেনের অসুস্থতায় কেঁপে উঠেছিল ফুটবল বিশ্ব। ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের জানুয়ারিতে সেই তালিকায় যোগ হয় আলফি নানের নাম। সর্বশেষ গ্রিসের তৃতীয় বিভাগের দল লিউপুলির মিডফিল্ডার আলেকসান্দ্রোস লাম্পিস পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। এরমিওনিদার বিপক্ষে ম্যাচের ৫ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হন লাম্পিস। হাসপাতালে নেয়া হলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি প্রতিভাবান এই মিডফিল্ডারকে।

ছবি: সংগৃহীত

এর আগে ইউরোতে খেলা চলাকালীন হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন ডেনিশ ফুটবলার এরিকসেন। পরে যথা সময়ে চিকিৎসার কারণে সে যাত্রায় বেঁচে ফেরেন এই ফুটবলার। আর একই সমস্যার কারণে বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার সার্জিও আগুয়েরো অবসর নেন ফুটবল থেকে।

তাই অবধারিতভাবে প্রশ্ন এসেছে, সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবলে অনিঃশেষ চাপের কারণেই কি ভেঙে পড়ছেন ফুটবলাররা? মানসিক চাপের সাথে শরীরও কি তাল মেলাতে পারছে না? তবে এই ঘটনাগুলোকে নেহাতই কাকতালীয় বলেছেন ইনস্টিটিউট অব স্পোর্ট, এক্সারসাইজ অ্যান্ড হেলথের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর গুইদো পিয়েলেস। ফুটবলারদের হার্ট অ্যাটাকের ঘটনার প্রাবল্য বেড়ে যাওয়ার পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে না পেয়ে ঘটনাওগুলোকে কাকতালীয় বলেছেন তিনি।

ছবি: সংগৃহীত

স্পোর্টস মেইলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে প্রফেসর পিয়েলেস বলেছেন, এ মুহূর্তে এটাকে কাকতালীয়ই বলবো আমি। মনে হয় না, এটা হঠাৎ করেই বেড়েছে। শুধু ফুটবলেই এমনটা ঘটছে, সেটাও মনে হয় না আমার। কারণ, অ্যাথলেটদের মধ্যে ফুটবলাররাই সবচেয়ে বেশি সময় ধরে কঠোর পরিশ্রমের অনুশীলন করতে হয়, তেমনটা না। সাইক্লিস্ট ও দৌড়বিদদের পরিশ্রমের প্রাবল্য আরও বেশি। গত দুই বছরে ফুটবলারদের পরিশ্রম বাড়েনি, বেড়েছে গত ১০ বছরে। ফুটবলের গতি বেড়েছে যেমন সত্য, তেমনি মনে রাখতে হবে ফুটবলারদের ফিটনেস ধরে রাখার জন্য সচেতনতাও বেড়েছে অনেক বেশি।

আরও পড়ুন: অশ্রুসজল চোখে ফুটবলকে বিদায় জানালেন আগুয়েরো

ফুটবলারদের নিয়মিত ভিত্তিতে হৃদযন্ত্রের পরীক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন প্রফেসর পিয়েলেস। বলেছেন, ১৬-১৬ বছর বয়সী ফুটবলারদের হৃদযন্ত্রের পরীক্ষা করানো উচিত। কারণ, এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে ১৬-১৮ বছর বয়সীরাই থাকেন সবচেয়ে ঝুঁকিতে। তবে আমি বিশ্বাস করি, আরও বেশি হওয়া উচিত এই পরীক্ষা। হৃদস্পন্দন প্রত্যক্ষ করার জন্য ফুটবলাররা বছরে একবার ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম ব্যবহার করেন। কিন্তু এটাই পর্যাপ্ত নয়। এই পরীক্ষার জন্য বয়স নির্ধারণও জরুরি।

আরও পড়ুন: ক্যান্সারে আক্রান্ত ক্রিস কেয়ার্নস


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply