ওয়েব সিরিজ দেখে অনুপ্রাণিত! বহুতল ভবনের ১১ তলা থেকে লাফ দিয়ে প্রাণ গেলো বিরাজ পাচিশিয়া নামে এক কিশোরের। শনিবার ভারতের কলকাতায় একটি অভিজাত আবাসনে এ ঘটনাটি ঘটেছে। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
খবরে বলা হয়, আবাসনের সুইমিং পুলের পাশ থেকে ওই কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা, একটি জাপানি ওয়েব সিরিজ দেখার পরই বহুতলের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়েছে ওই কিশোর।
ফুলবাগানের ক্যানাল সার্কুলার রোডের বাসিন্দা বিরাজ। পার্ক সার্কাসের একটি স্কুলের ছাত্র সে। সরস্বতী পূজা নিয়ে বাড়িতে যখন সবাই ব্যস্ত, তখন সকলের নজর এড়িয়ে ছাদে চলে যায় বিরাজ। এর কিছুক্ষণ পরেই আওয়াজ পেয়ে সুইমিং পুলের কাছে ছুটে গিয়ে নিরাপত্তারক্ষীরা দেখেন, বিরাজের রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে মাটিতে। সাথে সাথেই পুলিশে খবর দেয়া হয়।
পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, অনলাইন ক্লাসের জন্য ইলেকট্রনিক গ্যাজেট কিনে দেয়া হয়েছিল বিরাজকে। ওই গ্যাজেট নিয়েই সারা দিন থাকতো সে। গ্যাজেটটি উদ্ধার করে একটি জাপানি ওয়েব সিরিজ সম্পর্কে জানতে পারে পুলিশ। পুলিশের অনুমান, ‘প্ল্যাটিনাম অ্যান্ড’ নামক ওই জাপানি সিরিজ দেখেই ছাদ থেকে ঝাঁপ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিরাজ।
ফুলবাগান থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ওই সিরিজে দেখানো হয়েছে, কিশোর নায়ক ছাদ থেকে ঝাঁপ দেয় এবং তাকে বাঁচায় এক ‘দেবদূত’। এর পরেই ওই কিশোর ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারী হয়। এই গল্প দেখেই হয়তো ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়েছে বিরাজ।
অতীতেও দেখা গিয়েছে, ব্লু হোয়েল, পাবজির মতো মোবাইল গেম খেলায় মত্ত হয়ে প্রাণ গিয়েছে বহু শিশুর। ইদানীং শিশুদের মধ্যে আচরণগত নেশা বাড়ছে বলে জানান মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রঞ্জন ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, সিগারেট, মদ্যপানের মতো বা কেমিক্যাল নেশার মতোই আচরণগত নেশা হয়ে থাকে। মোবাইলে গেম খেলা বা কোনো ছবি-সিরিজ বা সিরিয়াল দেখার নেশা এই পর্যায়ে পড়ে। অতিমারি-পর্বে দেখা গিয়েছে, অনলাইন ক্লাস চলাকালীন আলাদা উইন্ডো খুলে অন্য কাজ করছে বাচ্চারা। আগে বাচ্চারা মাঠে খেলাধুলো করতো, এখন মোবাইলে গেম খেলে। বাচ্চারাও নিজেদের প্রমাণ করতে চায়, ওদের মধ্যেও পারিপার্শ্বিক চাপ থাকে। এসব থেকেই ওরা ঝুঁকি নেয়।
বাবা-মায়েদের উদ্দেশে তার পরামর্শ, অনলাইন ক্লাস এবং শিশুদের মোবাইল ব্যবহার নিয়ে অভিভাবকদের আরও সজাগ হতে হবে। সন্তান মোবাইল নিয়ে কী করছে, না-করছে, মাঝে মাঝে একটু দেখে নেয়া জরুরি। সন্তানের ডিজিটাল ডিটক্স অত্যন্ত জরুরি। এর জন্য মা-বাবার উচিত সন্তানকে আরও সময় দেয়া। তাদের সাথে গল্প করা। বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে খেলাধুলো বন্ধই হয়ে গিয়েছে। তাই মাঝে মধ্যে শিশুদের বাড়ির বাইরে নিয়ে যাওয়াও জরুরি। তবে নজর রাখার নামে শিশুর ওপর গোয়েন্দাগিরি করা একেবারেই উচিত হবে না।
ইউএইচ/
Leave a reply