ঝিনাইদহের প্রমত্তা চিত্রা নদী দখল করে পুকুর-ভবন

|

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:

অযত্নে অবহেলায় মাত্র কয়েক দশকের ব্যবধানে একসময়ের প্রমত্তা চিত্রা নদী আজ ভরাট হয়ে গেছে। অবৈধ দখলদারদের দখলের প্রতিযোগিতায় নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে বিশাল বিশাল স্থাপনা, পুকুর, ও বাজার। ঝিনাইদহ জেলার অংশের ৪৩ কিলোমিটারের অনেকটায় আজ দখলে চলে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দখলদারদের তালিকা তৈরি হলেও করোনার কারণে উচ্ছেদ কার্যক্রমে বিলম্ব হচ্ছে।

ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ১৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীটি ঝিনাইদহ অংশে রয়েছে প্রায় ৪৩ কিলোমিটার। চিত্রা ঝিনাইদহ জেলার একটি ঐতিহ্যবাহি নদী। জেলার দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নদীটি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কালীগঞ্জ শহরের কালীবাড়ি এলাকায় নদীর মধ্যে বিশাল বড় পুকুর। পুকুরটির মালিক তরিকুল ইসলামের দাবি, এটি তার জমির অন্তর্গত। অন্যদিকে নিশ্চিন্তপুর এলাকার নদীর মধ্যে একটি ঈদগাহও নির্মাণ করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম জানান, এই স্থানে মাত্র ১৫ থেকে ২০ বছর পূর্বেও নদীর প্রবল স্রোত ছিল। এক সময় নদীতে লঞ্চ-স্টিমার চলতো। তবে এখন পাড়ে আরও গড়ে উঠেছে গান্না, চাপরাইল, মঙ্গলপোতাসহ ছোট ছোট বেশ কয়েকটি বাজার। বর্তমানে নদীটি দখল হয়ে অনেক স্থানে সংকুচিত হয়ে পড়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার সিংদহ গ্রামের মতিয়ার রহমান, ইসাহক আলী, সিরাজুল ইসলাম, লিয়াকত আলী, মিজানুর রহমান, মফিজ উদ্দিন, আফসার আলী ও মো. আব্দুলের ৮টি পুকুর আছে নদীর জায়গায়। কোটচাঁদপুর উপজেলার তালসার এলাকায় দেখা গেছে জনৈক আব্দুল মালেক নদীর মধ্যে ধান চাষ করছেন। তিনি জানান, উপরের জমির মালিক তিনি। তাই নিচের জমিও তারই দখলে। এটি নদীর জায়গা স্বীকার করে তার ভাষ্য, সবাই চাষ করছে, তাই তিনিও হেঁটেছেন সেই পথে।

আরও পড়ুন: ময়মনসিংহে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তিন ভাই-বোনের মৃত্যু

একাধিক ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোথাও ১২০ থেকে ১৫০ ফুট, আবার কোথাও ১১০ থেকে ১২০ ফুট রয়েছে কাগজে-কলমে। চিত্রা নদীর প্রস্থ ১ শত ফুটের নিচে কোথাও নেই। যা বর্তমানে ৩০ থেকে ৪০ ফুটে এসে দাঁড়িয়েছে। কোথাও কোথাও এরও নিচে চলে গেছে। দলখদাররা দখল করে নদীকে খালে পরিণত করেছে।

চিত্রা বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক শিবুপদ বিশ্বাস জানান, চিত্রায় অসংখ্য পুকুর আর ভবন রয়েছে। অথচ সরকারের দখলের তালিকায় এসেছে মাত্র ৮টি পুকুর। বর্তমানে শুরু হয়েছে ধান চাষ। এরা প্রথমে ধান চাষ করবেন, পরে বড় বড় গাছ লাগিয়ে দখল করবেন।

ঝিনাইদহ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রাজিবুল ইসলাম খান জানান, চিত্রা নদীর অবৈধ দখলদারের একটা তালিকা তৈরি হয়েছে। এগুলো উচ্ছেদের পরিকল্পনা তাদের রয়েছে, কিন্তু করোনা পরিস্থিতির জন্য এতোদিন করা সম্ভব হয়নি।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply