অবরোধ তুলে না নেয়ায় বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা

|

স্টাফ রিপোর্টার,গোপালগঞ্জ:

আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে প্রশাসনের সমঝোতা বৈঠক শেষ হয়েছে। কিন্তু এরপরও শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে না নেয়ায় বহিরাগতরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের গাড়ি এবং একটি লোকাল বাস ও একটি ট্রাক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় ৮-১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় আসামিদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া এলাকায় টানা ১১ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা।

দুপুর আড়াইটার দিকে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা, ভিসি একিউএম মাহাবুব, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে সমঝোতা বৈঠক করেন। দুপুর সোয়া ৪ টার দিকে সমঝোতা বৈঠক শেষ হলে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করে। কিন্তু সমঝোতা বৈঠক শেষ হওয়ার প্রায় একঘণ্টা পরও শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে না নিলে বহিরাগতরা তাদের ওপর হামলা করে। এতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক, ঢাকা-পিরোজপুর সড়ক, গোপালগঞ্জ-পাটগাতী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঘোনাপাড়া এলাকায় প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজু‌ড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এসব সড়ক দিয়ে চলাচলকারী বিপুল সংখ্যক নারী, পুরুষ ও শিশুরা সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন।

বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তার বন্ধুর সাথে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার নবীনবাগ নামক স্থানের হেলিপ্যাডের সামনে থেকে হেঁটে আসছিলেন। এ সময় ৭-৮ জন যুবক একটি ব্যাটারি চালিত ইজি বাইকে তাদের তুলে নিয়ে হ্যালিপ্যাডের পাশে নির্মাণাধীন গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন স্কুল ও কলেজের বারান্দায় নিয়ে ওই ছাত্রীর সাথে থাকা তার বন্ধুকে মারধর ও শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণ করে। পরে খবর পেয়ে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্ধার করে ওই ছাত্রীকে প্রথমে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান গোপালগঞ্জ সদর থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় রাতেই ধর্ষকদের গ্রেফতারের দাবিতে বশেমুরবিপ্রবি ক্যাম্পাস থেকে পায়ে হেটে বিক্ষুদ্ধ প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী গোপালগঞ্জ সদর থানায় অবস্থান করে এবং ধর্ষকদের বিচার চেয়ে ৩ দফা দাবি ও আল্টিমেটাম প্রদান করে।

পুলিশ নবীনবাগ এলাকার ছানু সিকদারের ছেলে পিয়াস সিকদার, কলোনীর কৃষ্ণ জমাদ্দারের ছেলে অন্তর জমাদ্দার ও খোকন জমাদ্দারের ছেলে জীবন জমাদ্দারকে আটক করে।

এদিকে, আল্টিমেটামে ভোর ৬ টার মধ্যে অপরাধীকে শনাক্ত এবং গ্রেফতারের দাবি জানায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। কিন্তু আল্টিমেটামের সময় শেষ হলে ধর্ষকদের গ্রেফতার ও উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে সাড়ে ৬টার পর থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়া এলাকায় অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা।

অপরদিকে, আটককৃতদের মধ্যে ২ জন হরিজন সম্প্রদায়ের হওয়ায় তাদের মুক্তির দাবিতে ওই সম্প্রদায়ের নারী পুরুষেরা গোপালগঞ্জ- পাটগাতী সড়কের গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সামনের রাস্তায় ময়লা ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করে। পরে বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে জেলা প্রশাসকের ন্যায় বিচারের আশ্বাসে
হরিজন সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ অবরোধ তুলে নেয়।

গোপালগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক(তদন্ত) শীতল চন্দ্র পাল জানিয়েছেন, এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতার করতে অভিযান চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান বলেন, এ খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিক ওই শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলেছি এবং আমি নিজে এ ঘটনায় বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় মামলা দায়ের করেছি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ এন্ড অপারেশন) নিহাদ আদনান তাহিয়ান বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে অভিযান চালানো হয়েছে। আমাদের টিম ইতিমধ্যে অভিযান শুরু করেছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা আসামিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি একিউএম মাহাবুব বলেন, এটি একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এ ঘটনার সাথে জ‌ড়িতদের  উপযুক্ত বিচার করতে হবে। যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, অপরাধী যেই হোক না কেন কাউকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। আমিও চাই এ ঘটনার সাথে জ‌ড়িতদের সর্বোচ্চ সাজা হোক।

জেলা প্রশাসক শাহিনা সুলতানা বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখছিলাম। আমি পুলিশ সুপারকে অনুরোধ করেছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এঘটনায় জ‌ড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবেন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply