ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:
হত্যা মামলার আসামির এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর কারাগার থেকে পুলিশ এই রিমান্ডের আসামিকে প্রাইভেটকারে নিয়ে আসে থানায়। সেখানে এসে থানা গেটের ভেতরে পুলিশের হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দিয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন আসামি। সেই সময় তার হাতে ছিল না হ্যান্ডকাফ। এই ভিডিও স্যোশাল মিডিয়াতে অনেকেই লাইভ করেছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানায়। আসামির নাম শফিকুল ইসলাম শিমুল। তিনি সদ্য শেষ হওয়া ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ১০নং বগুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং ঝিনাইদহ জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক। তার গ্রামের বাড়ি শৈলকুপার বড়বাড়ি বগুড়া গ্রামে। তার পিতার নাম কুবাদ আলী।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ১০ নং বগুড়া ইউনিয়নে পঞ্চম ধাপে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চার বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বিশ্বাস, ঝিনাইদহ জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক শফিকুল ইসলাম শিমুলসহ অনেকে। তবে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন শফিকুল ইসলাম শিমুল।
নির্বাচনের পর থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগে নানা বিরোধ আর দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এসবের জেরে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি প্রকাশ্য দিবালোকে পেয়াজের ক্ষেতে হাতুড়িপেটা ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় কল্লোল খন্দকার নামের এক যুবককে। সে বড়বাড়ি বগুড়া গ্রামের মৃত আকবর খন্দকারের ছেলে। এঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মিল্টন খন্দকার বাদী হয়ে ১২ জানুয়ারি ৮২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলায় নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুলকে হুকুমের আসামি করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রথম থেকেই মামলার আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অনিহাসহ বাদীর পরিবার নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দেন। তবে আফান ও সজিব নামে এই মামলার ২জন আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। আর শফিকুল ইসলাম শিমুল, নাসির বিশ্বাস, ফরিদ মুন্সি, আতিয়ার মিয়া, আখির মুন্সি নামে মামলার ৫জন আসামি চলতি মাসের ২তারিখ আত্মসমর্পণ করে।
মামলার আইও এসআই তৌফিক আসামিদের ৫দিনের রিমান্ড চায়। তবে বিজ্ঞ আদালত তাদের ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার হুকুমের আসামি শফিকুল ইসলাম শিমুলসহ ৫ জনকে ৮মার্চ সন্ধ্যায় রিমান্ডে আনা হয়।
স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, সন্ধ্যার পরপরই রিমান্ডের আসামিদের পুলিশের গাড়িতে নয় মাইক্রো ও ৩টি প্রাইভেটকারে করে আনা হয় শৈলকুপা থানাতে। এসব আসামিদের সমর্থক-কর্মীরা আগে থেকে থানার ভেতরে বাইরে ভিড় জমায়।
এক পর্যায়ে ওসি (তদন্ত) মহসীন হোসেন তার হ্যান্ডমাইক তুলে দেন রিমান্ডের আসামি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুলের হাতে। তিনি পুলিশ বক্সে দাঁড়িয়ে কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। সেই সময় তার হাতে ছিল না কোনো হ্যান্ডকাফ। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে হ্যান্ড মাইকে বক্তব্য দেন।
এদিকে রিমান্ডের আসামিদের নিয়ে পুলিশের এমন কর্মকান্ডে হতাশা আর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হত্যা মামলার বাদী নিহতের ছোট ভাই মিল্টন খন্দকার। তিনি বলেন, এমন ঘটনা নজিরবিহীন। আমরা ন্যায় বিচার পাবো বলে মনে করছি না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আস্থাহীনতার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
হত্যা মামলাটির আইও (তদন্তকারী কর্মকর্তা) এসআই তৌফিক জানান, আসামিদের কারও ব্যাক্তিগত গাড়িতে আনা হয়নি, গাড়িগুলো ভাড়া করা। আর আসামিদের হাতে হ্যান্ডকাফ না থাকা ও পুলিশের হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে বক্তব্য দেয়া প্রসঙ্গে বলেন, বিষয়টি নিয়ে ওসি তদন্ত এবং থানা পুলিশ বলতে পারে।
শৈলকুপা থানার ওসি (তদন্ত) মহসীন হোসেন জানান, ভাড়া করা গাড়িতে আসামিদের আনা হয়েছে। হ্যান্ডকাফ না লাগিয়ে থানার পুলিশ বক্সে দাঁড়িয়ে পুলিশের হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে বক্তব্য দেয়া প্রসঙ্গে বলেন, পরিস্থিতি শান্ত করতে আসামির হাতে হ্যান্ডমাইক তুলে দেয়া হয়েছে।
শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, রিমান্ডের আসামিদের হ্যান্ডকাফ ছাড়া আনা, পুলিশের হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে বক্তব্য বা কথা বলার সুযোগ দেয়ার কোনো নিয়ম নেই। তিনি জানান, ঘটনার সময় ছুটিতে তিনি ঢাকায় ছিলেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
ঝিনাইদহ জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ইসমাইল হোসেন বলেন, রিমান্ডের কোনো আসামির সাথে কখনো কখনো স্বজনরা দেখা করতে পারে, অন্য কোনো বিধান নেই ।
/এনএএস
Leave a reply