কেন সেচের পানি পাচ্ছেন না রাজশাহীর প্রান্তিক কৃষকরা?

|

বরেন্দ্র অঞ্চলের লাল মাটিতে পানির সংকট চিরচেনা চিত্র। এখানে চাষাবাদের একমাত্র উপায় বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সেচ সুবিধা। সেই সেচের সুযোগ নিয়ে কৃষকদের শোষণের অভিযোগ প্রতিষ্ঠানটির নলকূপ অপারেটরদের বিরুদ্ধে। বাড়তি লাভে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ক্ষুদ্র কৃষকদের সেচের ন্যায্য পানি থেকে বঞ্চিত করছেন তারা। দুই কৃষকের সাম্প্রতিক আত্মহত্যার পেছনেও একই ঘটনা। এত কিছুর পরেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের।

ইশ্বরীপুর গ্রামের উঁচু-নিচু ৩০০ বিঘা জমিতে সেচকাজ চলে বিএমডিএর একটি মাত্র গভীর নলকূপ দিয়ে। কৃষকরা বলছেন, যত পানি, তত কমিশন। বেশি কমিশন পেতে এখানকার নলকূপ অপারেটর সামর্থ্যের তুলনায় অনেক বেশি জমি সেচের আওতায় এনেছেন। এ চিত্র পুরো বরেন্দ্র অঞ্চলজুড়েই।

বরেন্দ্রের লাল মাটিতে গ্রীষ্ম মৌসুমে দেখা দেয় ভূগর্ভস্থ পানির সংকট। অন্যদিকে সেচের সক্ষমতার তুলনায় জমির আওতা বেশি। দুইয়ে মিলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক সেচের পানির জন্য ঘুরতে থাকে দিনের পর দিন। ১০ থেকে ১৫ দিন অপেক্ষার পর পানি মিললেও সেটি জমিতে পর্যাপ্ত নয়। এমনকি অভিযোগ আছে, অপারেটরা পানি দিতে দেরি করায় কাঙ্খিত ফসল না পেয়ে অনেকেই বাধ্য হন জমি বিক্রি অথবা বর্গা দিতে। আর সে জমির ইজারাও দিতে বাধ্য হন অপারেটরের কাছেই।

মেশিনে চাষীদের স্মার্টকার্ড পাঞ্চ করে পানি দেয়ার স্পষ্ট নিয়ম বিএমডিএর। অথচ অপারেটররা নিজেদের কার্ড ব্যবহার করে নগদ টাকায় কৃষকদের পানি নিতে বাধ্য করেন। স্বজনপ্রীতি, বড় কৃষকদের অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে সময়মতো সেচের পানি দেয়ায় ক্ষুদ্র কৃষকদের বঞ্চিত হওয়াটাই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে এখানে। আইনপ্রণেতার পর্যবেক্ষণ বলছে, নলকূপগুলোর অপারেটর নিয়োগে অর্থ ও রাজনীতির প্রাধান্যই এ অবস্থার জন্য দায়ী। সংখ্যালঘু ও আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক ফজলে হোসেন বাদশা এমপিও বললেন একই কথা। তিনি বললেন, পাম্প চালকরদেরও রাজনৈতিক পরিচয়ের মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়। এর ফলে এই ব্যবস্থা এখন গোটা এলাকার আদিবাসীদের জন্য নিপীড়নমূলক ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে।

যদিও এ নিয়ে ক্যামেরায় কথা বলতে রাজী নন বিএমডিএর সেচ শাখার প্রধান শামসুল হোদা। তবে তিনি জানিয়েছেন, পানি বণ্টনের কিছু নিয়ম-নীতি রয়েছে। একটি কমিটি অপারেটরদের পানি দেয়ার ক্ষেত্রে নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

রাজশাহী জেলায় প্রায় ৩ হাজারের মত নলকূপ রয়েছে। গভীর নলকুপ ২ হাজার ৮শ। ১ লাখ ২৪ হাজার হেক্টর জমি এসব নলকূপের আওতায় সেচ সুবিধা ও চাষাবাদ হয়ে থাকে।

/এডব্লিউ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply