সুস্থ জীবন পেতে, সুস্থ শরীরের পাশাপাশি প্রয়োজন সুস্থ মনও। তাই মানসিক স্বাস্থ্যকে কোনো মতেই হেলাফেলা করা চলবে না। মানসিক অসুস্থতার অন্যতম প্রধান একটি লক্ষণ মানসিক উদ্বেগ। পরিসংখ্যান অনুসারে গোটা বিশ্বে প্রায় ২৭ কোটি মানুষ মানসিক উদ্বেগজনিত সমস্যায় আক্রান্ত। দুশ্চিন্তা, অবসাদ, বিভিন্ন রকমের ভয় কিংবা মেলামেশার সমস্যা- মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ একাধিক। এই ধরনের সমস্যা বেশি দিন থাকলে মনোবিদের পরামর্শ নেয়াই বাঞ্ছনীয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে একাধিক স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস তেমনই একটি পদ্ধতি। দেখে নিন কোন কোন খাবার মানসিক উদ্বেগের সমস্যা কমাতে কাজে আসতে পারে।
১। পালং শাক: পালং শাকে থাকে প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, এই খনিজ উপাদানটি মানসিক উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। পাশাপাশি পালং শাক অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে।
২। হলুদ: হলুদে থাকে ‘কারকিউমিন’ নামক একটি উপাদান। এই উপাদানটি মানসিক উদ্বেগ কমাতে ও মস্তিষ্কের পুষ্টিতে সহায়তা করে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। এছাড়া কারকিউমিন বৃদ্ধি করে আলফা লিনোলেনিক অ্যাসিড, যা ডিএইচএ-এর ক্ষরণ ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। এই ডিএইচএ মস্তিষ্কের কোষের স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সমীক্ষা অনুসারে আট সপ্তাহ অল্প পরিমাণ হলুদ খেলে কমতে পারে মানসিক উদ্বেগ।
৩। ডার্ক চকোলেট: ডার্ক চকোলেটে উপস্থিত ‘ফ্যাভোনল’ জাতীয় উপাদান মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি ডার্ক চকোলেটে থাকে ‘এপিক্যাটেকিন’ ও ‘ক্যাটেকিন’ নামক অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। বেশ কিছু গবেষণা বলছে, এই উপাদানগুলি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষায় ও মস্তিষ্কের কোষে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। স্নায়ুকোষের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতেও এর ভূমিকা রয়েছে বলে জানা যায়। তবে ডায়াবেটিস ও অনুরূপ সমস্যা থাকলে ডার্ক চকলেট খাওয়ার আগে নিতে হবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ।
৪। দই: পরীক্ষার আগে দই খাওয়ার প্রচলন কেন, তা কখনও ভেবে দেখেছেন? আসলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রোবায়োটিকে ভরপুর দই-এ প্রদাহ কমে। স্নায়ু কোষ স্বাভাবিক রাখতেও এর জুড়ি অনেক। পাশাপাশি প্রোবায়োটিকে বাড়ে সেরোটোনিন। বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনে দু’বার করে ১২৫ গ্রাম দই এক মাস খেলে অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়, ফলে কমে মানসিক উদ্বেগ।
৫। গ্রিন টি: গ্রিন টি’তে থাকে ‘এল-থিয়েনিন’ নামক এক প্রকার অ্যামাইনো অ্যাসিড। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ও দুশ্চিন্তা কমাতে এটি অত্যন্ত উপযোগী। গবেষকদের মতে, গ্রিন টি’তে এক দিকে কমে ‘করটিসোল’ হরমোন, অন্য দিকে বাড়ে ‘ডোপামিন’ ও ‘সেরোটোনিন’ ক্ষরণ। করটিসোলকে বলা হয় ‘স্ট্রেস হরমোন’, অর্থাৎ এটি মানসিক চাপ বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত। আর ডোপামিন ও সেরোটোনিন হরমোন মন ভালো রাখতে সহায়তা করে।
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
ইউএইচ/
Leave a reply