আবু বকর রায়হান:
অন্য আর দশটা রৌদ্রজ্জ্বল দিনের মতোই শুরু হয়েছিল দিনটি। নিয়ম মেনেই শহর থেকে লালমাটির ক্যাম্পাসে ছুটে আসছিল বাসগুলো। শিক্ষার্থীরাও ক্লাস-পরীক্ষার ব্যস্ততায় ছুটছিলেন ভবনগুলোর দিকে। এতসব ব্যস্ততার মাঝেও সময়টা কোথায় যেন থমকে গিয়েছিল। অঙ্কুরের মনে হচ্ছিলো, যদি বেঁধে রাখতে পারতাম এ মুহুর্তগুলো। যদি আজ বিদায় না বলতে হতো!
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম ব্যাচ ‘অঙ্কুর’। গল্পের শুরু হয় ২০১৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে। বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন তিনজন শিক্ষকের ভালোবাসা নিয়ে প্রথম ক্লাস শুরু তাদের। এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি তারুণ্যের ছোঁয়া লাগা ৪৮ তরুণ-তরুণীকে।
দেশের ভিন্ন ভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা সহপাঠীদের আপন করে নিতেও লাগেনি সময়। কয়েকদিনের ব্যবধানে আত্মার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ক্লাসের অবসরে কিংবা ক্যাম্পাস আড্ডায় গাঢ় হতে থাকে বন্ধুত্ব। কখনও দলবেঁধে ব্যাচ ট্যুর আবার কখনও সামাজিক বনে পিকনিক; এভাবেই চলতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন।
এরমধ্যেই কিভাবে যেন বেজে গেল বিদায়ের সুর। সারাদিনের ক্লাস শেষে লাল-নীল বাসগুলো মাতিয়ে রাখা সেই দিনগুলো বিদায় নিচ্ছে। একসঙ্গে পথচলার বন্ধনটা আবার আলাদা হয়ে যাবে। একসঙ্গে আর ক্লাসে যাওয়া হবে না, ক্যাম্পাসের আড্ডায়ও দেখা যাবে না প্রিয় মুখগুলোকে। তবে মনের আঙিনায় আপন হয়ে রবে চিরকাল।
এই কথাগুলোরই যেন প্রতিফলন হলো বিদায়ী শিক্ষার্থী রাসেল মাহমুদ ভূঁইয়ার কথায়। তিনি বলেন, বিদায়টা আসলে কারো জন্যই সুখকর না, কেউ চায় না বিদায় নিতে। আমরা বিদায় নিচ্ছি তা বলবো না, শিক্ষাজীবনের এক অধ্যায় ছেড়ে আরেকটি অধ্যায়ে পা রাখার উদ্দেশ্য প্রস্থান করছি। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ আমাদের পরিবারের মতো। এর সব কিছুতেই আমরা প্রথম ব্যাচ মিশে ছিলাম, আছি, থাকবো।
বুধবার (৬ এপ্রিল) সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ। বিদায়ী শোভাযাত্রা, আবির খেলা, ফটোসেশন, ফ্ল্যাশমব, আতশবাজি আর কনসার্টে ক্যাম্পাস মাতিয়ে রেখেছিলেন সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। প্রথম ব্যাচের বিদায়ে বিভাগের অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন কান্নাভেজা চোখে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অগ্রজদের সাথে উৎসবে মেতে ছিলেন তাদের সবাই।
‘আমরা যখন ক্যাম্পাসে আসি, তখন শুধু একটাই ব্যাচ ছিলো আমাদের বিভাগে। কলেজ শেষে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে পা দিয়েছি, অনেক কিছুই বুঝতাম না। প্রথম ব্যাচের ভাইয়া-আপুরা আমাদের সহদরের মত আপন করে নিয়েছিলেন।’ এভাবেই বলছিলেন বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী আনিসুর রহমান।
দিনভর আনন্দে উৎসবের পর কখন যে রাত নামলো বুঝতেই পারলো না কেউ। তবে যখন ঘরে ফেরার তাড়া অনুভব করলো, তখনি মনে হৃদয়ের কোথায় যেন শূন্যতা বিরাজ করছে। কী যেন থেকে থেকে বলে যাচ্ছে আর কয়টা দিন থেকে গেল হতো না?
রাত তখন নয়টা, ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে দেখা যায় অন্যরকম এক রূপ। পরিবেশটা হঠাৎ করেই যেন ভারি হয়ে গেলো। সারাদিন আনন্দ উল্লাসে মেতে থাকা শিক্ষার্থীরা ভেঙে পড়েন কান্নায়। বিভাগের শিক্ষক, সিনিয়র-জুনিয়র সবার চোখ কান্নাভেজা। প্রকৃতির নিয়ম মেনেই সবাইকে বিদায় নিতে হয়, আর সেই পথেই চলে গেল গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ‘অঙ্কুর’। ভালো থাকুক লালমাটির মায়াবী ক্যাম্পাসও।
/এসএইচ
Leave a reply