ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে পুলিশের বিতর্কিত ডিআইজি মিজানুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে ডিআইজি মিজান দুদকের সেগুনবাগিচার প্রধান কার্যালয়ে হাজির হন।
অভিযোগ তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু করে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত টানা সাড়ে ৭ ঘণ্টা পুলিশের উচ্চপদস্থ এই কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদক কর্মকর্তারা।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকালে সাংবাদিকদের পুলিশের বিতর্কিত ডিআইজি মিজানুর রহমান বলেন, এক ভদ্র মহিলার সঙ্গে আমার কনভারসেশন হয়েছে, এজন্য আমি স্যরি। এজন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি বলব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমার বিরুদ্ধে ইনকোয়ারি আছে, সুতরাং উনারাই ভালো বলতে পারবেন, কতটুকু প্রমাণিত হয়েছে, কতটুকু প্রমাণিত হয়নি।
ডিআইজি মিজান সাংবাদিকদের বলেন, দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা হয়েছে। আমার ট্যাক্স ফাইলের বাইরে আমার কোনো সম্পদ নেই, বাকিটুকু আপনারা তদন্ত কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
আত্মীয়স্বজনদের নামে কোনো সম্পদ আছে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আবারও বলি, যে যে জায়গায় সম্পদ আছে বা আমার আত্মীয়স্বজনের নামে যে সম্পদ আছে, তা আমার ট্যাক্স ফাইলে আছে।
এদিকে আয়ের বাইরে থাকা তার বিপুল সম্পদ নিয়ে দুই দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদকের টিম। বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে আলীসান বাড়ি, উত্তরা ও বসুন্ধরায় স্ত্রী’র নামে প্লট-ফ্লাট এবং পুলিশ প্লাজার শো রুমের আয়ের উৎস নিয়ে জানতে চায় দুদক। জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে ক্ষুদ্র ঔষধ ব্যবসায়ী ভাইয়ের নামে রাজধানীর বেইলী রোডে থাকা ফ্লাট, কাকরাইলে ভাগ্নের বাণিজ্যিক ফ্লাটের তথ্যও। তবে মিজানের দাবি, আয়করের বাইরে নেই কোন সম্পদ।
দুদক প্রাথমিকভাবে মনে করে, সরকারি চাকুরীজীবী হয়েও ডিআইজি মিজানের অঢেল সম্পদ রয়েছে। তবে চতুর মিজান নিজের টাকায় একাধিক প্লট, ফ্লাট, গাড়ীসহ অনেক কিছুই স্বজনদের নামে করেছেন বলে ধারনা দুদকের। এ কারণে সংশ্লিষ্ট স্বজনদের আর্থিক সঙ্গতি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদেরও ভাবনা আছে প্রতিষ্ঠানের।
অনেক প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই দুদক কার্যালয় ত্যাগ করেন তিনি। জিজ্ঞাসাবাদে ডিআইজি মিজানের দেয়া তথ্য যাচাই বাছাই করে প্রয়োজনে আবারও তলব করা হবে বলে জানিয়েছে দুদক।
সূত্র জানায়, ডিআইজি মিজান পুলিশের উচ্চপদে থেকে তদবির, নিয়োগ, বদলিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে নানা উপায়ে শত কোটি টাকার মালিক হন বলে দুদকে অভিযোগ আসে।
এই অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের জন্য গত ১০ ফেব্রুয়ারি দুদকের উপপরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারীকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করে দুদক।
চাকরিজীবনে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা উপায়ে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তার নামে-বেনামে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি রয়েছে। একাধিক ব্যাংক হিসাবে রয়েছে বিপুল অর্থ ও ফিক্সড ডিপোজিট।
এমনকি দেশের বাইরে অর্থপাচারেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ডিআইজি মিজানুর রহমান ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এ বছরের জানুয়ারিতে তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়।
দ্বিতীয় বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ত্রী মরিয়ম আক্তারকে গ্রেফতার করানোর অভিযোগ ওঠে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনেরও অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের প্রমাণ পায় পুলিশের তদন্ত কমিটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে প্রত্যাহার করা হয়। সর্বশেষ মিজানের বিরুদ্ধে এক সংবাদ পাঠিকা প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ তুলেছেন।
Leave a reply