কলাবাগানের তেঁতুলতলা খেলার মাঠে দেয়াল তোলার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় মানবাধিকার কর্মী সৈয়দা রত্না ও তার ছেলেকে আটক দেখিয়েছে পুলিশ। তবে কেন তাদের আটকে রাখা হয়েছে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি পুলিশ। রত্নার মেয়ে থানায় অবস্থান করেও মা ও ভাইয়ের সাথে দেখা করতে পারেনি বলে জানায় বেশ কিছু সংগঠন।
রোববার (২৪ এপ্রিল) সকালে বাসা থেকে বের হতেই সৈয়দা রত্না দেখতে পান দীর্ঘদিন ধরে যে মাঠের জন্য আন্দোলন করে আসছিলেন সেখানে পুলিশ দেয়াল তুলে দিচ্ছে। সাথে সাথে তিনি ফেসবুক লাইভে গিয়ে ভিডিও করার চেষ্টা করলে বাধা দেয় উপস্থিত পুলিশ। তাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ, সরকারি কাজে বাধা দেয়া হয়েছে এই অভিযোগ করা হয়। শুধু তাকেই নয়, তার ১৭ বছরের ছেলে ইসা আব্দুল্লাহ পিয়াংশুকেও ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার সংগঠন হাজির হয় কলাবাগান তেতুলতলা মাঠ প্রাঙ্গনে। বেলা, নিজেরা করি, উদীচী, বাফা, ব্লাস্টার, আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ বেশ কিছু সংগঠন ছুটে আসে।
বেলা’র নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, যে এলাকায় খেলার মাঠ থাকে না সে এলাকা অনেক ক্রিমিনালই জন্ম দেবে। কিন্তু আমরা একটি থানাভিত্তিক ক্রিমিনালভিত্তিক সমাজ চাই না। কলাবাগানের তেতুলতলা খেলার মাঠকে এলাকাবাসীর জন্য উন্মুক্ত ও সংরক্ষিত রাখা হবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সে দাবি জানাই আমরা।
কলাবাগান থানায় গেলেও সেখান থেকে সৈয়দা রত্নার ব্যাপারে কোনো সদ্দুত্তর পাননি তারা। সেখানে ঢুকতে না দেয়া ও অসহযোগিতার অভিযোগ করেন তারা। এমনকি তেতুলতলা এলাকাতেও উপস্থিত থাকা পুলিশ কথা বলতে চায়নি সংগঠকদের প্রতিনিধিদের সাথে। নিজেরা করি’র সময়ন্বয়কারী খুশি কবীর বলেন, কেউ ফোন ধরছে না। সবাই নাকি এত ব্যস্ত! ১১টা থেকে ফোন দিচ্ছি। কেউ ধরছে না। থানায় গিয়েছিলাম। সেখানে বলেছে, মাঠেই নাকি আছে। কিন্তু মাঠেও উনারা নাই। কোথায় আছেন আমরা জানি না।
উদীচীর সাধারণ সম্পাদক আরিফ নুর বলেন, তার শিশুসন্তানসহ সৈয়দা রত্নার মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি, যতক্ষণ না আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত পুলিশ এখানে যে নির্মাণ কাজ চালাচ্ছে তা বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।
কলাবাগান থানাতে বিষয়টি যাচাই করতে গেলে দেখা যায়, সৈয়দা রত্নার মেয়ে অপেক্ষা করছেন থানার বাইরে। ছোট ভাই ও মাকে কোনো কারণ ছাড়াই আটক করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ তার। সৈয়দা রত্নার মেয়ে সেউতি সাগুফতা বলেন, পুলিশকে বলেছি দেখুন, আমার ভাইয়ের বয়স কিন্তু ১৮ হয়নি। কোন অপরাধে তাকে লকআপে রেখেছেন আপনারা? ও কী করেছে? তখন ডিউটি অফিসার বলেন, আপা, আমি তো কিছু বলতে পারছি না। আমি তো চাকরিই করি। আমাকে উপর থেকে আদেশ দেয়া হয়েছে দুইজনকে আটকে রাখার জন্য।
শুধু তাই নয়, সাংবাদিকদেরও ঢুকতে দেয়া হচ্ছিল না থানায়। ওসি বা ডিউটি অফিসার কাউকেই পাওয়া যাচ্ছিল না মা-ছেলেকে আটকের সঠিক কারণ জানার। এমনকি থানায় উপস্থিত এস আই মিজানুর রহমানও ১৭ বছরের ছেলেকে আটক করার সঠিক কারণ বলতে পারেননি। কলাবাগান থানার এস আই মিজানুর রহমান বলেন, ওখানে সরকারি লোকেরা কাজ করছে। ওখানে হয়তোবা বাধা দিয়েছিলেন তিনি। আমি তো আর ওখানে যাইনি।
এদিকে, তেতুলতলার মাঠ উদ্ধার ও মা-ছেলের মুক্তির জন্য সোমবার (২৫ এপ্রিল) প্রেসক্লাবে সমাবেশ ডেকেছে বেলা, নিজেরা করি, উদীচীসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন।
/এম ই
Leave a reply