দিনাজপুরে লিচুর বাজারে আগুন

|

দিনাজপুর প্রতিনিধি:

দিনাজপুরের বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচুর বাজারে হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে। লিচুর জন্য অস্থায়ী বাগান মালিক ও ক্রেতারা বাগানে বাগানে চিরুনি অভিযান শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

গত দুইদিনে প্রতি শ’ লিচুতে ৬০০-৭০০ টাকা দাম বেড়ে গেছে। জানা গেছে, বেদেনা লিচু ১১০০-১২০০ এবং চায়না থ্রি লিচু ১৯০০-২০০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তারপরও ভাল মানের বেদেনা বা চায়না থ্রি লিচু বাজারে আসছে না। সরাসরি বাগান থেকেই কিনে নিচেছ। পক্ষান্তরে, মাদ্রাজি ও বোম্বে লিচু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩০০ টাকা শ হিসেবে। অথচ গত সপ্তাহে লিচু বাজারে ওঠার সময় বেদেনা লিচু ৮০০ আর চায়না থ্রি ১৪০০-১৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এভাবে হঠাৎ করে লিচুর দাম বেড়ে যাবে তা কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ভাবতে পারেননি। পরে তা ভিআইপি ক্রেতাদের কাছে আকাশচুম্বী দামে বিক্রি করছে। উপর মহলের অনুরোধ বা বড় করপোরেট হাউস এবং সরকারি কর্মকর্তাদের চাহিদা অনুযায়ী লিচু সরবরাহ করতে গিয়ে স্থানীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচুর পেছনে ছুটছেন। এজন্য, ২-৩ দিনের ব্যবধানে লিচুর দাম প্রতি শ-তে ৬০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।

লিচুর জন্য বিখ্যাত দিনাজপুরে সরকারিভাবে লিচু কেনা বেচা শুরু হয়েছে গত ২৩ মে। ঐদিন স্থানীয় গোর এ শহীদ ময়দানে লিচুর বাজারের উদ্বোধন করা হয়। শুরুতে মাদ্রাজী লিচু বিক্রি হয় ২০০ টাকা শ হিসাবে। এর কয়েক দিন পর অর্থাৎ গত ২৬-২৭ তারিখ থেকে পরিপক্ক বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচু বাজারজাত হয়। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হলো মাত্র ২/৩ দিনের মধ্যেই বেদেনো ও চায়না থ্রি লিচুর জন্য হাহাকার পড়ে যায়। বাজারে এই দুই জাতের লিচু আসা মাত্রই মানুষ ছোঁ মেরে কিনতে শুরু করে। পরিস্থিতি আঁচ করে অস্থায়ী বাগান মালিকরা বাজার ছেড়ে বাগানের দিকে ছুটতে থাকতে। কৃষকের কাছে চুক্তিভিক্তিক নেয়া বাগান এক-দুই হাত ঘুরে চলে আসতে শুরু করেছে। যে যেভাবে পারছে বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচু গাছেই কিনে নিচ্ছে। ফলে বাজার থেকে ভাল মানের বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচু প্রায় হারিয়েই গেছে।

বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচুর বাজার নিয়ে স্থানীয় কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, লিচুর ফলন ভাল হয়েছে। তবে বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচুর ফলন এ বছর অপেক্ষাকৃত কম হয়েছে। তাদের মতে, এবার দিনাজপুরের ১৩ উপজেলায় ৫ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে লিচু উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলায় এবার ৩০ হাজার মেট্রিক টন এর বেশী লিচু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে অজ্ঞাত কারণে বেদেনা ও চায়না লিচুর ফলন কম হওয়ায় উৎপাদন লক্ষমাত্রা পূরণ না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু কি কারণে এবার বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচুর ফলন বিপর্যয় হয়েছে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিছু জানাতে পারেনি।

কৃষকদের মতে, বেদেনা ও চায়না থ্রি’র এবার অফ-ইয়ার। অফ ইয়ার বলতে গত দু-তিন বছর যে গাছে ভাল ফলন হয়েছিল সে সব গাছে এবার মুকুলই আসেনি। অর্থাৎ সেসব গাছে ফলন হয়নি। আর মাঝে তীব্র খরার কারণে মুকুল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাই বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচুর ফলন এবার গতবারের তুলনায় অর্ধেকের কম হওয়ার সম্ভাবনা
নিশ্চিত।

এদিকে বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচুর হাহাকার অবস্থায় উপর মহলের অনুরোধ ও আদেশ রক্ষায় স্থানীয় পর্যায়ের কর্মকর্তারা মরিয়া হয়ে গেছেন। ‘দাম পরে হবে, আগে লিচু দেন। এই অবস্থায় অস্থায়ী বাগান মালিকরা যার কাছে যতো পাচ্ছেন তেমন দাম নিচ্ছে। পরিস্থিতি এমনই দাড়িয়েছে যে, দামাদামি করার মাঝেই মানুষ ছোঁ মেরে নিয়ে যাচ্ছে বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচু।

এদিকে, ফলন বিপর্যয় এবং মাত্রাতিরিক্ত চাহিদার পাশাপাশি প্রচণ্ড গরমের কারণে আগামী ৫-৬ দিনের মধ্যে দিনাজপুর বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচু শূন্য হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply