চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুন ধরার একটু পরেই মাকে ফোন করে আগুন লাগার বিষয়টি জানান ডিপোর সিএসএস ডেস্কের সুপারভাইজার হাফিজুর রহমান। এরপরই কর্মরত ছেলের খোঁজ নিতে বারবার ফোনে খবর নিচ্ছিলেন হাফিজুরের মা। মাকে বারবারই তিনি বলছিলেন তাদের জন্য দোয়া করতে, কোনো ধরনের দুশ্চিন্তা না করতে। প্রথম বিস্ফোরণের ঠিক আগ মুহূর্তে মায়ের সাথে কথা বলতে দুর্ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে সরে এসেই প্রাণে বেঁচে যান হাফিজুর রহমান।
হাফিজুর রহমান জানান, আমি আটটার দিকে ফিঙ্গার দিয়ে অফিসে প্রবেশ করে যথারীতি ডেস্কে বসে কাজ করছিলাম। হঠাৎ ৯টার দিকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। আমাদের এখানে যে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল আমরা সেগুলো নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। তখন আমার মাকে ফোন দিয়ে আগুন লাগার কথা জানাই এবং বলি আমাদের জন্য দোয়া করতে। মা কিছুক্ষণ পরপরই ফোন দিয়ে আমাদের খবর নিচ্ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, এক সময় আমরা আগুন নেভানোর কাজে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ি। বিস্ফোরণের ঠিক একটু আগে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখি মা ফোন দিয়েছে। ওখানে দাঁড়িয়ে কথা বলার মতো যেহেতু অবস্থা ছিল না, সেজন্য আমার হাতে থাকা অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাটি আমার কলিগের কাছে দিয়ে একটু দূরে মায়ের সাথে কথা বলার জন্য আসি। তখনই বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পিছনে তাকিয়ে দেখি সবাই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। মুহূর্তেই আমি নির্বাক হয়ে যাই। আমার ফোনও বন্ধ হয়ে যায়। পরে কোনোরকমে দৌড়ে নিরাপদ দূরত্বে আসি।
গত শনিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে লাগা এ আগুন এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এই নেভে তো, এই জ্বলে ওঠে। নতুন করে রাসায়নিকের চারটি কনটেইনারে আগুন জ্বলে উঠে সোমবার (৬ জুন) দুপুরেও। সোমবার সন্ধ্যায়ও বেশ কয়েকটি কনটেইনারে আগুন জ্বলছে এবং কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। এ ঘটনায় চট্টগ্রামে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১০২ জন। যাদের ১৫ জনেরই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের দুই কর্মীসহ ১৪ জন। তাদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ফায়ার সার্ভিস কুমিল্লার সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান বলেন, ৭ সদস্যের একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। তারাই বের করবেন এখানে কোনো গাফিলতি ছিল কিনা। ভবিষ্যতে কী কী সুপারিশ করলে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না, উনারাই নির্ণয় করবেন।
ইউএইচ/
Leave a reply