শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ এবং শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ ১২ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি, বাকশিস। দাবি মেনে না নেওয়া হলে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন কলেজশিক্ষকরা।
রোববার (২৬ জুন) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন শিক্ষকরা। লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হক বলেন, কোভিড-১৯ ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময়ে ২০২২-২৩ বাজেটে শিক্ষাখাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। বেসরকারি কলেজের একজন শিক্ষক ঈদ উৎসব ভাতা পান বেসিক বেতনের ২৫ শতাংশ, বাড়ি ভাড়া পান ১০০০ টাকা, দেওয়া হয় না পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা ভাতা। আমাদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগের নীতিমালা জনবল কাঠামো ২০২১-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার ফলে বেসকারি কলেজে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ সুযোগে একটি স্বার্থান্বেষী মহল সরকারি কলেজের শিক্ষকদের বিভিন্ন বেসরকারি বড় বড় কলেজে প্রেষণে নিয়োগ দিয়ে চলেছে, তা কোনো অবস্থাতেই আমরা মেনে নেব না।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ১২ দফা দাবি পেশ করা হয়। দাবিগুলো হলো।
১. শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করতে হবে।
২. এমপিওভুক্ত কলেজ শিক্ষকদের জন্য পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা দিতে হবে। সরকারি কলেজের মতো বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিতে হবে।
৩. বেসরকারি এমপিওভুক্ত কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগে ২০২১-এর জনবল কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত নীতিমালা বাতিল করে ২০১০-এর নীতিমালা পুনর্বহাল করতে হবে।
৪. বেসরকারি কলেজে সরকারি কলেজ থেকে প্রেষণে শিক্ষক বা অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য ২০২১ এর নীতিমালা ধারা বাতিল করতে হবে। এর আগে যেসব সরকারি শিক্ষকদের প্রেষণে বেসরকারি কলেজে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
৫. এমপিও এর শর্তপূরণকারী এবং বিধি সম্মতভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত সব নন-এমপিও এবং অনার্স ও মাস্টার্সে পাঠদানকারী শিক্ষকদের প্যাটার্নভুক্ত করে এমপিওভুক্ত করতে হবে।
৬. বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার পরিবর্তে অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ পেনশন চালু করতে হবে।
৭. ৮ বছর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রভাষকদের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া, উচ্চমাধ্যমিক কলেজে জ্যেষ্ঠ প্রভাষকের স্থলে সহকারী অধ্যাপক পদ পুনর্বহাল করতে হবে।
৮. এনটিআরসি এর পরিবর্তে শিক্ষা ক্ষেত্রে সংকট নিরসনের জন্য শিক্ষানীতি ২০১০-এর আলোকে সংবিধিবদ্ধ স্থায়ী ‘শিক্ষক নিয়োগ কমিশন’ গঠন করতে হবে।
৯. দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতিতে জীবনযাত্রার সীমাহীন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ৯ম পে স্কেল ঘোষণার আগ পর্যন্ত বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য অবিলম্বে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ মহার্ঘ্যভাতা দিতে হবে। কোভিড ১৯-এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা বোর্ড ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন অধিদপ্তর ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন পদে ৫০ শতাংশ বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের কর্মকর্তা পদে প্রেষণে নিয়োগ দিতে হবে। শিক্ষা সংক্রান্ত বিদেশে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করতে হবে।
১১. শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে কর্মমুখী, সার্বজনীন ও বিজ্ঞান ভিত্তিক যুগোপযোগী শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়নে সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা বাস্তবায়নে শিক্ষকদের ব্যাপক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১২. জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুসারে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সমস্তরে, সমপর্যায়ের প্রতিষ্ঠান ও সমপদে বদলী ব্যবস্থা অবিলম্বে চালু করতে হবে।
দাবি মেনে নেওয়া না হলে আন্দেলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, সরকারকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দেয়া হলো। এর মধ্যে যদি দাবিগুলো বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয়, অক্টোবরের পরে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
/এডব্লিউ
Leave a reply