জৌলুস হারাচ্ছে চামড়া খাত; ইউরোপের বাজার হারিয়ে মাথায় হাত ট্যানারি মালিকদের

|

জৌলুস হারাচ্ছে পোস্তার কাঁচা চামড়ার ব্যবসা। এলাকার পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তো আছেই। মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়েছে, রাজধানীর আশপাশের অস্থায়ী আড়ত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাভারে ট্যানারি পল্লির পাশে কাঁচা চামড়ার আলাদা জোন করে দিলে জটিলতা কমবে। কিন্তু এখনও জমিই নির্ধারণ করা যায়নি। অন্যদিকে, ইউরোপের বাজার হারিয়ে মাথায় হাত ট্যানারি মালিকদের। হাজারীবাগের পরিত্যক্ত জমি নিয়ে সিদ্ধান্ত চান তারা।

পোস্তার আড়ত, সড়ক আর মানুষে মিশে আছে বাংলাদেশের ঐতিহ্য। মূলত কাঁচা চামড়ার কেন্দ্র হিসেবেই চেনা এই এলাকা। ব্যবসাও আগের চেয়ে অনেক পরিণত হয়েছে। অথচ বর্জ্য, যানবাহনের বিশৃঙ্খলা আর দুর্গন্ধ যেন পোস্তার পিছু ছাড়ছে না। কোরবানির মৌসুমে জটিলতা আরও বাড়ে। তাই, ট্যানারির মতো পোস্তার আড়তও সরিয়ে নেয়া উচিত কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে অনেক আড়তদাররাই জানালেন, পোস্তাতেই আড়তগুলো আছে এবং থাকবে। ব্রিটিশ আমল থেকেই এখানেই পূর্বপুরুষরা ব্যবসা করে গেছেন। তবে, ভিন্নমতও আছে। ট্যানারি মালিকদের যেমন আলাদা জায়গা করে দেয়া হয়েছে সেভাবেই কাঁচা চামড়ার জন্য আলাদা জমি বরাদ্দের দাবিও জানান অনেকেই।

হাজারীবাগের অলিগলিকে কেন্দ্র করেই স্বাধীনতার আগে গোড়াপত্তন ঘটে চামড়া শিল্পের। তখন কমপ্লায়েন্স না থাকলেও আন্তর্জাতিক বাজার দখলের ক্ষেত্রে তখন বাংলাদেশের মুন্সিয়ানা ছিল। চামড়া শিল্প সাভারে স্থানান্তরের পরও কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা যায়নি; উল্টো একটি-দুটি দেশ বাদে আন্তর্জাতিক বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ। সেই সাথে, সাভারে স্থানান্তরের পর হাজারীবাগের পরিত্যক্ত অবকাঠামোগুলোতে কী ধরনের স্থাপনা তৈরি করা হবে সে বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি নীতিনির্ধারকরা।

যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালিতে বাংলাদেশি চামড়া যায় না বহু বছর। সিইটিপি জটিলতার সমাধান নেই এখনও। বন্দর থেকে কেমিক্যাল ছাড়ের অনুমতিও মিলছে না। এভাবে চললে কোরবানির চামড়া কীভাবে প্রক্রিয়াজাত হবে কেউ জানে না। ফলাফল, স্থানীয় বাজারে দাপট দেখাচ্ছে কৃত্রিম লেদার। ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, আমি মালিকই হলাম না জমির, কমপ্লায়েন্স করবো কীভাবে? আমরা এ জিনিসটা বারবার বলেছি। কিন্তু গত এক বছরের এর কোনো সমাধান আসেনি। আমাদের নগদ টাকার অনেকটাই সংকট। তাছাড়া, হাজারীবাগের জায়গাটা কিন্তু এখনও রেড জোন হিসেবেই আছে।

কথা ছিল, সাভারে ট্যানারি পল্লী স্থাপনের পর তার পাশেই হবে কাঁচা চামড়া ও কেমিক্যাল ব্যবসার আলাদা জোন। সে লক্ষ্যে জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করে সরকার। কিন্তু তার আগেই হোঁচট খায় চামড়া খাত। কোরবানির মৌসুমে তলানিতে নামে চামড়ার দাম। এর মাঝেই নতুন খবর হলো, সাভারের আমিনবাজার, হেমায়েতপুরে বসেছে কাঁচা চামড়ার অস্থায়ী আড়ত। সেখান থেকে সরাসরি চামড়া যাচ্ছে পাশের ট্যানারিতে। সাভারে ট্যানারি পল্লীতে স্থানান্তর হয়েছে ১৬২টি কারখানা, তবে কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি সবগুলো।

এরকম পরিস্থিতিতে পোস্তার আড়তের ভবিষ্যত নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব খান বলেন, কাঁচা চামড়ার আলাদা জায়গা হলে তো আমাদের সবকিছু প্রয়োজন হবে। একটা পল্লী নিয়ে যেতে হবে যেখানে সবকিছুর ব্যবস্থা থাকবে। সে রকম আশা সরকার দিয়েছে আমাদের। আমরাও জানিয়েছি আমাদের কত সদস্য, কতগুলো আড়ত লাগবে। এরপর যোগাযোগ করেছি। বলা হয়েছে, কাজ হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামলো রিজার্ভ

/এম ই




সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply