শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বুধবার (২০ জুলাই) ভোট দেবেন পার্লামেন্টের ২২৫ জন সদস্য। লড়াইয়ের মাঠে শীর্ষ তিন প্রার্থী হলেন নাম রনিল বিক্রমাসিংহে, ডুল্লাস আলাহাপ্পেরুমা আর সাজিথ প্রেমাদাসা। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে ছয়বারের প্রধানমন্ত্রী রনিল এগিয়ে থাকলেও অন্যরকম হিসেব কষছেন বিশ্লেষকরা। কারণ আইনপ্রণেতাদের ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পাশাপাশি নির্বাচিত প্রার্থীকে অর্জন করতে হবে জনতার আস্থাও। খবর এনডিটিভির।
মূলত, ৪৪ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো গোপন ব্যালটের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে যাচ্ছেন পার্লামেন্ট সদস্যরা। তিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মধ্যে পার্লামেন্টে দল থেকে নির্বাচিত একমাত্র ব্যক্তি হলেন রনিল। তারপরও ক্ষমতাসীন দলের আস্থা তার ওপরই। রাজাপাকসে পরিবারসহ এসএলপিপির বড় অংশ তার প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছে। অন্তর্বর্তী দায়িত্ব নিয়ে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তোড়জোর দেখাচ্ছেন ৭৩ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ।
এ নিয়ে রনিল বিক্রমাসিংহে বলেন, আইএমএফ’র সাথে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। মিত্র দেশগুলোর সাথেও যোগাযোগ করছি। দেশে এখন আইন ভঙ্গের প্রচারণা চলছে। তবে আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমর্থনযোগ্য। যারা পরিবর্তন চায়, তাদের মতামত অবশ্যই নেয়া হবে।
ক্ষমতাসীন এসএলপিপি’র একটি অংশের সদস্যরা প্রার্থী করেছেন নেতা ডুল্লাস আলাহাপ্পেরুমাকে। ১৯৯৪ সালে প্রথম লঙ্কান পার্লামেন্টে প্রবেশ করেন ৬৩ বছর বয়সী সাবেক এই সাংবাদিক। তথ্য ও গণমাধ্যম বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। গত এপ্রিলে প্রথম দফা গণবিক্ষোভের সময় পদত্যাগ করেন ডুল্লাস আলাহাপ্পেরুমা। ক্ষমতাসীন দলের ১১৭ আইনপ্রণেতার বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন, রনিলের পরিবর্তে নিজ দলের প্রার্থীকেই ভোট দেবেন তারা।
এদিকে ফ্রন্টরানারদের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল এসজেবি নেতা হলেন ৫৫ বছর বয়সী সাজিথ প্রেমাদাসা। পার্লামেন্টে নিজ দলের সদস্য সংখ্যা অর্ধশত। তামিল দল টিএনএ’র ১০ সদস্যের সমর্থনের পাল্লাও তার দিকে। তবে নির্বাচিত হতে হলে দরকার হবে ৪৫ স্বতন্ত্র আইনপ্রণেতা ও অন্য ছোট দলগুলোর সমর্থন।
আবাসন মন্ত্রী হিসেবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে বেশ প্রশংসিত সাজিথ। প্রধান তিন প্রার্থীর মধ্যে জনপ্রিয়তার দৌড়ে তিনিই সবচেয়ে এগিয়ে। যদিও লঙ্কান রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী ছয়বারের প্রধানমন্ত্রী আর বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে তিনি প্রেসিডেন্ট হলে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটবে কিনা সংশয় থেকেই যাচ্ছে। কারণ রাজাপাকসের পাশাপাশি বিক্ষোভকারীরা পদত্যাগের দাবি তুলেছিলেন তার বিরুদ্ধেও।
প্রার্থী হিসেবে আরও আছেন ৫৩ বছর বয়সী জেভিপি নেতা অনুড়া কুমারা দেশনায়েক। প্রেমাদাসা লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের ছাত্র ছিলেন। ১৯৯৩ সালে তার বাবা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসা হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার পর রাজনীতিতে আসেন।
২০০০ সালে পার্লামেন্টের সদস্য হন অনুড়া কুমারা দেশনায়েক। ডেপুটি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১৮ সালে আবাসন ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। প্রত্যন্ত এলাকায় দরিদ্রদের কাছে জনপ্রিয় অনুড়া কুমারা দেশনায়েকের নাম। দারিদ্র্যতা দূরীকরণ আর দরিদ্রদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি। ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট পদে লড়লেও হেরে যান রাজাপাকসের কাছে।
রনিল বিক্রমাসিংহের সাথে দ্বন্দ্বের জেরে দেশের সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল দ্য ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি ছেড়ে ২০২০ সালে নিজেই গঠন করেন নতুন দল। একসময় তিনি ছিলেন রনিলের শিষ্য।
এসজেড/
Leave a reply