উপমহাদেশের সঙ্গীতজগতে অনন্য এক নাম ফিরোজা বেগম। সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে তিনি নজরুল সঙ্গীতের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে তিনি বাংলা সঙ্গীতের পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচিত। সঙ্গীতের সকল ক্ষেত্রে তার ছিল সমান পদচারণা। গানের তালিম নিয়েছেন সরাসরি জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ইসলামের থেকে। আজ বরেণ্য এ সঙ্গীতশিল্পীর জন্মদিন। তার জন্মদিনে যমুনা নিউজ তাকে স্মরণ করছে পরম শ্রদ্ধায়।
এগারো কি বারো বছরের একটি ছোট্ট মেয়ে। কলকাতার এইচএমভি স্টুডিওতে ভাই আর মামার সঙ্গে এসেছিলেন গানের অডিশন দিতে। অডিশনে তার গান শুনেই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, এই মেয়েটি একদিন ভাল গায়িকা হবেন। নজরুলের সেই কথাকে সত্য করে আজ তিনি হয়েছেন বাংলাদেশের সুরসম্রাজ্ঞী ফিরোজা বেগম।
১৯৩০ সালের ২৮ জুলাই ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সংগীতের প্রতি অনুরাগ ছিল সেই শৈশব থেকেই। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় অল ইন্ডিয়া রেডিওতে সুযোগ পান গান গাওয়ার। কাজী নজরুল ইসলামের কাছে গানের তালিম নেয়ার সৌভাগ্যও হয়েছিল তার।
১৯৪২ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ হয় এ শিল্পীর। বিখ্যাত গ্রামোফোন কোম্পানি এইচএমভি থেকে তার গাওয়া ইসলামী গানের রেকর্ড হয়। আর তার গাওয়া গান প্রথমবারের মতো রেকর্ড হয় ১৯৪৯ সালে। ফিরোজা বেগমের মোট ১২টি এলপি, ৪টি ইপি, ৬টি সিডি ও ২০টিরও বেশি অডিও ক্যাসেট প্রকাশিত হয়েছে। তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৩৮০টিরও বেশি একক সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
ফিরোজা বেগম ১৯৫৫ সালে কলকাতার গায়ক, গীতিকবি ও সুরকার কমল দাশগুপ্তকে বিয়ে করেন। ১৯৬৭ সালে তারা ঢাকায় আসেন। তাদের তিন সন্তান। যাদের মধ্যে হামিন আহমেদ বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘মাইলস’-এর অন্যতম সদস্য এবং শাফিন আহমেদও একজন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী।
দেশের প্রায় সব সম্মাননাই পেয়েছেন ফিরোজা বেগম। সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি স্বর্ণপদক ছাড়াও ভারতের বঙ্গ সম্মানসহ পেয়েছেন আরও বহু সম্মাননা।
১৯৬৮ সালে তার গাওয়া ‘শাওন রাতে যদি’র রেকর্ড এক সপ্তাহের মধ্যে দু’লাখ কপি বিক্রি হয়ে যায়। এজন্য জাপানের সনি কর্পোরেশনের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সিবিএস তাকে গোল্ড ডিস্ক দিয়ে সম্মানিত করে। বলা হয়ে থাকে, ফিরোজা বেগমের কণ্ঠে জনপ্রিয়তা থেকেই নজরুলের গান নজরুল সঙ্গীত নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীতে ঢাকা রেডিও ও ইসলামাবাদ রেডিওর উদ্বোধন হয়, তার গাওয়া গানের মধ্য দিয়েই।
এছাড়াও ২০২১ সালে তার নামে করা হয় ডিজিটাল আর্কাইভ। যেখানে আছে শিল্পীর জীবনের গল্প, পুরস্কারের তালিকা, গান সংক্রান্ত সব তথ্য, গান মুক্তির তারিখ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের গান, হাতে লেখা নোটবুকের কপিসহ আরও অনেকে কিছু।
২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বরেণ্য এ কণ্ঠশিল্পী। তবে তিনি চলে গেলেও তার নিরন্তর সঙ্গীতসাধনা আমাদের সঙ্গীতকে আলোকিত করেছে। বেঁচে থাকলে আজকের দিনটি তার জন্য হয়ত হতো একটু অন্যরকম। তার জন্মদিনে যমুনা নিউজের পক্ষ থেকে রইল বিনম্র শুদ্ধা।
/এসএইচ
Leave a reply