প্রিন্সেস অব ওয়েলস ডায়না ফ্রান্সিস স্পেনসারের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৯৭ সালের আজকের দিনে ফ্রান্সে এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন তিনি। একজন রাজবধূ হিসেবে নয়, বরং ব্যক্তি হিসেবে তার স্বভাব, আচরণ, হাসি, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, স্টাইল, সৌন্দর্য- সবকিছু মিলিয়ে তিনি ছিলেন এক বিশ্বতারকা। মৃত্যুর পরও সেই রেশ তো কমেইনি বরং আজও তিনি স্টাইল আইকন হয়ে আছেন সবার হৃদয়ে।
প্রিন্সেস ডায়ানার ৩৬ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবন আলোচিত ছিল বিভিন্নভাবে। ১৯৮১ সালে প্রিন্স চার্লসের সাথে তার বিয়ে ছিল বিশ্বের অন্যতম আলোচিত বিয়ে। বিয়ের পর থেকে সবসময়ই ছিলেন ক্যামেরাবন্দী। যেখানেই যেতেন ক্যামেরা কখনই পিছু ছাড়েনি তার। হোক সে সন্তানের জন্ম কিংবা চ্যারিটি; রাজপরিবারের প্রথা ভেঙে মিশতেন সবার সাথে সব ধরনের মানুষের সাথে।
পোশাক থেকে আচরণ পর্যন্ত সবকিছুতেই নিজের রুচির ছাপ রেখেছিলেন ‘প্রিন্সেস ডায়ানা’। সাধারণ মানুষ যেমন তাকে গ্রহণ করেছিল দ্রুত, তেমনই বিশ্বব্যাপী স্টাইল আইকনে পরিণত হতেও সময় লাগেনি তার।
ছোট ছাঁটের কিছুটা পেজবয়, কিছুটা বব ধাঁচের হেয়ার স্টাইলের জন্য বিখ্যাত ছিলেন ডায়ানা। গত ৫০ বছরের ‘মোস্ট আইকনিক হেয়ারস্টাইল’ হিসেবে স্বীকৃত তার হেয়ার স্টাইল। ‘ডায়ানা কাট’ এখনও জনপ্রিয় ফ্যাশন সচেতন তরুণীদের মাঝে।
শুধু হেয়ার স্টাইলেই নয় পোশাকের দিক থেকে ডায়ানাকে এখনও অনুকরণ করেন তরুণীরা। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন বোধহয় তারই পুত্রবধু কেট মিডলটন। ১৯৮৭ সালে প্রিন্স চার্লসের পোলো ম্যানেজারকে পুরস্কার দেয়ার সময় ভিকটর অ্যাডলস্টিনের যে পোশাকটি ডায়ানা পরেছিলেন, ২০১৩ সালে লন্ডনে ওয়ার্নার ব্রাদার্সের স্টুডিও ঘুরে দেখার সময় প্রায় একই রকম পোশাক পরেছিলেন কেট মিডলটনও।
বর্ণাঢ্য রাজকীয় জীবন কাটালেও স্বামী প্রিন্স চার্লসের সাথে ডায়ানার ছিলো প্রবল মনোমালিন্য। ১৯৯৬ সালে বিচ্ছেদও হয় বিশ্বখ্যাত এ জুটির। ডায়ানা বলতেন, আমি যাকে ভালোবাসি সে ছাড়া পৃথিবীর সবাই আমাকে ভালোবাসে। বিচ্ছেদের পর খুবই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন ডায়ানা। তাই মাঝে মধ্যেই বেপরোয়া জীবনযাপনে জড়িয়ে জন্ম দেন বিতর্কের। ১৯৯৭ সালে বন্ধু দোদি আল ফায়েদকে নিয়ে ফ্রান্সে বেড়াতে গিয়ে প্যারিসের পন্ত দ্য ল্য-অ্যালমা টানেলে ভয়াবহ এক সড়ক দুর্ঘটনায় চিরবিদায় নেন পৃথিবী থেকে। তার আকস্মিক মৃত্যুর খবর মুহুর্তে স্তব্ধ করে দেয় গোটা পৃথিবীকে।
১৯৯৭ সালের আজকের দিনে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন। তার রহস্যজনক মৃত্যুতে সংকটে পড়ে ব্রিটিশ রাজতন্ত্র। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ ‘জনগণের রাজকুমারী’ ডায়ানার মৃত্যুতে শোক জানায়। ডায়ানাকে ‘জনগণের রাজকুমারী’ উপাধি দিয়েছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার।
মৃত্যুর ২৫ বছর পরও ডায়ানার জনপ্রিয়তা যে কমেনি, তার উদাহরণ অনেক। ব্রিটিশ রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে ডায়ানার বহুল আলোচিত বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘স্পেনসার’ নামের একটি সিনেমা। ‘দ্য প্রিন্সেস’ নামের একটি ডকুমেন্টারি বানিয়েছেন বিখ্যাত পরিচালক এড পারকিনস। তাকে নিয়ে সম্প্রতি ‘দ্য ক্রাউন’ নামের একটি সিরিজও নির্মাণ করেছে নেটফ্লিক্স।
ডায়ানা ও তার জীবনী নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে অসংখ্য বই, তাকে নিয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত লেখার সংখ্যা অগুনতি। অনেক টিভি অনুষ্ঠান হয়েছে তাকে নিয়ে। প্রিন্সেস ডায়ানা স্মরণে ‘ডায়ানা ফোয়ারা’ নির্মিত হয়েছে লন্ডনের হাইড পার্কে।
ডায়ানার জীবন ও মৃত্যু ব্রিটিশ রাজপরিবারের নতুন প্রজন্মকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। প্রিন্স হ্যারি আর মেগান মার্কেলের সংসার তার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। এছাড়া, প্রায়ই আলোচনা-সমালোচনা হয় তারই আরেক পুত্রবধূ কেট মিডলটনকে নিয়েও।
ডায়ানার মৃত্যু ব্রিটিশ রাজপরিবারের ইতিহাসে এক গভীর কষ্টের দিন। দিনটিকে এখনও স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেন না ব্রিটেনের জনগণ। ডায়ানা আজও রয়েছেন মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায়। সবার মনে এখনও বেঁচে আছেন- অপূর্ব সুন্দরী আর হাস্যজ্জল প্রিন্সেস অব ওয়েলস হিসেবেই।
/এসএইচ
Leave a reply