থানার মধ্যে লাইব্রেরি, সেখানেই বসে বই পড়ছেন থানার পুলিশ সদস্য ও সেবা প্রত্যাশীরা। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও রাজধানীর দুটি থানায় সাধারণ মানুষের জন্য বই পড়ার এমন আয়োজন করা হয়েছে। সাচ্ছন্দ্য পরিবেশ আর মানুষের থানা ভীতি কাটাতে এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন পুলিশের।
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থানার গেট দিয়ে ঢুকতেই সবার চোখ আটকে যাবে বই পড়ার দৃশ্য দেখে। থানার নারী-শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্কের পাশে ছোট পরিসরে একটি লাইব্রেরি গড়ে তুলেছে থানা কর্তৃপক্ষ। সেখানে শোভা পাচ্ছে আইন, ধর্মীয়সহ নানা ধরনের বই। যা পড়ে অবসর সময় কাটাচ্ছেন থানায় সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষও।
এক সেবা প্রত্যাশী বললেন, আমি থানায় আসার পর লাইব্রেরি দেখলাম। এটা সচরাচর থানায় দেখা যায় না, এখানে অনেক ধরনের বই দেখছি। এটা নিঃসন্দেহে সময় কাটানোর ভাল উদ্যোগ।
শুধু সেবা প্রত্যাশীরাই নন, থানায় পুলিশ সদস্যরাও কাজের ফাঁকে সুযোগ পাচ্ছেন বই পড়ে জ্ঞান অর্জনের।
থানার এক পুলিশ সদস্য বললেন, বর্তমানে মানুষ তো বই পড়তেই ভুলে গেছে। অনলাইন-ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহও কম। আমরা যদি এভাবেও মানুষকে বই পড়তে উৎসাহিত করতে পারি, তাহলে এটি আমাদের সমাজের জন্য খুব ভালো হবে বলেই আমরা মনে করি।
থানায় লাইব্রেরি চালুর বিষয়টি এলাকায় সাড়া পড়েছে বেশ। অনেকেই বাসায় পড়ার জন্য থানার লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে যাচ্ছেন।
কামরাঙ্গীরচর থানার এস আই নুসরাত জাহান নূপুর বলেন, একসাথে অনেক লোক সেবা নিতে আসলে আমরা সাধারণত তাদেরকে ওয়েইটিং রুমে বসাই। সেখানে যেনো তারা বোর না হন বা হইচই না করেন সেজন্যই লাইব্রেরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বললেন, স্মার্টফোন সহজলভ্য হওয়ার পর বই পড়ার ওপর থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে মানুষ। সেজন্যই আমরা এখানে একটা লাইব্রেরি তৈরি করেছি। এখানে সব ধরনের বই আছে। কেউ যদি এখান থেকে বই বাড়িতে নিয়েও পড়তে চান সে সুযোগও আমরা রেখেছি।
কামরাঙ্গীরচরের মতো লালবাগ থানাতেও ছোট পরিসরে গড়ে তোলা হয়েছে আরেকটি লাইব্রেরি। উৎসাহ ও সহযোগিতা পেলে লাইব্রেরির পরিসর আরও বাড়াতে চায় লালবাগ থানা কর্তৃপক্ষ।
লালবাগ থানার ওসি এম এম মুর্শেদ বললেন, একটি দৃষ্টিনন্দন ছোট লাইব্রেরি করার চেষ্টা করেছি আমরা। অত্র এলাকার অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা এখানে বই পড়ার ব্যাপারে বেশ উৎসাহী। তারা প্রায়ই এখানে এসে বই পড়েন ও তারা অনেকে বাসায়ও বই নিয়ে যান, ফেরতও দেন। আরও বই সংগ্রহের চেষ্টা ও পরিকল্পনা আছে আমাদের।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, সেবা প্রত্যাশীদের মধ্যে থানা ভীতি কাটানোসহ অপেক্ষা যেন বিরক্তিকর না হয় সেজন্যই লাইব্রেরি গড়ে তোলা হয়েছে।
লালবাগ থানার ডিসি জাফর হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, থানাতে এসেও যেনো ভাল সময় কাটে। যেনো কেউ বোর না হন বা ভীতিকর পরিবেশ বলে মনে না হয়। এখানে যারা আসেন তারা যেনো সাচ্ছন্দ্যে থাকেন, জ্ঞানচর্চার ভেতরে থাকেন সেজন্যই আমরা এমন একটি উদ্যোগ নিয়েছি।
দেশের প্রতিটি থানায় যদি এমন লাইব্রেরি গড়ে তোলা যায় তাহলে মানুষের মাঝে বই পড়ার প্রবণতা যেমন বাড়বে তেমনি মানুষের মাধ্যে অপরাধ করার প্রবণতা কবে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
/এসএইচ
Leave a reply