‘আমি নাচবোই’; বর্ণবাদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন ভিনিসিয়াস

|

ভিনিসিয়াস জুনিয়র। ছবি: সংগৃহীত

রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার ভিনিসিয়াস জুনিয়রের গোল উদযাপনকে বানরের নাচের সাথে তুলনা করেছেন স্প্যানিশ ফুটবল এজেন্টের সভাপতি পেদ্রো ব্রাভো। তার এমন বর্ণবাদী মন্তব্যের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় প্রতিবাদ করেছিলেন পেলে, নেইমারসহ অনেকেই। এবার ভিনিসিয়াস নিজেই সোচ্চার হয়েছেন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে। বলেছেন, আমি নাচবোই। আমার নাচ বন্ধ হবে না।

স্প্যানিশ চ্যানেল এল চিরিঙ্গিতোকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে স্প্যানিশ ফুটবল এজেন্টের সভাপতি পেদ্রো ব্রাভো বলেছিলেন, আপনার প্রতিপক্ষকে সম্মান দিতে হবে আপনাকেই। গোল উদযাপনে যদি আপনি সাম্বা নাচতে চান, তবে আপনাকে ব্রাজিলের সাম্বোদ্রোমোয় যেতে হবে। খেলার মাঠে পারস্পারিক শ্রদ্ধার পাশাপাশি বানর নাচানো বন্ধ করা প্রয়োজন।

এরপর টুইটারে এক ভিডিও পোস্ট করেছেন ভিনিসিয়াস। সেখানে শক্তিশালী ভাষায় নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে ভিনিসিয়াস বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত চোখের ঔজ্জ্বল্যের চেয়ে গায়ের রঙকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হবে, ততক্ষণ চলবে এই যুদ্ধ। এই কথাগুলো আমার শরীরের ট্যাটুতেও লেখা আছে। আর মাথায় এই বাণী আছে অক্ষয় হয়ে। আর আমি চাই এই দর্শনকে বাস্তবে রূপ দেয়া।

ভিনিসিয়াস আরও বলেন, তারা বলে, আমাদের আনন্দ তাদের বিরক্ত করে। তবে আমার মনে হয়, কালো একজন ব্রাজিলিয়ান ইউরোপে এসে সাফল্য পাচ্ছে বলেই তারা বিরক্ত হচ্ছে। কিন্তু আমার জয়ের আকাঙ্ক্ষা, আমার হাসি ও চোখের আভার কাছে এসবই অর্থহীন। বিশ্বের বৈচিত্রকে সূচিত করতে দুনিয়াব্যাপি রয়েছে অনেক ধরনের নৃত্য। এসব গ্রহণ করতে শিখুন! সম্মান করতে শিখুন! নয়তো চোখ বন্ধ রাখুন। কারণ, আমি থামছি না।

বর্ণবাদ ও জেনোফোবিয়ায় (অজ্ঞাত ব্যক্তিদের সম্পর্কে ভীতি) আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয় তার জন্য; এমনটা জানিয়ে ভিনিসিয়াস বলেন, সপ্তাহখানেক আগে কিছু মানুষ আমার নাচের সমালোচনা করেছিল। কিন্তু এই নাচ কেবল আমার একারই নয়। এভাবে নেচেছে রোনালদিনহো, নেইমার, লুকাস পাকেতা, গ্রিজমান, হোয়াও ফেলিক্স, ম্যাথিয়াস কুনহাসহ অনেকেই। আমি যে দেশ থেকে এসেছি সেখানে দারিদ্রের তীব্রতা প্রবল। তাদের শিক্ষা ও খাবার পর্যন্ত জোটে না! তাই আমি এসব নইয়ে খুব বেশি বলি না। সমালোচিত হলেও বলি না। প্রশংসিত হলেও না। আমি কাজ করে যাই। পরিশ্রম করি, মাঠ ও মাঠের বাইরে। আমি শিশুদের পড়াশোনার জন্য অ্যাপ বানিয়েছি। কারও কাছ থেকে অর্থ না নিয়ে স্কুল বানিয়েছি। শিক্ষার বিস্তারে আরও কাজ করে যাবো আমি। পরবর্তী প্রজন্মকে প্রস্তুত করতে চাই যাতে বর্ণবাদ ও জেনোফোবিয়ার বিরুদ্ধে তারা লড়াই করতে পারে।

ভিনিসিয়াস আরও বলেন, অনুকরণীয় পেশাদার ফুটবলার এবং সেরকমই একজন নাগরিক হতে চাই আমি। কিন্তু সহজ পথে কাজ করি না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছুই দেই না। ভীতুরা তাই আক্রমণের জন্য আমাকেই বেছে নেয়। শেষ পর্যন্ত এসবের সমাপ্তি হবে একটি দুঃখপ্রকাশজনিত বিবৃতির মাধ্যমে; নয়তো বলা হবে তাদের কথার ভুল অনুবাদ করা হয়েছে। কিন্তু আমি সেই বর্ণবাদীর প্রতি আবারও বলছি, আমি নাচ থামাবো না। সাম্বাদ্রোমে নাচবো, বার্নাব্যুতেও নাচবো, নাচবো যেখানে খুশি!

আরও পড়ুন: বর্ণবৈষম্যের শিকার ভিনিসিয়াস, তার গোল উদযাপনকে বানরের নাচের সাথে তুলনা!

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply