বাঙালির আবেগটা একটু বেশিই। সেটা যদি হয় আর্জেন্টিনা- ব্রাজিলের ফুটবল তাহলে তো কথায় নেই। যুক্তিকে দূরে সারিয়ে রেখে কথার তুবড়ি ছোটানোর দিকেই যেন বেশি ঝোঁক। সেটা এতটাই যে গণমাধ্যমের শিরোনামে মেসি হয়ে যান- ‘লিওনেল মিসি’! অথচ খেলার মাঠে তার ঘোরতর শত্রুটাও এই তকমা দেবেন না তাকে। অথবা ধরুন নেইমার তাল হারিয়ে পড়ে গেলেন! সাথে সাথেই তাকে ‘অস্কার’ দিয়ে দেয়ার লোকের অভাব হবে না।
এটা ঠিক যে, রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার প্রথম দুই ম্যাচে সেভাবে খুঁজে পাওয়া যায়নি মেসিকে। আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে তিনি পেনাল্টি মিস করায় পয়েন্ট ভাগাভাগি করে নিতে হয়েছিল আলবিসেলেস্তেদের। পরের ম্যাচেও নিজের ছায়া হয়েই থাকলেন। প্রত্যাশার চাপ, রণকৌশলের ত্রুটি নানা বিষয় থাকতে পারে। কিন্তু টিকে থাকার লড়াইয়ে ঠিকই নিজের জাতটা চেনালেন মেসি। এভার বানেগার বাড়িয়ে দেয়া বলটি দৌড়ের গতি এতটুকু না কমিয়ে যেভাবে রিসিভ করলেন এবং অসাধারণ দক্ষতায় নাইজেরিয়ার জালে চালান করে দিলেন সেটিকে ৯৯ দিতে পারবেন?
একদিন মেসি পেনাল্টি মিস করে জয় বঞ্চিত থাকলেন তো ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো অতিমানবীয় হ্যাটট্রিকে পরাজয় এড়ালেন। আবার অন্যদিন রোনালদো পেনাল্টি মিস করলেন তো মেসি হয়ে গেলেন জয়ের নায়ক। আসলে এটাই ফুটবল। ফুটবলের সৌন্দর্য কিংবা নিষ্ঠুরতা যাই বলেন না কেন এটাই মানবিক। অথচ, নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে তার ক্যারিয়ারের শেষই দেখে ফেলেছিলেন অনেকে!
ক’দিন আগেই ৩১-তম জন্মদিন পালন করা মেসি যেন নতুন উদ্যোমে শুরু করলেন। যে যেভাবেই ভাবুক না কেনো, তার বিশ্বাস ছিল- শেষ ষোলোতে উঠবে আর্জেন্টিনা। রোমাঞ্চকর ম্যাচ জয়ের পর জানিয়েছেন সে কথা- ‘আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে এই ম্যাচ জিততে পারব। এভাবে জিততে পারাটা খুবই আনন্দের।’ শুধু বিশ্বাস করে বসে থাকার সুযোগ কই মেসিদের? করেও দেখিয়েছেন।
এরা ধ্বংসস্তুপ থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন। এটাই এদের গ্রেটনেস, তা- মেসি, রোনালদো কিংবা নেইমার, যে নামেই ডাকুন না কেন। এতে ‘গ্রেটনেস’ এতটুকু কমবে না। শুধু নাম বিকৃত করে মেসিকে ‘মিসি’ না বানালেই হলো। এবং এটাই ভব্যতা।
যমুনা অনলাইন: টিএফ
Leave a reply