নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস; বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী গ্রেফতার

|

প্রশ্নফাঁসকাণ্ডে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের গ্রেফতারকৃত ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারি।

নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসকাণ্ডে অভিযান চালিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাঁচ জন জুনিয়র কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর ডিবি (লালবাগ বিভাগ) এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দাদের একাধিক টিম। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ফাঁসকৃত প্রশ্নের সফট/হার্ডকপি, মোবাইল ফোন, নগদ দেড় লক্ষ টাকা, ব্যাংকের চেক. স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরিত দলিল, হিসাব-নিকাশের ৪টি ডায়েরি ও বিভিন্ন প্রার্থীর এডমিট কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।

শুক্রবার (২১ অক্টোবর) সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত উত্তরার বিমানবন্দর কাওলা এলাকায় পরিচালিত অভিযানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাঁচ জুনিয়র কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো- এমটি অপারেটর মো. জাহাঙ্গীর আলম (৩৬), এমটি অপারেটর মোহাম্মদ মাহফুজ আলম ভূঁইয়া (৩১), এমটি অপারেটর মো. এনামুল হক (২৭), অফিস সহায়ক আওলাদ হোসেন (২৯), ও অফিস সহায়ক হারুনুর রশিদ (৪০)।

এর আগে, শুক্রবার (২১ অক্টোবর) দুপুর ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের গ্রাউন্ড সার্ভিস অ্যাসিসটেন্ট, গ্রাউন্ড সার্ভিস ইকুইপমেন্ট অপারেটর, মোটর ট্রান্সপোর্ট অপারেটর, জুনিয়র ইলেক্ট্রিশিয়ান, জুনিয়র এয়ারকন অপারেটর, জুনিয়র এমটি মেকানিকসহ বিভিন্ন ট্রেডে বড় নিয়োগ সংক্রান্তে ১০০ নম্বরের এক ঘণ্টার এমসিকিউ পরীক্ষা হওয়ার তারিখ নির্ধারিত ছিল। তবে, বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) রাতে বা তার আগেই নিয়োগ সংক্রান্ত এ প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে এমন আশংকায় প্রশ্নফাঁসের সাথে সম্পৃক্ত অপরাধীদেরকে শনাক্ত ও গ্রেফতার করতে মাঠে নামেন গোয়েন্দারা। অভিযানের এক পর্যায়ে, বৃহস্পতিবার রাতেই ১০০টি প্রশ্ন সম্বলিত প্রশ্নপত্র পেয়ে যান গোয়েন্দারা।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, নিয়োগ বিজ্ঞাপনের সাথেসাথেই গ্রেফতারকৃত আসামি ও শনাক্তকৃতরা ছক করতে থাকে কীভাবে তারা প্রশ্ন ফাঁস করবে, কিভাবে তা বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করবে, কোন চ্যানেলে টাকা সংগ্রহ করবে এবং কীভাবে তা বন্টন করবে ইত্যাদি বিষয়ে।

আরও জানা গেছে, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, প্রিন্টিং এবং তা সংরক্ষণের কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে থাকা আসামিরা প্রশ্নের হুবহু কপি সংগ্রহ করে সরাসরি অথবা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করে। নির্দিষ্ট চাকরি প্রার্থীদেরকে বিপুল পরিমাণ টাকার বিনিময়ে প্রশ্নের সমাধান মুখস্ত করিয়ে তাদের চাকরি প্রায় নিশ্চিত করে ফেলে জালিয়াত চক্র।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা গেছে, প্রশ্ন ফাঁস এবং প্রশ্নপত্র দিয়ে উত্তরপত্র মুখস্ত করানো বাবদ ভিন্ন ভিন্ন অংকের টাকা গ্রহণ করে চক্রটি। গ্রেফতারকৃত আসামিদের সহস্তে লিখিত ডায়েরি থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা গ্রহণ এবং তা লিখিতভাবে বন্টনের একাধিক প্রমাণও পেয়েছেন গোয়েন্দারা। জাতীয় পতাকাবাহী অতি সংবেদনশীল গুরুত্বপূর্ণ এ সংস্থাটিতে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে নগদ লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ হিসেবে গ্রহণের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংক চেকের মাধ্যমেও টাকা হাতিয়েছে চক্রটি। দরিদ্র চাকরিপ্রার্থীদেরকে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে চাকরি নিশ্চিত করার বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিত নিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের জায়গা-জমিসহ লক্ষ লক্ষ টাকা লিখে নিতো চক্রটি। প্রথম দিকে সাত লক্ষ টাকায় পরবর্তীতে সর্বনিম্ন ২ লক্ষ টাকায়ও প্রশ্ন বিক্রি করা শুরু করে তারা। জিজ্ঞাসাবাদে এরপূর্বেও প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নিয়োগ অনিয়মের কাজ করেছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে গ্রেফতারকৃত আসামিরা।

ডিবি’র লালবাগ জোনের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিটি নিয়োগের ক্ষেত্রেই জিএম, ডিজিএমদের সমন্বয়ে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, প্রিন্ট, সংরক্ষণ, পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া এবং পরীক্ষা কনডাক্ট করে দেয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করে। এ কমিটি প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে প্রত্যাশা করা হয়। কীভাবে কমিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢালাওভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হলো তার রহস্য উদ্ঘাটন করার জন্য আসামিদেরকে পুলিশ রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রয়োজনে পরীক্ষা কমিটির সদস্যদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানা তিনি।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply