পুনিত রাজকুমার: এক সত্যিকারের সুপারস্টার

|

পুনিত রাজকুমার (১৯৭৫-২০২১)

পুনিত রাজকুমার, মানবিকতা ও মানবতার অনন্য এক নাম। গত বছর কোটি কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে যিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। ভারতের কন্নড় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির এ সুপারস্টার যেমন তার অভিনয়গুণে ছড়িয়েছেন মুগ্ধতা, তেমনি কন্ঠের গায়কি যাদুতে মন কেড়েছেন সবার। প্রয়াত এ অভিনেতা সবার কাছে পরিচিত ছিলেন ‘পাওয়ারস্টার’ নামে। কিন্তু, কেন তাকে পাওয়ার স্টার ডাকা হতো?

১৯৭৫ সালে দক্ষিণী ম্যাটিনি আইডল রাজকুমার এবং পার্বথাম্মার ঘরে জন্ম তার। দশ বছর বয়স পর্যন্ত তারকা বাবা তাকে শুটিং সেটে নিয়ে যেতেন। পুনীতের বড় ভাই শিবও একজন জনপ্রিয় কন্নড় অভিনেতা। বাড়িতে তাই ফিল্মি পরিবেশেই বেড়ে ওঠা পুনীতের।

পুনিত ছোটবেলা থেকেই পছন্দ করতেন অভিনয়। ‘বেত্তাদা হুভু’ সিনেমায় ছোট্ট রামুর চরিত্রে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিলেন পুনীত। এরপর কন্নড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে জনতার আদরের ‘আপ্পু’ নিজের নামের মতোই ‘আপ্পু’ সিনেমা দিয়ে পা রাখেন লিড রোলে অভিনয়ের দুনিয়ায়। তারকা হিসাবে আরাসু, মিলনা, ভামসি, জ্যাকি, পরমাত্মা, পাওয়ারের মতো সুপারহিট সিনেমায় অভিনয় করে রীতিমত মন জয় করে নেন সবার।

কিন্তু পুনিত শুধু রুপালি পর্দায়ই নন, বরং জীবন নামের আরও বড় এক পর্দায় দৃষ্টান্ত রেখে যাওয়া এক নায়ক ছিলেন। পুনিতের বাবাও কাজ করেছেন সমাজের জন্য। পুনিত ধরে রেখেছিলেন সে ধারা। তার দানশীলতা ও সামাজিক অবদানের জন্য ভক্তরা তাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। তাদের কাছে পুনিত অভিনেতা ছিলেন না, ছিলেন সাক্ষাৎ দেবতা।

জানা যায়, তিনি নিজে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ৪৫টি দাতব্য স্কুল, ২৬টি অনাথ আশ্রম, ১৬টি বৃদ্ধাশ্রম ও ১৯টি গরুর খামার। কেবল নিজের অর্থায়নেই তিনি বহন করে চলছিলেন ১৮০০ দরিদ্র শিশুর লেখাপড়ার দায়িত্ব। ২০১৯ সালে উত্তর কর্ণাটকের ভয়াবহ বন্যায় ৫ লাখ রূপি দান করেন পুনিত। আর করোনা মহামারির সময় দান করেছিলেন ৫০ লাখ রুপি। নিজের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ চোখও দান করে গেছেন মৃত্যুর আগেই।

পুনীত মাঝে মাঝেই ভক্তদের সঙ্গে দেখা করতেন, বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাতেন। কখনও হঠাৎ করেই চলে যেতেন প্রত্যন্ত কোনো গ্রামে। মিশে যেতেন সেখানকার মানুষের মাঝে আর বাড়িয়ে দিতেন সাহায্যের হাত। যা কখনও দেখা যেতো না অন্য কোনো তারকার ক্ষেত্রে। এ কারণেই তিনি ছিলেন সবার চেয়ে ব্যতিক্রম।

২০২১ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আকস্মিক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এ অভিনেতা। মাত্র ৪৬ বছর বয়সেই প্রিয় তারকার এমন বিদায় মানতে পারেনি কর্ণাটক রাজ্যের মানুষ। পুনিতের মৃত্যুর খবরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তার দুই ভক্ত। আরেক ভক্ত প্রিয় তারকার ছবি সামনে রেখে আত্মহত্যা করেন। রাজপথে নামা ঢল ঠেকাতে জারি হয় রেড অ্যালার্ট।

শুধু কর্ণাটকে নয়, পুরো ভারতে পুনীতের ভক্তের সংখ্যা ঈর্ষণীয় পর্যায়ের। ভারতের বাইরেও তার ভক্তের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। যা তিনি তৈরি করেছিলেন নিজের অভিনয় দক্ষতা এবং মানবিক গুণাবলী দিয়ে। পর্দার বাইরেও এই অভিনেতা অসংখ্য মানুষের জীবনের নায়ক ছিলেন, ছিলেন তাদের ভরসার আশ্রয়স্থল। এমন ভাগ্য কজনের হয়।

/এসএইচ
     


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply